ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লাউয়াছড়ায় শতাধিক বৃক্ষ নিধন, ঝুঁকিতে জীববৈচিত্র্য

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০
লাউয়াছড়ায় শতাধিক বৃক্ষ নিধন, ঝুঁকিতে জীববৈচিত্র্য লাউয়াছড়ায় রাতে আঁধারে কেটে ফেলা গাছের মোথা। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: আবারও হুমকির মুখে পড়েছে দেশের নানা প্রজাতির মূল্যবান জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এ উদ্যানের বাঘমারা ক্যাম্প এবং এর পার্শ্ববর্তী টিলা এলাকা থেকে রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হয়েছে প্রায় শতাধিক বৃক্ষ।


লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলটি বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের অভয়ারণ্য হলেও এভাবে বনের গাছ উজাড় হওয়ায় এর জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। অনেক বন্যপ্রাণী আবাসস্থল হারিয়ে ফেলেছে। কেউ কেউ লোকালয়ে এসে মানুষের হাতে ধরা পড়ছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আহত বা নিহত হচ্ছে।

করোনো ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও আগের মতো প্রবেশ করতে পারছেন না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে সংঘবদ্ধ গাছচোর চক্র। তারা তিন/চার মাস যাবত প্রায় রাতেই মূল্যবান বৃক্ষ কেটে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখানে দু’টি সংঘবদ্ধ চক্র সরাসরি সক্রিয়। একটি চক্র রাতের আঁধারে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে গাছ কাটে। অপর চক্রটি কাটা গাছগুলোর পরিত্যক্ত অংশ জ্বালানি কাঠ হিসেবে সংগ্রহ বা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। গাছের পাশাপাশি কেটে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ ও লতাগুল্ম, যেগুলো বন্যপ্রাণীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

লাউয়াছড়ায় রাতে আঁধারে কেটে ফেলা গাছের মোথা। ছবি: বাংলানিউজলাউয়াছড়া উদ্যানের বাঘমারা ক্যাম্প সংলগ্ন টিলা এবং এর অদূরবর্তী টিলাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গাছ কেটে গাছের মোথাগুলো (গাছের নিম্নাংশ) শুকনো ডালপালা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। খুব ভালো করে না দেখলে দূর থেকে বোঝায় উপায় নেই যে, এখানে এক সময় একটি বড় আকারের বৃক্ষ দাঁড়িয়ে ছিল। বড় আকৃতির মোথা দেখে অনুমান করা যায়, কেটে ফেলা বৃক্ষগুলো চিকরাশি, মেহগনিসহ অন্য প্রজাতির। গভীর রাতে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র বিশাল আয়তনের মূল্যবান এ গাছগুলোর কাটা অংশ কখনো পিকআপ, কখনো ঠেলাগাড়িতে করে পাচার করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, প্রায় রাতেই এসব এলাকা থেকে গাছ কাটা হচ্ছে। করোনার কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। কিন্তু গাছচোররা তখন সক্রিয় ছিল। সবশেষ গত সপ্তাহে টাটা পিকআপ ভ্যানে করে গাছগুলো পাচার করা হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং বাপা মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক আ স ম ছালেহ সুহেল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমিও শুনেছি দীর্ঘদিন ধরে লাউয়াছড়ায় নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। যে সংঘবদ্ধ চক্র গাছগুলো কাটছে, তাদের নিশ্চয়ই কোনো না কোনো পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। লাউয়াছড়ার সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে হলে মূল্যবান বিশালাকৃতির গাছগুলো বাঁচাতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘আমি মাঝে মধ্যে দেখি, লাউয়াছড়ার বিভিন্ন প্রাণী লোকালয়ে চলে আসছে। এর কারণ তাদের আবাসস্থল ধ্বংস করা এবং তীব্র খাদ্য সংকট। বৃক্ষ নিধনের ফলে হুমকির মুখে পড়ছে জাতীয় উদ্যানের উদ্ভিদ ও প্রাণীরা। যারা গাছ কেটে এখানকার মূল্যবান পরিবেশ ব্যবস্থা ধ্বংস করছে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে এ খবর আমি শুনেছি। গুরুত্ব সহকারে তদন্তের ভিত্তিতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২০
বিবিবি/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।