ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

৮ম প্রয়াণ দিবস

মহানায়িকার পৈত্রিক বসতভিটা সংস্কারের দাবি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২২
মহানায়িকার পৈত্রিক বসতভিটা সংস্কারের দাবি

পাবনা: উপমহাদেশের বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৮ম প্রয়াণ দিবস সোমবার (১৭ জানুয়ারি)। দিবসটিকে স্মরণ করে জেলার সংস্কৃতিকর্মীদের নানা কর্মসূচি থাকলেও সংস্কারের অভাবে পর্যটক বিমুখ হচ্ছে এখানে।

 

মহানায়িকার এই স্মৃতি বিজড়িত বসতভিটা দীর্ঘদিন স্বাধীনতাবিরোধীদের দখলে ছিল। স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা আন্দোলন সংগ্রাম করে দখলমুক্ত করে সুচিত্রাসেনের বসত ভিটা। প্রাথমিক সংস্কার কাজ করে দর্শণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় মহানায়িকার বসত বাড়িটি। তবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এখনো বাস্তবিক কোনো দৃষ্টিনন্দন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এখানে। সংস্কারের আর উন্নয়নের অভাবে থমকে আছে মহানায়িকার পৈত্রিক বসতভিটা। তাই দর্শণার্থী ও পর্যটক আকৃষ্ট করার জন্য মহানায়িকার এই বসত ভিটা সংস্কারের দাবি সকলের।  

পৈত্রিক সূত্রে জন্ম নেয়া মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের শৈশব ও কৈশর জীবন কাটিয়েছেন এই বাড়িতে। জেলা শহর পাবনার গোপালপুর মহল্লার হেমসাগরলেনের এই বসত বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন তিনি। বাবা পার্শ্ববর্তী পৌরসভায় সেনেটারি ইনেস্পেক্ট হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এই মহানায়িকার জন্মভিটা দীর্ঘদিন দখলে রেখেছিল স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র। স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীদের আন্দোলনের ফলে দখল মুক্ত হয় বসতভিটা। বসতভিটা দখলমুক্ত হলেও সংস্কারের অভাবে দর্শণার্থী ও পর্যটক বিমুখ হচ্ছে এখান থেকে। দেশে-বিদেশের অনেক মানুষ একবার হলেও এই মহানায়িকার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে আসেন এক নজর দেখার জন্য। তবে স্বল্প জায়গা আর দেখার মতো তেমন কিছু না থাকায় বেশ হতাশ হয়ে যান তারা।

দখলমুক্ত হওয়ার পর থেকে পাবনা জেলা প্রশাসন মহানায়িকার বাড়িটি দেখভাল করছে। প্রাথমিক সংস্কার কাজ করে আগত দর্শণার্থী ও পর্যটকদের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। তবে ভেতরে বসার স্থানসহ কক্ষগুলোর ভেতরে বাধানো ছবি ও নিদর্শনগুলোকে আরো সুন্দর করার দাবি রয়েছে। তবে যেমনই থাকুক না কেন মহানায়িকার স্মৃতি বিজড়িত বসত ভিটা এখানে আসতে পেরে অনেক দর্শণার্থীই বেশ খুশি ও আনন্দিত।

মহানায়িকার বসতভিটা নিয়ে সুচিত্রাসেন সংরক্ষণ পরিষদের সাবেক সম্পাদক ড. রাম দুলাল ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, সুচিত্রাসেনকে নিয়ে সারা বশ্বের বাংলা ভাষাভাষি সকলের জানার আগ্রহ রয়েছে। জন্মসূত্রে তিনি পাবনার সন্তান তাকে নিয়ে অমরা গর্ববোধ করি। এই বসভিটা বেদখলে ছিল। সেটি দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পরে মুক্ত হয়েছে এখানে সকলের অবদান রয়েছে। তবে আমরা যারা এই কাজের অগ্রজ ছিলাম তাদের প্রত্যাশা ছিল এটি একটি আর্কাইভ হবে। সারা বাংলাদেশের চলচিত্র প্রশিক্ষকেরা এখানে আসেবন। দেশ-বিদেশের মানুষ আগ্রহ সহকারে মহানায়িকার বসতভিটা দেখার জন্য আসেন। তবে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে থমকে আছে বসতভিটার উন্নয়ন কাজ। জানিনা কবে সৃজনশীল উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে এখানে। সরকার দৃষ্টিতে অবশ্যই এটি আছে শুধু একটু মনে করিয়ে দেওয়ার বিষয়।

সুচিত্রাসেন চলচ্চিত্র প্রর্দশনী ও সংগঠনের সাবেক আহ্বায়ক কমরেড জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছে তবে সেটি রক্ষণ করা এখন কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের কাছ থেকে অনেক কষ্ট করে সংগ্রাম করে এই বাড়িটি আমরা জেলার সাংস্কৃতিকর্মীরা দখল মুক্ত করলাম। কিন্তু মুক্ত হওয়ার পরে সেটি নিয়ে পরিকল্পনার সময় আর আমাদের কাছে পরামর্শ গ্রহণ করা হলো না। প্রতিবছরই আমরা তাকে স্মরণ করে নানা অনুষ্ঠান করে আসছি। চলচ্চিত্র প্রর্দশনী করেছি বেশ কয়েকবার। বাড়িটিকে ঘিরে আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল সেটি হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অবশ্যই এই মহানায়িকার বাড়িতে রক্ষায় কার্যত ব্যবস্থা নেবেন। নতুবা আমাদের উপরে দায়িত্ব অর্পণ করবেন।
 
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আফরোজা আখতার বলেন, মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িতে পর্যটক আকৃষ্ট করার জন্য সকল ধরনের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এটি ট্যুরিজম বোর্ড জাতীয় পর্যটন সংস্থার কাছে চিঠি লেখা হয়েছে। তার ইতোমধ্যে এটি পরিদর্শন করেছেন। আমাদের একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আশাকরছি স্বল্প সময়ের মধ্যে এটি সকলের কাছে একটি আর্কষণীয় পর্যটক স্থানে পরিণত হবে।

১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল বৃহত্তর পাবনা জেলাতে জন্মগ্রহণ করেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। পৌর শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের একতলা ৫ কক্ষ বিশিষ্ট এই বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সুচিত্রাসেনের শৈশব ও কৈশর জীবন কেটে এই পাবনাতে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পরিবারসহ চলে যান কলকাতায়। পাবনা পৌরসভাতে চাকরি করতেন তার বাবা। চলচ্চিত্রে প্রবেশ আগে তার নাম ছিল রমা দাসগুপ্ত। বাবা করুনাময় দাসগুপ্ত আর মা গৃহিনী ইন্দ্রিরা দেবী।

বর্তমানে বাড়িতে তার সেই সময়ের চলচ্ছিত্রের কিছু ছবি ও তাকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই রয়েছে এখানে। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেধে সাড়ে ৭৪ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন সুচিত্রা সেন। হিন্দি ও বাংলা মিলিয়ে সর্বমোট ৬১টি ছবিতে অভিনয় করেছেন এই মহানায়িকা। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনয় শিল্পী যিনি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পেয়েছিলেন। পরে ১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারের ভূষিত করেন। ২০০৫ সালে দাদা ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। তবে সরাসরি গিয়ে পুরস্কার নিতে হবে বলে তিনি সেটি প্রত্যাখ্যান করেন। ২০১২ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার বঙ্গবিভূষণে ভূষিত করেন তাকে। টানা ২৫ বছর চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৭৮ সালে প্রণয় পাশা ছবি করার পরে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান তিনি। দীর্ঘ তিনযুগ তিনি আর মানুষের সামনে আসেননি। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ৮৩ বছর বয়সে সকালে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।