ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

কুসিক ভোট: কেন্দ্রে পাহারায় থাকবে ১৫ জনের ফোর্স

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২২
কুসিক ভোট: কেন্দ্রে পাহারায় থাকবে ১৫ জনের ফোর্স

ঢাকা: আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়োজিত থাকবে বিভিন্ন বাহিনীর ১৫ জনের ফোর্স। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নিয়োগ করা হবে ১৬ জনের ফোর্স।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক পরিপত্র থেকে বিষয়টি জানা গেছে, যা সংস্থাটিকে অবহিত করেছে মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রটি সরকারের অন্যান্য দফতরসহ মাঠ প্রশাসনেও পাঠানো হয়েছে।

আগামী ১৫ জুন কুসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পুরো নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। মোট ১০৫টি কেন্দ্রের ৬০৪টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করবে ইসি। এতে পাঁচজন মেয়র প্রার্থীসহ ১৪০ জনের মতো কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা প্রচার কাজ শুরু করেছেন, যা চলবে আগামী ১৩ জুন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত।

ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাধারণ ভোটকেন্দ্রে তিনজন পুলিশ, আনসার ও ভিডিপিসহ মোট ১৫ জন নিয়োজিত থাকবে। এদের মধ্যে পাঁচজনের সঙ্গে অস্ত্র থাকবে। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে চারজন পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি সদস্য থাকবে ১৬ জন। এদের মধ্যে ছয়জনের সঙ্গে অস্ত্র থাকবে।

এছাড়া ভোটের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ, আনসার ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে মোট ২৭টি মোবাইল টিম ও ৯টি স্ট্রাইকিং টিম থাকবে। এছাড়া রিজার্ভ টিম থাকবে দুটি।

এদিকে র‌্যাবের ২৭টি মোবাইল টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি নিয়োজিত থাকবে। ইতোমধ্যে ভোটের এলাকায় বিজিবি অবস্থান নিয়েছে।

ভোটকেন্দ্র পাহারায় পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি নিয়োজিত থাকবে ভোটের দু’দিন আগে থেকে পরের দিন পর্যন্ত মোট চার দিনের জন্য। অন্যান্য বাহিনীও একই সময়ের জন্য নিয়োজিত থাকবে।

বিজিবি/আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব
১. বিজিবি/আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।

২. কুমিল্লা সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকাসমূহে বিজিবি ও নির্বাচনী এলাকার নিকটবর্তী নদী পথে নৌ-পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।

৩. রিটার্নিং অফিসার সহায়তা কামনা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবে।

৪. রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদা ব্যতিরেকে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনাকক্ষে কোনো প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না।

৫. নির্বাচনী এলাকায়/নির্বাচনের জন্য হুমকি স্বরূপ কোনো ব্যক্তি/বস্তুর যাতায়াত/চলাফেরা ইত্যাদি আইন অনুযায়ী রোধ করা।

৬. সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটকেন্দ্রসমূহের ইভিএম ও ইভিএমের কারিগরি সহায়তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

রাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)
১. র‍্যাব মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।

২. নির্বাচনী এলাকায় সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে।

৩. রিটার্নিং অফিসার সহায়তা কামনা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবে।

৪. আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবে।

৫. রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদা ব্যতিরেকে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনাকক্ষে কোনো প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না।

৬. সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটকেন্দ্রসমূহের ইভিএম ও ইভিএমের কারিগরি সহায়তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

পুলিশ বাহিনী
নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর।  ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করাই হবে ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রধান কাজ।

এছাড়া নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব সরঞ্জাম ও দলিল-দস্তাবেজ আনা-নেওয়ার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচন কার্যালয়সমূহ, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিধান করা, স্থানীয় জননিরাপত্তা, ভোটকেন্দ্রে ভোটারগণকে সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড় করানোসহ স্থানীয় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, ভোটারদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা, সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোট কেন্দ্রসমূহের ইভিএম ও ইভিএমের কারিগরি সহায়তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও পুলিশের দায়িত্ব।  

আনসার ও ভিডিপি
পুলিশ বাহিনী কর্তৃক নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে এ বাহিনী।

এদিকে নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে বিচারকাজ সম্পন্ন করার জন্য দায়িত্ব পালন করবেন মোট ৪৮ জন হাকিম। এদের মধ্যে ৩৯ জন নির্বাহী হাকিম ও ৯ জন বিচারিক হাকিম।  

কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। অর্থাৎ মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন পাঁচজন প্রার্থী।  

২০১৭ সালের ৩০ মার্চ সর্বশেষ কুসিক নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই বছরের ১৭ মে। এক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ করার শেষ সময় ছিল চলতি বছরের ১৬ মে। কিন্তু বিগত কমিশন বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসায় আর তফসিল দেয়নি। ফলে অতি অল্প সময়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ সিটি পরিচালনায় দায়িত্ব দিতে হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। নির্বাচনের পর নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত তিনি করপোরেশন পরিচালনা করবেন।  

২০১৭ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু দ্বিতীয়বারের মতো এ সিটিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কুসিকের প্রথম নির্বাচনে ২০১২ সালে তিনিই জয়লাভ করেছিলেন। প্রথমবার বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় সাক্কু স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরের বার বিএনপির টিকিটে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েও জয়লাভ করেন। এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে এবং আজীবন দল থেকে বহিষ্কার করায় সাক্কু হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।  

দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২২
ইইউডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।