ঢাকা, রবিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

স্বাক্ষর কর্মসূচির মাধ্যমে প্রত্যাহার হবে জনপ্রতিনিধি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৫
স্বাক্ষর কর্মসূচির মাধ্যমে প্রত্যাহার হবে জনপ্রতিনিধি

ঢাকা: স্বাক্ষর কর্মসূচির মাধ্যমে প্রত্যাহার হবে জনপ্রতিনিধি- এমন বিধান আনার সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেওয়া ১৮৪ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রস্তাবনায় এমন সুপারিশ করেছে কমিশন।

রিকল বা প্রতিনিধি প্রত্যাহার
রিকল বা প্রতিনিধি প্রত্যাহার হলো একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা নির্ধারিত সংখ্যক স্বাক্ষরের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে পদচ্যুত করার জন্য পুনর্নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারেন। এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচনী প্রক্রিয়া, যেখানে জনগণ তাদের প্রতিনিধি সম্পর্কে সরাসরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। রিকল ব্যবস্থায় প্রক্রিয়াগতভাবে দুটি সম্ভাবনা রয়েছে-
১. নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একজন নতুন জনপ্রতিনিধি নিয়োগ।
২. পুনর্নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচন।

বিশ্বব্যাপী রিকল ব্যবস্থাকে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম হন।

সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে, শপথ ভঙ্গ করলে, প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে কিংবা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতার সুযোগ সীমিত। পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত জনগণের অসন্তোষ প্রকাশের কোনো কার্যকর মাধ্যম থাকে না। রিকল ব্যবস্থা এই সমস্যার একটি অন্তর্বর্তী সমাধান হতে পারে।

পৃথিবীর বেশকিছু দেশে ‘রিকল’ ব্যবস্থা রয়েছে এবং তা জনপ্রিয়। ‘রিকল’ ব্যবস্থার পক্ষে এবং বিপক্ষেও যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। রিকল প্রবর্তিত হলে কোনো দুর্বৃত্ত বা অর্থ পাচারকারী বা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ করার ক্ষমতা জনগণের হাতে দেওয়া যাবে, অর্থাৎ জনগণই তাদের প্রতিনিধিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবেন এবং অযোগ্য কোনো জনপ্রতিনিধিকে দ্রুত পরিবর্তন করতে পারবেন। ফলে সহজে কোনো প্রতিনিধি অসৎ উদ্দেশে কোনো কাজ বা অনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না।

তবে এ ধরনের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নেতিবাচকভাবে এটির ব্যবহার হতে পারে এবং অধিক পরিমাণে রিকল আয়োজন করার জন্য সরকারের নির্বাচনী ব্যয় বেড়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশের জনগণের কাছে রিকল পদ্ধতি খুব বেশি পরিচিতি পায়নি। তাছাড়া আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে রিকল ব্যবস্থা প্রচলিত নেই।

প্রক্রিয়াগত প্রস্তাবনা
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে রিকল ব্যবস্থা জাতীয় সংসদের নির্বাচনে প্রবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। তবে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এড়াতে নির্বাচিত প্রতিনিধির মেয়াদের প্রথম ও শেষ বছরে রিকল নির্বাচন কার্যকর না করার প্রস্তাবনাও দেওয়া হচ্ছে।

রিকল নির্বাচন কার্যকর করার একটি উদাহরণ
কোনো ব্যক্তি বা দলকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী আসনের মোট ভোটার তালিকার ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হবে।

রিকলের কারণ উল্লেখপূর্বক স্বাক্ষরসহ একটি আবেদন নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে। কমিশন আবেদনটির যথার্থতা মূল্যায়নপূর্বক এবং রিকল প্রক্রিয়া কার্যকর করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

যদি উক্ত আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠ (৫১ শতাংশ) জনগণ রিকলের পক্ষে ভোট দেয়, তাহলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে। স্বাক্ষরের বৈধতা নিশ্চিত করতে সংগৃহীত স্বাক্ষরে নাম, ঠিকানা এবং এনআইডি নম্বর থাকতে হবে। স্বাক্ষরের ন্যূনতম সীমা নির্ধারণ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, যাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রিকল ব্যবস্থার অপব্যবহার করতে না পারে।

কমিশনের সুপারিশ দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৫
ইইউডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।