নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব মো. ফরহাদ আহাম্মদ খান বাংলানিউজকে জানান, আচরণ বিধি অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ শুরু ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচার কাজ বন্ধ করতে হবে। ভোটগ্রহণ শুরু হবে ৩০ জানুয়ারি সকাল ৮টায়।
দুই সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই নির্বাচনে মেয়র পদে ১৩ জনসহ মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৭৫৮জন। এদের মেয়র পদে ৬ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন অর্থাৎ তিন পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৩৩৪ জন।
উত্তর সিটিতে মেয়র প্রার্থীরা হলেন-বিএনপির তাবিথ আউয়াল, আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ, পিডিপির শাহীন খান, এনপিপির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আহম্মেদ সাজ্জাদুল হক।
অন্যদিকে ডিএসসিসিতে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩৫ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮২ জন অর্থাৎ ৪২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে।
ডিএসসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে সাত প্রার্থী হলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নুর তাপস, বিএনপির ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান, এনপিপির বাহরানে সুলতান বাহার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা ও গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন।
নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত লাউড স্পিকারে প্রচার চালানোর বিধান আছে। এক্ষেত্রে প্রতি ওয়ার্ডে প্রচার কাজ বা পথসভার জন্য একটি মাইক ব্যবহার করতে পারবেন প্রার্থীরা।
মেয়র পদপ্রার্থী প্রতি থানায় একের অধিক ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন না। কাউন্সিলর প্রার্থীরা ৩০ হাজার ভোটারের জন্য একটি ক্যাম্প, তবে সর্বোচ্চ তিনটি ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ক্যাম্প অফিসে টেলিভিশন, ভিসিআর, ভিসিডি ইত্যাদী ব্যবহার করতে পারবেন না। ভয়ভীতি প্রদর্শন, ধর্মীয় উপসনালয়, সার্কিট হাউজ, সরকারি স্থাপনা ব্যবহার করে প্রচার চালানো যাবে না। প্রচার কাজে যান চলাচলে বাধাগ্রস্ত করা কিংবা কারো ব্যক্তিগত সম্পদের ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকতে হবে।
পোস্টার ঝুলিয়ে প্রচার চালাতে হবে। দেওয়ালে বা কোনো স্থাপনায় সাঁটানো যাবে না। পোস্টারের সাইজ দৈর্ঘ্যে ৬০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যনার কোনোভাবেই তিন মিটারের বেশি হবে না।
সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। তবে এদের কেউ ভোটার হলে ভোট দিতে পারবেন।
কোনো ধরনের বিলবোর্ড বা মিছিল করা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে আচরণ বিধিতে। বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কোনো প্রকার আলোকসজ্জা, সরকারি প্রচারযন্ত্র কিংবা প্রচারে সরকারি কর্মচারীকে ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতীক হিসেবে জীবন্ত কোনো প্রাণী ব্যবহার নিষিদ্ধ।
নির্বাচনী আচরণ বিধির ৬ (১) উপবিধি অনুযায়ী, প্রার্থী বা প্রার্থী পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি পথসভা ও ঘরোয়া সভা ব্যতিত কোনো জনসভা বা শোভাযাত্রা করতে পারবেন না। এছাড়া যানবাহন সরকারে মিছিল কিংবা মশাল মিছিল বা কোনোরূপ শোভাযাত্রা করা যাবে না।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি হিসেবে অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমান বা ছয়মাসের কারদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ড দেওয়া বিধান রয়েছে। আর দল বা দলের পক্ষে কোনো প্রতিষ্ঠান বিধিমালা লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার পর্যন্ত অর্থদণ্ড দেওয়ার বিধান আছে। এছাড়া কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে নির্বাচনের পরেও সেই প্রার্থীর প্রার্থিতাও সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
আইন অনুযায়ী, এইসব বিধিমালা প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য যেকোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
২০১৫ সালে বিভক্ত ঢাকার দুই সিটির প্রথম নির্বাচনে কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও মেয়র পদে মোট ৮৯৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সে সময়কার (ডিএনসিসি) নির্বাচনে ৩৬টি ওয়ার্ডে ২৮১জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৮৯ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১৬ জন মেয়র পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডে ৩৯০ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী, ৯৭ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও মেয়র পদে ২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২০
ইইউডি/এএটি