ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

প্রবাসীদের এনআইডি সেবা কঠিন হচ্ছে

 ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২২
প্রবাসীদের এনআইডি সেবা কঠিন হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র

ঢাকা: বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা বা যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে থাকলে তাদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা কঠিন করার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশেষ করে যারা উন্নত দেশগুলোর নাগরিকত্ব নিয়েছেন বা নেবেন বলে ভাবছেন বেকায়দায় পড়তে পারেন তারা।


 
সূত্রগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউক্রেন, ভারতসহ বেশ কিছু দেশের ‘এক নজরে’ তালিকা করেছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে এসব দেশে বসবাসকারী কেউ এনআইডি সেবা নিতে এলেই পড়তে পারেন ঝামেলায়। কেননা, বাংলাদেশি নাগরিকত্ব স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেছেন এমন ১ হাজার ৩৩৮ জনের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংগ্রহ করে তৈরি করা হয়েছে ওই ‘এক নজরে’ তালিকাটি।
 
কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো দেশে বসবাস করেন, কিন্তু নাগরিকত্ব নেননি, এমন ব্যক্তিও যদি এনআইডি সেবা নিতে আসেন, তবে ওই তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে যে-সংশ্লিষ্ট দেশের আইনে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে কি-না। যদি সেই বিধান থাকে, তবে ওই ব্যক্তিকে প্রমাণ দিতে হবে যে, তিনি নাগরিকত্ব নেননি। এক্ষেত্রে যারা স্বেচ্ছায় নাগরিকত্ব ছেড়েছেন, তাদের ওপর ভিত্তি করে এমন সিদ্ধান্ত নিলে প্রবাসীদের সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
 
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এনআইডি মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীর এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিভিন্ন অফিস আদেশ, এসআরও এবং ওই ‘এক নজরে’ তালিকার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
 
বিভিন্ন সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশে বলা হয়েছে- “কোনো বাংলাদেশি নাগরিক অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেও অস্ট্রেলিয়ার Citizenship Amendment Act, 1993
এবং নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব এ্যাক্ট, ১৯৭৭ এ যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়ান এবং নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য পঠিতব্য শপথ বাক্যে নিজ দেশের আনুগত্য প্রত্যাহারের শপথ না থাকায় বাংলাদেশ নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধানাবলী) আদেশ, ১৯৭২ এর ২(বি) (২) ধারার দ্বৈতনাগরিকত্ব বর্ণনামতে তাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব অক্ষুণ্ন থাকবে। এমতাবস্থায়, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে ওই দুই দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারীরা ইচ্ছা করলে তাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে পারবেন। যারা অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন তাদের নামেও পুনরায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়া যাবে।
 
এদিকে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, বুনাই, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং ও জাপানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে- এসব দেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে শপথ বাক্যে নিজ আনুগত্য ছেড়ে দেওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই।
 
এক্ষেত্রে -(ক) বাংলাদেশের বলবৎ আইন অনুযায়ী কোনো বাংলাদেশের নাগরিক উল্লিখিত দেশসমূহের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেও সে সব দেশের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জন্য পঠিতব্য শপথ বাক্যে যদি নিজ দেশের (বাংলাদেশের) আনুগত্য প্রত্যাহার-এর শপথ না থাকে, তাহলে তার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহাল থাকিবে।
 
(খ) ওইরূপ পরিস্থিতিতে উল্লিখিত দেশেসমূহের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশের নাগরিকদের বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রয়োজন হবে না।
 
(গ) উল্লেখিত দেশসমূহের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী সব বাংলাদেশি ইচ্ছা করলে তাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে পারবেন;
 
(ঘ) তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে তা যথারীতি নবায়ন করতে হবে; এবং
 
(ঙ) ইতোপূর্বে যারা উল্লেখিত দেশেসমূহের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন তাদের নামেও পুনরায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়া যাবে।
 
কর্মকর্তারা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এমন আদেশ জারির পরও এনআইডি বিভাগ ‘এক নজরে’ নামে যে তালিকাটি তৈরি করেছে, তা আমলে নেওয়া হলে হয়রানি বাড়বে। কেননা, ওই তালিকায় যে দেশ রয়েছে, সেসব দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে স্বেচ্ছায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসীরা বা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশি নাগরিকরা অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে থাকলেও বাংলাদেশে তাদের সম্পদ রয়েছে। এক্ষেত্রে এনআইডি ছাড়া সেসব সম্পদে বন্টন বা কোনো সুরাহা হয় না। এছাড়াও অনেকের পরিবার এবং বাবা-মা দেশে থাকেন, তাদের জন্য সেবা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এনআইডি প্রয়োজন পড়ে। তাই অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী যে কোনো ব্যক্তিরই রয়েছে অবাধে এনআইডি সেবা পাওয়ার।
 
এদিকে দেশের নাগরিকদের এনআইডি সেবা দিতে কড়াকড়ি করা হলেও বিদেশিদের সেবা দেওয়ার বিষয়েও কিছু নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে এনআইডি মহাপরিচালকের ওই প্রতিবেদেনে।
 
বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রাপ্তি:
এক্ষেত্রে বাংলাদেশি পুরুষ/নারীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ বিদেশি নারী/পুরুষকে একাধারে বাংলাদেশে ৪ (চার) বছর বসবাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অতঃপর বাংলাদেশি নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জন্য উপরিল্লিখিত Rules এ বর্ণিত Form-B অনুসারে সে সুরক্ষা সেবা বিভাগ আবেদন করলে এ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে তাকে তার নিজ দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হয় এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে বাংলাদেশি নাগরিক মর্মে তার অনুকূলে একটি সনদ (ফরম-ডি) ইস্যু করা হয়। এ জাতীয় ব্যক্তির পরিচয় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক ইস্যুকৃত সনদ আবশ্যক।
 
পিআর (Permanent residence):
বিদেশি কোনো নাগরিক বাংলাদেশে ৭৫,০০০/- (পঁচাত্তর হাজার) মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলে তাকে সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ওই বিদেশি নাগরিককে তার নিজ দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হয় না।
 
বাংলাদেশে বিশেষ অবদানের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব প্রদান:
এক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট বিদেশি নাগরিককে তার নিজ দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হয় না।
 
বর্তমানে ইসির সার্ভারে ১১ কোটি ৩২ লাখ নাগরিকের তথ্য রয়েছে। আগামী ২০ মে থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করবে ইসি। এক্ষেত্রে আগামী বছর ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার ভিত্তিতেই এনআইডি সেবা দিয়ে থাকে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২২
ইইউডি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।