ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সুউচ্চ গাছে ‘তেলি-গর্জন’ ফুলের শোভা 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
সুউচ্চ গাছে ‘তেলি-গর্জন’ ফুলের শোভা  ঝরে পড়া তেলি-গর্জন ফুল।

মৌলভীবাজার: সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। ভোরের মিষ্টি সতেজতার ভেতর স্বাস্থ্যসচেতনদের কেউ কেউ সেরে নেন প্রাতঃভ্রমণ।

সকালের আলোপূর্ণ পথে পথে এগিয়ে যেতে শরীর আর মন হয়ে উঠে তরতাজা। তবে তার ভেতর প্রকৃতিপ্রেমীদের কেউ কেউ দেখে নেন ঝরাফুলের নির্লিপ্তভাবে পড়ে থাকার এ বিষয়টি।

একসময় ঝরাফুলের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। মুগ্ধ হন পুষ্পময় সৌন্দর্যটুকু উপভোগ করে।  ওপরের দিকে তাকাতেই – বোঝা যায় গাছটি দীর্ঘকায়। ছোট বা মাঝারি কোনো বৃক্ষ নয় এটি। যতটা উঁচু ততটাই অদেখা ফুলগুলো ফুটে আছে গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে। নিচ থেকে ওপরের ফুল দেখার এ দৃশ্য সুখকর নয়, বিড়ম্বনাময়। কেননা, ফুলের অবয়ব তাতে কিছুতেই ধরা পড়ে না। কেবলি বোঝা যায়, কোনো সাধারণ ফুল ফুটে আছে এখানে।  

তবে নিচে পড়ে থাকা ফুলগুলোর দিকে তাকালে সহজে অনুমান করা যায়, এটি কোনো সাধারণ ফুল নয়। এর বাহ্যিক শোভা এবং দেহগত আকৃতি মিলবে না আমাদের পরিচিত কোনো ফুলেদের সাথে।  

পাঁচ পাপড়িযুক্ত এ ফুলটির নাম ‘তেলি-গর্জন’। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সড়ক পাশে এ বিশেষ প্রজাতির উদ্ভিদটি নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।  

বাংলাদেশের উদ্ভিদ জ্ঞানকোষ থেকে জানা যায়, তেলিগর্জন ফুলটি সাদা এবং তার প্রতিটি পাপড়িতে ফ্যাকাশে লাল টান রয়েছে। ফুলটি মৃদু সুগন্ধিযুক্ত। বৃতিনল ১ দশমিক ৫ সেমি লম্বা, খণ্ড ৫টি, ৩টি খাটো, ২ মিমি লম্বা, ডিম্বাকার বা গোলাকার, বাকি ২টি ১ সেমি লম্বা, রৈখিক দীর্ঘায়ত এবং ফুলটি রোমশবিহীন। পাপড়ি ২ দশমিক থেকে ৪ দশমিক ৫ সেমি লম্বা এবং দীর্ঘায়ত। ১টি সুস্পষ্ট ও ২টি খাটো মূলীয় শিরাযুক্ত।

নেচার স্টাডি সোসাইটি অফ বাংলাদেশের (এনএসএসবি) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ক্যাপ্টেন কাওছার মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, ‘তেলি-গর্জন’ ফুলটিকে কেউ কেউ আবার ‘গর্জন’ ফুলও বলেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম Dipterocarpus turbinatus এবং এটি Dipterocarpaceae পরিবারের বৃক্ষ। ফুল ফোটার সময় মার্চ থেকে এপ্রিল।

তিনি আরও বলেন, এটি চিরহরিৎ চিরসবুজ বনের বৃক্ষ। একটি গর্জন গাছ সাধারণ ৩০ থেকে ৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় পাওয়া যায়। এর আদি নিবাস উত্তরপূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। বাংলাদেশসহ থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন এবং চীনের কিছু অংশে পাওয়া যায়।

কাঠের গুণাগুণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর কাঠ ভালো। প্লাইউড শিল্পে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত রেলওয়ের স্লিপার এবং আসবাবপত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এই গাছ থেকে এক ধরনের তেল পাওয়া যায়। যা বার্নিশ আর কালিতে ব্যবহার করা হয়। নানা ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এর তেল কাঠেও ব্যবহার হওয়ার উদাহরণ রয়েছে।  

ওই গাছটি ঔষধিগুণসম্পন্ন। ছোট কাটাছেড়া, আলসার, চর্মরোগ, গনোরিয়া প্রভৃতি রোগের বিরুদ্ধে উপকারী বলে জানান এ প্রকৃতিপ্রেমী।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।