ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিনোদন

কয়েকজন শিল্পীকে পুঁজি করে চলছে নাটক ব্যবসা: চঞ্চল চৌধুরী 

নাজমুল আহসান তালুকদার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২১
কয়েকজন শিল্পীকে পুঁজি করে চলছে নাটক ব্যবসা: চঞ্চল চৌধুরী 

দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে নানামাত্রিক চরিত্রে নিজেকে রূপদান করে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী পেয়েছেন ব্যাপক জনপ্রিয়তা। সুনাম অর্জনের পাশাপাশি তার প্রাপ্তির ঝুলিতে রয়েছে দুইটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা।

 

বর্তমান সময়ের কাজ, সাম্প্রতিক বাস্তবতা ও মিডিয়ার নানাদিক নিয়ে কথা চঞ্চল চৌধুরী কথা বলছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। তারই চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

বাংলানিউজ: এবারের ঈদ উপলক্ষে কয়টি নাটকে কাজ করেছেন?
চঞ্চল চৌধুরী: লকাডাউনের কারণে শুটিং বন্ধ ছিল। শুটিং করতে না পারায় ৫-৬টি নাটক ঈদ উপলক্ষে প্রচার হচ্ছে। এর মধ্যে ঈদ ধারাবাহিক ও সিঙ্গেল নাটক রয়েছে। কাজগুলো সামাজিক গল্প নির্ভর, যেখানে একটু হাস্যরস রয়েছে এবং ইমোশনও রয়েছে। এছাড়া সমাজের জন্য বিশেষ বার্তাও থাকবে।  

বাংলানিউজ: অভিনয়ে আপনাকে আগের তুলনায় কম দেখা যায়, কারণ কী?
চঞ্চল চৌধুরী: ভালো নাটক কম হয়, সেজন্য কম দেখা যায়। অন্যরা আজে-বাজে নাটকে অভিনয় করে, আমি করি না। সব নাটকে কাজ করা যাবে না। এবার ঈদেও কমপক্ষে ৫০টি নাটকের অফার ছিল কিন্তু বেঁছে কয়েকটিতে অভিনয় করেছি। অন্যগুলোতে ভিন্ন কিছু খুঁজে পাইনি, কোয়ালিটিফুল মনে হয়নি। এজন্য একটু কম দেখা যায়।  

বাংলানিউজ: আপনি বলতে চাচ্ছেন সুস্থ-রুচিশীল নাটক কম হচ্ছে?
চঞ্চল চৌধুরী: তুলনামূলক অনেক কম হচ্ছে। মানসম্পন্ন নাটক কম হওয়ার পেছনেও অনেক সংকট রয়েছে। বাজেট স্বল্পতা, গল্প, নির্মাণে দুর্বলতা এমন বহুমুখী সংকট জড়িত। অনেকেই যা পাচ্ছে করছে। আমি ওয়েব প্ল্যাটফর্মে একটু বেশি কাজ করছি। এই কাজের পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। ওয়েবের একটি কাজের সময়ে হয়তো ২০টি নাটকে কাজ করা যাবে, কিন্তু মানসম্মত হচ্ছে বলেই সময় লাগলেও কাজগুলো করছি। এজন্য ইচ্ছে করে টেলিভিশন নাটকে কাজ কমিয়ে দিয়েছি।  

বাংলানিউজ: দিন যাচ্ছে ওয়েব প্ল্যাটফর্ম বাড়ছে। মাধ্যমটির প্রতি দর্শক আকর্ষণও বাড়ছে। ওটিটির ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
চঞ্চল চৌধুরী: ভালো কাজের বিকল্প নেই। ভালো কাজের অভাবেই সিনেমা, নাটক তার সুনাম হারাতে বসেছে। তবে আমাদের কাজের যে সংকট রয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সেই জায়গাটা কিছুটা বুঝতে পেরেছে। বাজেট বেড়েছে, গল্প ও কাজের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। ভবিষ্যৎ বলা যায় না। দর্শককে ভালো কিছু উপহার দিলেই টিকে যাবে। কাজের মানের ওপর ওটিটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। সময়ের সঙ্গে টিকে থাকতে হলে সঠিক পরিকল্পনা, যোগ্য মানুষ ও ভালো বাজেট অবশ্যই প্রয়োজন।

বাংলানিউজ: দীর্ঘ সময় ধরে অভিনয় করছেন, সু-সময় দেখছেন। বর্তমানে খানিকটা ভাটা পড়েছে, এখানে পেশাদারিত্বের কতটা অভাব বোধ করেছেন?
চঞ্চল চৌধুরী: আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে সেভাবে পেশাদারিত্ব তৈরি হয়নি। যদি তাই হতো তাহলে দিনে দিনে জায়গা উন্নতি হতো বিশ্বের অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির মতো। আজকে সংকট নিয়ে কথা বলতে হতো না। আমাদের খারাপ জিনিস বর্জন করতে হবে। রুচিশীল কাজ করতে হবে। লেখক, নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রী, প্রযোজকসহ যারা মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত, সবার জায়গা থেকেই পেশাদারিত্ব বাড়াতে হবে।  

বাংলানিউজ: অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিতে একজন শিল্পী সিনিয়র হলে মূল্যায়ন বাড়ে। কিন্তু আমাদের দেশে কাজ কমে যায় কেন?
চঞ্চল চৌধুরী: যে দেশের যেমন সিস্টেম। আমাদের দেশে এভাবেই চলছে। আমাদের দেশে নায়িকারা একটা বয়সের পর কাজ পায় না। নায়কদের ক্ষেত্রেও কাজ কমে যায়। অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিতে শিল্পী সিনিয়র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কদর বাড়ে। কিন্তু আমাদের এখানে অভিজ্ঞ হয় আর কদর কমতে থাকতে। আর এই কারণেই ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী থাকা সত্ত্বেও কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। এই স্ট্রাকচারটাই পরিবর্তন করতে হবে।  

বাংলানিউজ: হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পী নিয়ে নাটকের কাজ হচ্ছে। শিল্পের এই জায়গাটা কী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি?
চঞ্চল চৌধুরী: এসব নিয়ে আর কথা বলতে ইচ্ছে করে না। হাতে গোনা কয়কেজন অভিনয় শিল্পীকে পুঁজি করে চলছে নাটক ব্যবসা। অনেক যোগ্য শিল্পী, কলাকুশলীরা বঞ্চিত হচ্ছে। যোগ্য নাট্যকাররাও অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছেন। এখন তথাকথিত নাটক নির্মাণে স্ক্রিপ্ট লাগে না। এজন্য নাট্যকারের সংখ্যাও বাড়ছে না। পেশাগত যোগ্যতায় খুব কম কাজ হচ্ছে। ব্যক্তিগত লেনদেন অধিকাংশে প্রভাবিত করছে।

বাংলানিউজ: ঈদ উপলক্ষে আপনার একটি গান প্রকাশ পেল…
চঞ্চল চৌধুরী: আমি আসলে অভিনয়টাই করে যেতে চাই। সখে বছরে দু-একটি গান করি। সেই ধারাবাহিকতায় মরমী কবি হাছন রাজার বিখ্যাত গান ‘নিশা লাগিল রে’ গানটি নতুন সংগীতায়োজনে গেয়েছি। ‘সর্বত মঙ্গল রাঁধে’ গানটির মতো এখানে আমার সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন মেহের আফরোজ শাওন। আগের গানটির ন্যায় এবারের গানটিও সংগীতায়োজন করেছেন পার্থ বড়ুয়া। ঈদে উপলক্ষে গানটি প্রকাশ পেয়েছে। আশা করি বিখ্যাত এই গানটি মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২১
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।