ঢাকা: নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সরকারের সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার আগে নির্বাচন না করতে বলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ইসির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। আমরা লিখিত প্রস্তাবও দিয়েছি। আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেছি৷ তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ সক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা নিয়েও আলোচনা করেছি। ২৩টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রিফর্ম ছাড়া জাতীয় নির্বাচন করা যাবে না। নির্বাচন করার জন্য যে সংস্কার লাগে সেটুকুর জন্য জামায়াতে ইসলামী সে সময়টুকু দিতে প্রস্তুত।
নিবন্ধন নিয়ে আলোচনা হয়েছি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আদালতের বিষয়। আমরা আশা করি ন্যায় বিচার পাবো। আশা করি সুবিচার পাবো। আগে তো নিবন্ধন ছিল না। তখন তো প্রয়োজন ছিল না।
জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা স্থানীয় নির্বাচন আগে হোক। আমরা জনগণের এ আকাঙ্ক্ষকে সমর্থন করি। আমরা আনুপাতিক নির্বাচন চেয়েছি, কালো টাকা মুক্ত করে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। আরপিওতে ৯১ (এ) সংশোধন করে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছিল। সেটা বহাল করতে হবে। প্রবাসী ভোটারদের ভোট নিশ্চিত করতে হবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদে হয়রানি নিরসনের অনুরোধও করেছি।
তিনি বলের, সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের দল করার অধিকার আছে। নিবন্ধন শর্ত কঠিন করে সেই অধিকার খর্ব করা হয়েছে। সেটা সহজ করার জন্য বলেছি। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের তিন বছর পর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিধান আনতে বলেছি।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে একমত কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, মাস আমাদের কাছে বিষয় না। বিষয় হলো সংস্কার শেষ হলে করতে হবে। ৩০০ আসনের প্রার্থী দেওয়ার সক্ষমতা জামায়াতের আছে। আমরা প্রস্তুত।
এর আগে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ পুরো কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
দীর্ঘ এক যুগ পরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করলো আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানো দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিবন্ধন বাতিলের আগে নির্বাচন কমিশনে দলটির সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছিল ২০১২ সালের ২ ডিসেম্বর। সে সময় নিবন্ধন বাঁচাতে দলটি গঠনতন্ত্রে সংশোধন এনে জমা দিয়েছিল। ওইদিন তৎকালীন আইন বিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার সংশোধিত গঠনতন্ত্রের মুদ্রিত কপি কমিশনে জমা দেন। নিবন্ধন রক্ষায় গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ-রাসূলের নামও বাদ দিয়েছিল জামায়াত। এরপর আর ইসির সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।
পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট আদালত জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপির সঙ্গে বর্জন করে। ২০১৫ সালে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় নির্বাচনের প্রতীকের তালিকা থেকে দাঁড়িপাল্লা বাদ দিলে স্থানীয় নির্বাচনেও জামায়াতের ভোটের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে এসে সংসদ নির্বাচনের প্রতীকের তালিকা থেকেও দলটির প্রতীক বাদ দেয় ইসি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কে এম নূরুল হুদার কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তৎকালীন ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদের ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর দলটিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। দলটি নিবন্ধন নম্বর পেয়েছিল ১৪। কিন্তু একটি মামলার রায়ে হাইকোর্ট ২০১৩ সালে দলটির নিবন্ধন প্রক্রিয়া অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে। তাই নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে।
বর্তমানে নিবন্ধন ফিরে পেতে আদালতের দারস্থ হয়েছে জামায়াত। শুনানি চলমান রয়েছে। এরমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের সাক্ষাতের বিষয়টিকে অনেকেই নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই মনে করছেন। তবে অনেকেই বলছেন, কেবল নিবন্ধন ফিরে পেলেই হবে না। দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফিরে পেতে আদালতের রায় পক্ষে আসতে হবে। কেননা, সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ কে অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না মর্মে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত নেন সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট।
আরও পড়ুন>> এক যুগ পর ইসিতে যাচ্ছে জামায়াত
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
ইইউডি/আরআইএস