সিলেট: ১৯৯০ সালে ডাব প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন বাবুর্চি ছয়ফুর রহমান। একটি হ্যান্ডমাইক বগলে নিয়ে একা একা চালিয়েছিলেন প্রচারণা।
এক সন্ধ্যায় হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি। প্রতিবাদে বেরিয়েছিল ছাত্রদের মিছিল। পরে তা শহরময় রটে যায়। আম জনতার মার্কা হয়ে যায় ছয়ফুরের ডাব। সেই নির্বাচনে ডাব প্রতীকে বাঘা, বাঘা প্রার্থীরা ছয়ফুরের কাছে ধরাশায়ী হয়েছিলেন। ৫২ হাজার ভোটে সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া জামানত হারিয়েছিলেন অন্য সবাই। নির্বাচনে ‘ছক্কা’ পেটানোয় লোকে তাকে ‘ছক্কা’ছয়ফুর নামে ডাকতেন।
এবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেনো সেই ১৯৯০ সালের নির্বাচন যেন দৃশ্যপটে এলো মেয়র প্রার্থী শাহজাহান মিয়া ওরফে শাহজাহান মাস্টারের হাত ধরে। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বলতে কিছুই নেই তার। আছে কেবল শিক্ষার জৌলুস ‘বিএসসি’ পাস। কেবল শিক্ষকতা পেশা থেকে উপার্জিত ৭০ হাজার টাকা দিয়ে সিসিকে মেয়র পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যান। নেতাকর্মী-সমর্থক নেই। বহর চালাননি প্রচারণা।
আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় বাই সাইকেলে শহর ঘুরেছিল তার নির্বাচনী প্রচারণার কার্যক্রম। নিজে পোস্টার লাগিয়েছেন নিজেই। দরিত্র শাহজাহান মিয়া শিক্ষকতা করেন। তাই সবাই তাকে শাহজাহান মাস্টার বলে জানেন, চেনেন।
সেই শাহজাহান মাস্টার সিসিক নির্বাচনে ভোটের মাঠে চমক দেখিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে টক্কর দিয়েছেন। ৮ প্রার্থীর মধ্যে তিনি পান ২৯ হাজার ৬৮৮ ভোট।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত হলেও সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহ জাহান মিয়া ওরফে শাহজাহান মাস্টার।
গত বুধবার (২১ জুন) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটসংখ্যার দিক থেকে তিনি হয়েছেন তৃতীয়। নৌকা প্রতীকের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের নজরুল ইসলাম বাবুল পেয়েছেন ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট।
নির্বাচনের ফলাফল যখন ঘোষণা করছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তখন ৮ মেয়র প্রাথীকে ছাপিয়ে আলোচনায় ছিলেন শাহ জাহান মিয়া। বাস গাড়ির প্রচারণায় নির্বাচনে পুরোটা সময় তার একমাত্র বাহন ছিল বাইসাইকেল। আর সে বাইসাইকেল দিয়ে চালিয়ে গেছেন বাস গাড়ি মার্কার প্রচারণা।
আর নির্বাচনে প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়ে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও তাকে নিয়ে ফেসবুকে ট্রল করছেন, শুভেচ্ছা ও স্যালুট জানাচ্ছেন। আবার অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগের ক্ষোভের ভোট পড়েছে শাহজাহান মাস্টারের বাক্সে। কিন্তু নির্বাচনে শাহজাহান মাস্টারের বাসগাড়ি, নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীসহ ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শাহজাহান মাস্টারকে বেছে না নিয়ে অন্য কোনো প্রার্থীকে বেছে নিতে পারতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বলছেন, নিজের পরিশ্রম এবং মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে প্রচারণা চালানোর কারণে ভোটাররা তার প্রতি আবেগ দেখিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহজাহান মিয়া প্রথমে ছিলেন হোটেল কর্মচারী। এরপর সেখান থেকে মোমবাতি ও স্যালাইন বিক্রির কাজ করেন। তারপর সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে শাহজাহান মাস্টার বলেন, আমি যখন সিলেট শহরে আসি, তখন মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে স্বপ্ন দেখি, একদিন এ শহরের মেয়র হবো, এমপি হবো, জনপ্রতিনিধি হবো, মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূর করব।
অথচ কে না জানে, তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রথমেই আটকা পড়েছিল নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ে।
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সম্পদ বিবরণী ও আয়কর রিটার্নের কপি জমা না দেওয়ায় শাহজাহান মিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি। আপিল শুনানির আগে সম্পদ বিবরণী ও আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেওয়ায় তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান।
নগরের দরগাহ মহল্লায় মুফতি বাড়িতে ভাড়া থাকলেও তার আদি নিবাস ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৩
এনইউ/জেএইচ