বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয় ২৯ কোটি টাকা হলেও কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। এই অর্থ কোথায় জমা ছিল আর কোন উৎস থেকে ব্যয় হয়েছে তারও কোনো হদিস নেই।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দলটির জমা দেওয়া ২০২৪ পঞ্জিকা বছরের অডিট রিপোর্ট থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের সই করা রিপোর্টটি গত ২৯ জুলাই ইসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, আয় ও ব্যয়ের হিসাব পরিচালনার জন্য কোনো ব্যাংক হিসাব নেই।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী, দলের নামে রক্ষিত ব্যাংক-অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকের নাম এবং সেই অ্যাকাউন্টের সবশেষ হিসাব, দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ ইসিতে জমা দিতে হয়। আর এই শর্ত পূরণ না করায় সম্প্রতি নতুন দলগুলোকে চিঠি দিয়েছিল কমিশন।
জামায়াতে ইসলামী তাদের অডিট রিপোর্টে ব্যাংক হিসাব নেই উল্লেখ করেছে, তাহলে এই রিপোর্ট আপনারা গ্রহণ করবেন কি-না, জানতে চাইলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি ভালো বলেছেন। আমি দেখব।
ব্যাংক হিসাব না থাকলে আয়ের অর্থ কোথায় রাখা হয়েছে, ব্যয় কোন উৎস থেকে হয়েছে, তা জানতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ নিয়ে জামায়াতের কোনো বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, গত পঞ্জিকা বছরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয় ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ২৯৯ টাকা। আর ব্যয় ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৭ টাকা।
গত পঞ্জিকা বছরে জামায়াত কর্মী ও সদস্যদের চাঁদা থেকে আয় করেছে ১৬ কোটি ৫৬ লাখ ৪২ হাজার ১৬২ টাকা। কার্যনির্বাহী কমিটি অথবা উপদেষ্টা পরিষদের চাঁদা অথবা অন্যান্য চাঁদা ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ১৪৯ টাকা। বিভিন্ন ব্যক্তি অথবা সংস্থার কাছ থেকে অনুদান পেয়েছে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৯ টাকা। দলের পত্রিকা, সাময়িকী, বইপুস্তক বিক্রি থেকে আয় ৯ লাখ ১১ হাজার ২৯০ টাকা। অন্যান্য চাঁদা থেকে দলটি আয় করেছে ৭ লাখ ২১ হাজার ৭৯ টাকা। মোট আয় হয়েছে ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ২৯৯ টাকা।
এ ছাড়াও আগের বছর ১০ কোটি ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ১৯১ টাকা স্থিতি ছিল বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে কর্মীদের বেতন ভাতা ও বোনাস বাবদ জামায়াতে ইসলামীর ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৭ হাজার ৮৭৩ টাকা। আবাসন ও প্রশাসনিক বাবদ ২ কোটি ৬৮ লাখ ৭ হাজার ৪৯৫ টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাসসহ বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করেছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ১৮ টাকা। ডাক, টেলিফোন, ইন্টারনেট, কুরিয়ার সার্ভিস, পত্রিকা বাবদ জামায়াতের ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৬ টাকা। আপ্যায়নে ব্যয় হয়েছে ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬২ টাকা।
এ ছাড়া প্রচারণা ও পরিবহনে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৬ হাজার ৫৬৩ টাকা। যাতায়াত বাবদ খরচ হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ১ হাজার ৭৭৬ টাকা। জনসভা, পথসভা, ঘরোয়া বৈঠকে ব্যয় হয়েছে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৫ টাকা। প্রার্থীদের অনুদান দেওয়া হয়েছে ১১ কোটি ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪২০ টাকা। ধর্মীয় বিশেষ অনুষ্ঠান বাবদ ব্যয় ৩২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৫০ টাকা। অন্যান্য ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮৯ টাকা। দলটির মোট ব্যয় হয়েছে ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৭ টাকা।
২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার আগে সবশেষ আয়-ব্যয়ের হিসাব দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। এরপর চলতি বছর নিবন্ধন ফিরে পাওয়ায় এক যুগ পর ফের হিসাব দিল দলটি।
ইইউডি/এমজেএফ