‘এই বাটপার-প্রতারক রহমত উল্লাহ শুধু আমার সঙ্গে প্রতারণা করেনি, এই দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এই দেশের লাখো মানুষ যারা আমাকে ভালোবাসে, তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
কথাগুলো ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খানের। যা তিনি গেল দুই দিন ধরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলে আসছেন।
শাকিবের এ কথা বলার পেছনের কারণ হলো- গেল ১৫ মার্চ (বুধবার) রহমত উল্লাহ নামের এক প্রযোজক এই নায়কের বিরুদ্ধে লিখিত আকারে বিস্তর অভিযোগ জমা দেন প্রযোজক-পরিবেশক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতিতে।
যেখানে তিনি তুলে ধরেন- অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস ও ধর্ষণের মতো গুরুতর সব অভিযোগ। যা নিয়ে সরগরম শোবিজ অঙ্গন। বিষয়টি নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেও কোনো ফল হয়নি। বরং হয়েছে উল্টোটা। শাকিব ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে থানায় ও ডিবি কার্যালয়েও গিয়েছেন। যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। শাকিবের মুখে বারবার বলতে শোনা যায়- রহমত উল্লাহ একজন ভুয়া প্রযোজক ও নামধারী বাটপার!
কিন্তু শাকিব খান যাকে ‘ভুয়া’ বলছেন, সে আসলেই কি ভুয়া? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির একজন সদস্য। সমিতিতে রহমত উল্লাহর নামের পাশে ‘বিদেশ বাংলা মাল্টিমিডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা উল্লেখ করা আছে। আর ২০১৭ সাল থেকে তিনি সমিতির নিয়মিত চাঁদাও পরিশোধ করে আসছেন।
শুধু তাই না, শাকিব খানের সঙ্গে ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার শুটিং ও মহরতেও দেখা গেছে এই প্রযোজককে। এখন শাকিব যে বলছেন, তিনি এই প্রযোজককে সঙ্গে কোন চুক্তি করেননি! শাকিবের কথাও সত্য।
তাহলে আসল রহস্য কী? কেনই বা রহমত উল্লাহ এসব অভিযোগ করছেন? এই রহস্যর জটও খুলেছে। জানা যায়, শাকিব চুক্তি করেছেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভারটেক্স মিডিয়ার সঙ্গে। আর এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয় রহমত উল্লাহর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিনেফ্যাক্ট।
এই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে আছেন রহমত উল্লাহ, মাহির আবেদীন আর অ্যানি সাবরিন। ফলে বলা যায়, ভারটেক্স মিডিয়া আর সিনেফ্যাক্ট দুটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানই যুক্ত হন সিনেমাটির সঙ্গে। সেসময় তিনশত টাকার একটি স্ট্যাম্পে তাদের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন জানে আলম (ভারটেক্স মিডিয়া) ও অ্যানি সাবরিন (সিনেফ্যাক্ট)।
এরপর ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় যখন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’র শুটিং শুরু হয় তখন পুরো দায়িত্বে ছিল সিনেফ্যাক্ট প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। আর এই প্রতিষ্ঠানের হয়ে পুরো শুটিং ইউনিটের সঙ্গে ছিলেন রহমত উল্লাহ আর অ্যানি সাবরিন। সেই সময়ই শাকিবের নজরে পড়ে সহ-প্রযোজক অ্যানি সাবরিনের দিকে। যাকে নিয়েই শাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ।
রহমত উল্লাহকে শাকিব খান ‘ভুয়া’ বললেও তার তত্বাবধায়নে তিনি শুটিং করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। শুধু তাই নয়, সিনেমার মহরতে শাকিবের সঙ্গে মঞ্চেও ছিলেন এই প্রযোজক। এছাড়া ‘অপারেশন অগ্নিপথ’র পোস্টারে ভারটেক্স মিডিয়ার সঙ্গে সহ-প্রযোজক হিসেবে সিনেফ্যাক্টের নামও আছে।
এদিকে, এদিকে, শাকিব খান ও প্রযোজক রহমত উল্লাহ’র বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন,, শাকিব যে কথা বলেছেন, এটা ঠিক না। তিনি বলেছেন এই প্রযোজক ভুয়া, কিন্তু রহমত আমাদের সমিতির একজন সদস্য। ২০১৭ সাল থেকে তিনি নিয়মিত চাঁদা দিয়ে আসছেন। আর ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমাটি নিয়ে যতটুকু জেনেছি তা হলো- প্রযোজক রহমত উল্লাহর এই সিনেমাটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এখন ২০২৩ সাল চলছে। দীর্ঘদিন ধরে একজন শিল্পীর কারণে পুরো সিনেমার কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না- এটা মানা যায় না। পুরো বিষয়টি যখন রহমত আমাদের জানান, তখন আমরা নিজেদের মধ্যে বিষয়টি রাখতে এটি বৈঠক করি। যেখানে শাকিব খানও ছিল।
খসরু আরো বলেন, ওই প্রযোজকের দাবি শাকিব তার সিনেমার কাজটুকু শেষ করে দিক। আর যেহেতু শাকিব বিরুদ্ধে তিনি নানা কথা বলেছেন, এজন্য একটা সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে তারা জানিয়ে দেবেন- আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। সেদিনের মিটিংয়ে তাদের দুজনকেই বলেছি, যেহেতু শাকিব সরাসরি রহমত উল্লাহর সিনেফ্যাক্টের সঙ্গে চুক্তি করেনি, করেছে ভারটেক্স মিডিয়ার সঙ্গে। তাই পরবর্তী মিটিংয়ে জানে আলমকে নিয়ে আমরা বসব। তখনই বিষয়টি নিজেরা মিটিয়ে ফেলব। কিন্তু পুরো ঘটনাই পাল্টে গেল! এটা খুবই দুঃখজনক। আমি মনে করি এই দ্বন্দ্বের অবসান হোক। এসব কাঁদা ছোড়াছুড়ি আমাদের মিডিয়ার জন্য ভালো ও সম্মানের কিছু না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
এনএটি