গানে গানে গুরু বন্দনা, তত্ত্ব ও পদ পরিবেশনে মহাত্মা লালন সাঁইজিকে স্মরণের মধ্য দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৩ দিনব্যাপী আয়োজন। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘আশাসিন্ধু তীরে’ শীর্ষক ১ম দিনের আয়োজন শুরু হয়।
এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ বলেন, ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভাজিত হলে ঠিক তারপরেই আমরা দেখলাম ভাষা সুফি লালন ধারা বিকাশ হতে দেওয়া হয় নাই, পশ্চিমবঙ্গ যেমন এদেশের ইসলাম সত্তা, মুসলিম সত্তা বোঝেনি ঠিক তেমনই পরবর্তীতে পশ্চিম পাকিস্তানও বুঝেনি বাঙালি সত্তা। সে কারণেই আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও অনেক হতে হবে, নানা রকমের কর্মসূচি নিতে হবে, মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। নতুন করে দেশ গড়ার যে সুযোগ আমরা পেয়েছি সেই সাহস যেন আমাদের থাকে, যে সাহসে শত শত শিশু মৃত্যু বরণ করল।
আমরা ৫ আগস্টের আগের ভণ্ডামি-মিথ্যাচারে যেন ফিরে না যাই উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, নতুন জন্মানোর জায়গায় শিল্পকলাকে আমরা দেখতে চাই, শিল্পকলায় যে নতুন নেতৃত্ব আমরা পেয়েছি তা অনেক গভীরে বিকাশ ঘটাতে পারবে বলে আশা করি।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ উপস্থিত সকল দর্শকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক এক অভ্যুত্থান উত্তর সময়ে লালন ফকির সাঁইজির ১৩৪তম তিরোধান দিবস নতুন কিছু তাৎপর্য বহন করে।
তিনি আরও বলেন, এক রৈখিক জাতীয়তাবাদের ফ্যাসিবাদ থেকে ভাবগত মুক্তির বিভিন্ন চিহ্ন আমরা লালন থেকে পেতে পারি। জাতিভেদ পন্থার বিপরীতে লালন সাঁইজির সাধনার উপায় ছিল শিল্পকলা, শ্রেণী কেন্দ্রিক রাজনীতির বাইরে আমাদের নতুন রাজনীতি বন্দোবস্তের দার্শনিক ভিত্তি দিতে সক্ষম লালন সাঁইজি।
শিল্পকলা যেন সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রীয় জায়গায় মূল ভূমিকা পালন করতে পারে, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এগিয়ে যেতে পারে তা উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, জাতীয় বাজেটের ৩ ভাগ যেন সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এরপর ফকির লালন সাঁইকে উপস্থাপন করেন শিল্পী অরূপ রাহী ও জহুরা ফকিরানী। তাদের গান ও তত্ত্বে লালন সাঁইজিকে স্মরণ করা হয়।
এদিকে, আয়োজনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে আয়োজন করা হবে সাধুমেলা ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান। সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) আয়োজনের শেষ দিন। এদিন বিকেল চারটায় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ১ম পর্বে ‘জাতিসত্তার প্রশ্ন এবং বাউল-ফকির পরিবেশনার রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক আ-আল মামুন। আলোচনা করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম; লেখক ও সাংবাদিক এবং পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ নাট্যকার, লেখক ও গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশান। সভাপতির বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।
শেষ দিনের আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে দেশবরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে লালন স্মরণোৎসব ‘ধরো মানুষ রূপ নেহারে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল।
এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২৪
এনএটি