বুধবার দুপুরে (১৩ সেপ্টেম্বর) হবিগঞ্জের জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে এ তথ্য জানান তিনি।
ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের বাংলাদেশে ৭টি প্রজাতির শকুন ছিল।
এসব শকুনের মধ্যে রাজ শকুন একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আমাদের দেশে শুধু বাংলা শকুনটিই রয়েছে। বাকিগুলো আসা-যাওয়া করে বলে জানান তিনি।
ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, “আমরা বন বিভাগের সাথে যৌথ উদ্যোগে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জরিপের মাধ্যমে জানতে পারলাম গত দুই দশক ধরে শকুন মারাত্মকভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিলুপ্ত হতে হতে এই সংখ্যা ৯৯ দশমিক ৯ ভাগে এসে ঠেকেছে। শকুনকে আমরা ‘মহাবিপন্ন’ (Critically Endangered) ঘোষণা করে এটিকে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করলাম। ”
“মরা গরু, ছাগল অথবা মরা অন্যান্য প্রাণী খেয়ে শকুন আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষা প্রদান করে। এতো উপকারী প্রাণীটিকে আমরা না বুঝে ক্রমান্বয়ে ধ্বংস করে ফেলেছি। আমাদের গবাদি পশুর চিকিংসায় ‘ডাইক্লোফেনাক’ ও ‘কিটোপ্রোফেন’ নামক যে ইনজেকশনটি দেওয়া হয় সেটির ভয়াবহ ক্ষতির প্রভাবই মূলত শকুন বিলুপ্তির কারণ। ”
তিনি বলেন, “সরকার বর্তমানে ‘ডাইক্লোফেনাক’ ও ‘কিটোপ্রোফেন’ নামক এই ক্ষতিকর ইনজেকশন দুটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে শুধু শকুন নিরাপদে রাখার জন্য। কোনো ক্রমেই যেন এ ওষুধ যেন হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন বাজারে আর দেখা না যায় এবং মানুষ যেন সচেতন হয়। যারা ব্যবহার করছেন তাদের যেন বোঝাতে হবে যেন বিকল্প হিসেবে ‘মেলোক্সিক্যাম’ ওষুধটি ব্যবহার করে। ”
“আজকে বনে-জঙ্গলের দিকে যদি তাকাই, জলাভূমির দিকে যদি তাকাই সব জায়গাতেই একটা হাহাকার দৃশ্য। বনে গাছ নেই, প্রাকৃতিক জলাভূমিতে মাছ নেই এরকম একটি বিপন্ন অবস্থা। এই অবস্থাগুলো যদি চলমান থাকে তবে শকুন কেন কোনো বন্যপ্রাণিই টিকে থাকতে পারবে না। কোনো বন্যপ্রাণি বনে এককভাবে থাকে না। তার এক নিজস্ব ‘সিস্টেম’ দরকার। যেটাকে আমরা ইকো-সিস্টেম বা প্রতিবেশ ব্যবস্থা বলি। যদি এই প্রতিবেশ ব্যবস্থাটি অক্ষুন্ন না থাকে অর্থাৎ শকুন যদি বনে বসার জায়গা না পায় বা বনে যদি বড় বড় গাছ না থাকে, তবে সে কোথায় গিয়ে বসবে? কোথায় গিয়ে প্রজনন ঘটাবে?”
“ইদানিং প্রচুর বর্জ্রপাতে অনেক মানুষ মারা গিয়েছে। আমাদের পরিবেশের বৃক্ষশূন্যতাই বর্জ্রপাতের মূল কারণ। তাই সরকার এখন উদ্যোগ নিয়ে বেশি বেশি তালগাছ রোপণ করতে। অর্থাৎ এখন অনুভব করছি আমাদের বড় বড় বৃক্ষগুলো চলে গেছে। বন-জঙ্গলে নয়, গ্রামে-গঞ্জেও নেই। আগে বড় বড় শিমুল গাছ ছিল, জাম গাছ ছিল এখন এসব নেই”, যোগ করেন ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা যদি বৃক্ষের প্রতি একটু সমবেদনা জ্ঞাপন করি, বৃক্ষের প্রতি যদি নরম অন্তর হয় আমাদের তবে আজকে আমরা যে পরিবেশের কথা বলছি, পরিবেশের ক্ষতির কথা বলছি, সেই সাথে বন্যপ্রাণিগুলো হারিয়ে যাবার কথা বলছি সেগুলো সব বন্ধ হবে। আমাদের নিজের অস্তিত্বের জন্যই গাছপালাসহ বন-জঙ্গল, জলাভূমিগুলো আমাদের রক্ষা করতে হবে। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
বিবিবি/এমজেএফ