২০১৭ সালের অক্টোবরে শিরোনামহীন ছেড়ে যান ব্যান্ডের তারকা তানজির তুহিন। এরপর তিনি ‘আভাস’ নামে একটি ব্যান্ড গঠন করেন।
এটিকে ‘অর্থনৈতিক সুবিধাগ্রহণ’ হিসেবে দেখে কপিরাইট অফিসে অভিযোগ করে শিরোনামহীন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ধার্যকৃত প্রথম শুনানিতে তুহিন অনুপস্থিত থাকেন। পরে তিনি টাইম পিটিশন প্রেরণ করেন। তার চাহিদা অনুযায়ী সময় দেওয়া হলেও তা পেরিয়ে যায়। এরপর আরও দু’টি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তারপর এ আদেশ এলো।
জানা যায়, কপিরাইট অফিসে অভিযোগের আগে বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশন (বামবা) উভয়পক্ষকে ডাকে। তখন তুহিন কিছু অভিযোগ তোলেন। যদিও বিষয়টি সুরাহার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তবে এই প্রক্রিয়ার এক পর্যায়ে তুহিনের অনুপস্থিতি নিষ্পত্তি কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায়।
এই নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার মধ্যেই তুহিন বেশ কয়েকটি স্টেজ শোতে এবং রেডিও-টিভিতে শিরোনামহীনের গান পরিবেশন চালিয়ে যেতে থাকেন। তখন অবশ্য লিখিত কোনো অনুমতি উপস্থাপন না করে তুহিন দাবি করেন, অন্যান্য প্রাক্তন সদস্যের অনুমতি নিয়ে এসব গান তিনি পরিবেশন করছিলেন।
কিন্তু এ বিষয়ে কপিরাইট বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিরোনামহীনের প্রাক্তন সদস্যদের, যাদের কিছু গানের কথা এবং সুর শিরোনামহীনের বিগত অ্যালবামে প্রকাশিত হয়েছে, তাদের লিখিত অনুমতি নিয়ে, সেই সব সদস্যের লেখা এবং সুর করা গান পরিবেশন করা হলে ব্যান্ডের এ অভিযোগ থাকতো না। বরং জনপ্রিয় গান সমূহের গীতিকার এবং সুরকার, শিরোনামহীনের বর্তমান সদস্যের তৈরি গান পরিবেশন করেন বিধায় অভিযোগ উঠেছে তুহিনের বিরুদ্ধে।
কপিরাইট বোর্ডের আদেশে বলা হয়, তানজির তুহিন কোনো লিখিত অনুমতিপত্র পেশ না করে অন্য প্রাক্তন সদস্যের কথা ও সুরের দাবি তুলে সেসব গানের পাশাপাশি বর্তমান সদস্যদের কথা ও সুরের জনপ্রিয় গানগুলোই পরিবেশন করছিলেন। এরমধ্যে- হাসিমুখ, বন্ধ জানালা, পাখি, ইচ্ছেঘুড়ি উল্লেখযোগ্য। গানগুলোর গীতিকার-সুরকার শিরোনামহীনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জিয়াউর রহমান। এছাড়া ক্যাফেটেরিয়া গানের গীতিকার জিয়াউর রহমান, সুরকার যৌথভাবে জিয়াউর রহমান, ফারহান ও তুষার। নিশ্চুপ আঁধার গানটির যৌথ গীতিকার জিয়াউর রহমান ও ফারহান। সুরকার জিয়াউর রহমান ও তুষার এবং গানটির প্রথম কণ্ঠশিল্পী ফারহান।
কপিরাইট আইন অনুযায়ী গানের কপিরাইট মালিকানা গীতিকার এবং সুরকারের। কণ্ঠশিল্পী এবং বাদ্যযন্ত্রশিল্পীরা ‘রিলেটেড রাইট’ ভোগ করেন। কপিরাইটের মালিক গান কে বা কারা পরিবেশন করবেন কিংবা পরিবর্তন, পরিবর্ধন করা যায় কি-না, তা নির্ধারণ করার অধিকার রাখেন। রিলেটেড রাইটভোগী কেউ সেটা রাখেন না।
কপিরাইট বোর্ডের আদেশে বলা হয়েছে, তুহিন তার নিজের লেখা ও সুরের গান- হয় না, পরিচয়, আহত কিছু গল্প স্বাভাবিকভাবে পরিবেশন করতে পারবেন। আর যৌথ লেখা ও সুরের গান- বরষা, রূপসী নগর, নদী, সুর্য, পরী গানের কপিরাইট’র জন্য যৌথ শিল্পীর লিখিত অনুমতিসহ আবেদন করে কপিরাইট সনদ গ্রহণের মাধ্যমে পারফর্ম করতে পারবেন।
এছাড়া, জনপ্রিয় গানগুলোর প্রকৃত মালিকের অনুমতি ছাড়াই বেআইনি পরিবেশন এবং বাণিজ্যিক সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে তার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর আইনগত শাস্তি আরোপিত হবে।
এক্ষেত্রে কপিরাইট বোর্ডের আদেশে ভলা হয়, বিবাদী কর্তৃক অবৈধ পরিবেশনা সংক্রান্ত কপিরাইট লঙ্ঘনের বিষয়ে বাদী কপিরাইট আইনের ৯৩ ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তার কাছে ফৌজদারী মামলা অথবা ৭৬ ধারা অনুযায়ী দেওয়ানী আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ে করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ‘শিরোনামহীন’র সাবেক এবং ‘আভাস’র বর্তমান ভোকাল প্রধান তানজির তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন আমার কিছু বলার নেই। আমি রোববার (২৩ ডিসেম্বর) কপিরাইট অফিসে যাবো। প্রথমে গানগুলোর বিষয়ে বলবো, এরপর শিরোনামহীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবো। আশা করি যথাসময়ে সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে সবাইকে অবগত করতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮
ওএফবি/এইচএ/