ঢাকা, বুধবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বুনোহাঁসের অদেখা উড়ন্ত সৌন্দর্য

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪
বুনোহাঁসের অদেখা উড়ন্ত সৌন্দর্য চা জলাভূমির উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে যুগল পাতি সরালি। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: বুনোহাঁস সম্পর্কে সহজ ধারণাটা হলো- এরা বনেই বাস করে। বনের নির্জন জলাশয়ে বা তার অদূরবর্তী অন্যান্য ছোট-বড় প্রাকৃতিক বিল-হাওর ঘিরে দিব্বি একটা জীবন কাটিয়ে দেয় ওরা।

যেখানে মানুষ নামক ‘ডিসটার্ব’ বা অনাকাঙ্ক্ষিত যন্ত্রণা নেই সেখানেই ওরা চিরস্বাধীন, চিরমুক্ত।

ওদের শরীরে মিশে থাকে বুনো গন্ধ। যা তাদের জন্ম-জন্মান্তরের শারীরিক অর্জন। লোমের ভাজে ভাজে তাদের যে উষ্ণতা আর যে উত্তাপটুকু রয়েছে এটাই তাদের চিরঞ্জীব গোপন শক্তি। ডানায় ভর করে তাদের উড্ডয়নের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ওই গোপন শক্তিটুকুই ভরসা।

শুধু তা-ই নয়, নবপ্রজন্ম সৃষ্টিতে তাদের লোমশ ওই শক্তিটুকু যেনবা টনিক। ম্যাজিকের মতই কার্যকর। ডিম পেড়ে তাতে প্রায় তিন সপ্তাহ তা দিলেই প্রকৃতিতে আগমন ঘটে বুনোহাঁসের নবপ্রজন্মের। সত্যি এ এক অবাক বিস্ময়!

বুনোহাঁসেদের ডানাময় উড়ন্ত সৌন্দর্য খুব একটা দেখা হয়নি। সেই গভীর আগ্রহটুকু বুকে গেঁথে মাঝে মাঝে ছবি আহরণে যাওয়া হয় কিন্তু সেই অদেখা ছবিটি আর ধারণ করা সম্ভব হয় না। অগত্যা তথ্যদাতার সহায়তা নিতেই হলো। বুকে আশার সৃষ্টি হয়।

কদিন পর তথ্যদাতা এসে জানালেন, চা বাগানের ওই নির্জন স্থানটিতে ওরা (বুনোহাঁস) খুব ভোরে নামে। তারপর মানুষের আনাগোনা শুরু হলেই ওরা অন্যত্র পালিয়ে চলে যায়। … এ কথাগুলো শোনার পর থেকেই গভীর উৎসাহ মনে। কখন যে যাই! কখন রাত ভোর হবে! ইত্যাদি নানান কথা।     
যথারীতি পরের দিন। দিবসের প্রথম প্রহর। ভালো করে আলো ফুটেছে মাত্র। প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে মোটরবাইক রেখে তারপর গন্তব্যের দিকে অগ্রসর। পথের মধ্যে নানান পাখিদের ডাক হৃদয় ভরিয়ে তুললো।

জলাশয়ের কাছে যেতেই দূর থেকে কিছুটা অস্পষ্টভাবে দেখা গেল বুনোহাঁসের মাথা। ওরা আপন মনে বিলের জলে ভেসে রয়েছে। সত্যি অপূর্ব! যেতে যেতে প্রায় কাছাকাছি। জলে ভেসে থাকার কিছু ছবি নেয়া গেল। কিন্তু যে দৃশ্য বা যে বিশেষ ছবি ধারণের জন্য এই মিশন সেটা এখনো পাওয়া যায়নি।

হঠাৎ যুগল বুনো হাঁসেরা টের পেল এ আগন্তুকের উপস্থিতি। অনতিবিলম্বে দে ছুট! সবুজ প্রকৃতির মাঝে হালকা কালচে খয়েরি রঙের উড়ন্ত শোভা সত্যি চির অসাধারণ! সেই সাথে মন মাতানো ডানার মৃদু শব্দ! আহা! এই অদেখা দৃশ্যে এক মুহূর্তেই ভরে উঠে হৃদয়।  

এই বুনোহাঁসের বাংলা নাম পাতি সরালি এবং ইংরেজি নাম Lesser Whistling Duck। এরা আমাদের দেশের পাখি। এরা পরিযায়ী পাখি নয়। আমাদের দেশের হাওর-বাওর, বিল-জলাশয়ে ওরা টিকে আছে।

তবে আইইউসিএন, বাংলাদেশ এর তথ্যমতে পাতি সরালি প্রজাতি ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ প্রাণী। ওদের বিচরণস্থান, আবাসভূমি এবং দেশের নানান জায়গার প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংস হওয়ায় ওদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রচলিত বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিগুলো সংরক্ষিত।   

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪
বিবিবি/এসএএইচ                                  
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।