ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

‘সাঈদ ভাই শ্রুতিকে বিদায় জানাবেন কে জানতো!’

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৬
‘সাঈদ ভাই শ্রুতিকে বিদায় জানাবেন কে জানতো!’ মাহমুদ সাঈদ আহমেদ ও কনক চাঁপা

চলে গেলেন সংগীতাঙ্গনের নামী রেকর্ডিস্ট মাহমুদ সাঈদ আহমেদ। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) ভোরে হুদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)।

তার মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কিংবদন্তি অনেক শিল্পীর জনপ্রিয় গান রেকর্ডিং হয়েছে তার হাতে।  

খান আতাউর রহমানের প্রখ্যাত রেকর্ডিং স্টুডিও ‘শ্রুতি’র প্রায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কাজ করে আসছিলেন সাঈদ। এর আগে তিনি এফডিসিতে বেশ কয়েক বছর কাজ করেন।  

মঙ্গলবার বিকেল চারটায় শ্রুতি রেকর্ডিং স্টুডিওতে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে মাহমুদ সাঈদ আহমেদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আজিমপুর কবরস্থানে। সেখানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।  
 
গুণী এই রেকর্ডিস্টের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করছেন সংগীতশিল্পীরা। ফেসবুকে প্রিয় এই মানুষকে ঘিরে স্মৃতিচারণ করছেন তারা। তাকে নিয়ে একটি লেখা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপা। বাংলানিউজের পাঠকের জন্য লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
 
“এমন ভয় কাজ করছিলো অনেকদিন থেকেই। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারিনি। যখনই গান গেয়েছি শ্রুতি স্টুডিওতে তখনই মনে হয়েছে এটাই কি আমার এ স্টুডিওতে গাওয়া শেষ গান? এমন ভাবার কারণ পুরাতন শ্রুতি ভেঙে নতুন হবে আর প্রধান রেকর্ডিস্ট সাঈদ ভাইয়ের শরীরটা আমার কাছে ঠিক ভালো ঠেকছিলো না। মনকে প্রবোধ দেই, মন মানে না। সাঈদ ভাইকে বলি, ‘সাঈদ ভাই প্লিজ আসেন তো একটা ছবি তুলি। ’ উনি বাধ্য বালকের মতো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। এই তো মাসখানেক আগের কথা। ‘রাতের জলসাঘরে’ গানটির রেকর্ডিং। মাইক্রোফোনের সামনে বসেছি। উনি মাইক্রোফোন ঠিকভাবে বসিয়ে দিচ্ছেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঠিক আছে?’ বললাম, ‘ভাই গান গাওয়া শেষের পথে, এখনও পজিশন বুঝলাম না’, সাঈদ ভাই মিষ্টি হাসেন।

বলছিলাম দেশের কিংবদন্তি খান আতাউর রহমানের রেকর্ডিং স্টুডিও ‘শ্রুতি’র প্রধান রেকর্ডিস্ট মাহমুদ সাঈদ ভাইয়ের কথা, যিনি সুনিপুণ হাতে গান রেকর্ডিং করতে করতে নিজেও কিংবদন্তি হয়ে গেছেন ওনার নিজের অজান্তে। সেই কিংবদন্তি রেকর্ডিস্ট আজ (৩০ আগস্ট) সকালে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে এবং সেই সঙ্গে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের গানের জগতের বিশাল এক বর্ণাঢ্য অধ্যায়কে। প্রায় চল্লিশ বছর নিরলসভাবে সুনিপুণ হাতে বাংলাদেশের তাবড় শিল্পীদের গানগুলো তিনিই রেকর্ড করেছেন অসম্ভব দক্ষ হাতে। আর আমার যতো গান, সুরকার মইনুল ইসলাম খানের গান, সবই সাঈদ ভাইয়ের হাতের কারিশমা।

কদিন আগে বন্ধু শ্রাবণী রহমানের সঙ্গে বলছিলাম, ‘সই, শ্রুতি ভেঙে যে আবার নতুন শ্রুতি করবে, সাঈদ ভাই তখন কি করবেন? কোথায় কাজ করবেন শ্রুতি আবার না গড়ে ওঠা পর্যন্ত?’ জীবনের চিত্রনাট্য বুঝি সাধ্য কি তায়! শ্রুতি ভাঙার আগেই সাঈদ ভাই শ্রুতিকে বিদায় জানাবেন কে জানতো!

আজ যখন আমার একটা গান রেকর্ড করার কথা ছিলো ঠিক তখন দেখি কর্মচঞ্চল সাঈদ ভাই সবকিছুর উর্ধে উঠে স্বার্থপরের মতো ঘুমিয়ে আছেন। কী নিষ্ঠুর এই প্রস্থান! হে পরম করুণাময়, এই ভালো মানুষটার কবরে একটু বাতি দিও, একটু শান্তি দিও। শেষে সুন্দর একটা জায়গায় পৌঁছে দিও। বড় ভালো মানুষ ছিলো এই লোকটা। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৬
এসও/জেএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।