মৌলভীবাজার: ‘বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী’- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের এ কথাটি ব্যাপক প্রচলিত। সাহিত্যমানের প্রলেপে রাঙা এ কথাটির সরলার্থ - ব্যবসা করলে পকেটে টাকা আসে।
সমাজের অনেকেরই কোনো না কোনো ব্যবসা করার ইচ্ছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে তাদের বাণিজ্যে পা পড়ছে না। পরিকল্পনা আর ব্যবসা স্বপ্নে পার হচ্ছে দিন।
তবে সমস্যা নেই। কারণ ব্যতিক্রমীভাবে ব্যবসাকার্য পরিচালনা করার মানুষেরা এখনো ঘুমিয়ে পড়েননি। সংখ্যা তারা কম হলেও জেগে আছেন। তাদের মনন আর চিন্তা-ভাবনাজুড়ে অদেখা ব্যবসাকেন্দ্রের নতুন নতুন নমুনা। তারাই এমন উদ্দামের ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা।
ব্যতিক্রমী আইডিয়ার এক কাপড় ব্যবসায়ীর নাম আয়নাল হক। উনার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায়। মূলধন ছাড়া শ্রীমঙ্গলে এসে শুরু করেছেন গাছের নিচে ব্যতিক্রমী ব্যবসা। ব্যবসার জন্য পরিচালনা করে চলেছেন স্তুপ স্তুপ কাপড়ের বান্ডিল। বিছানার চাদর আর শীতের গায়ের চাদর সব-ই এই ব্যবসায়ীর ডেরায়। শ্রীমঙ্গল উপজেলা থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দিকে রওয়ানা দিলেই রাস্তার পাশে তার এই গাছের নিচে চাদরের এই ব্যতিক্রমী দোকানটি চোখে পড়বে। লিচু গাছগুলোর নিচে নায়লনের দড়ি টাঙিয়ে তার ওপর একটি একটি করে নানান রঙের বর্ণিল সুদৃশ্য চাদরগুলো শোভ বৃদ্ধি করে ঝুলে আছে।
সম্প্রতি কথা হয় উনার কথা। তিনি জানান, ‘ভাইরে, আমি গরিব মানুষ। বাড়তি কোনো ট্যাকা-পয়সা হাতে নাই। কিন্তু কিছু একটা কইরা সৎভাবে তো বাঁচতে হইবো। তাই একজনকে কইয়া এই জায়গাটা লাইছি। কোনো ভাড়া-টারা দেওয়া লাগে না। শুধু চাদর বিক্রি করি’।
ভাড়া না নেওয়ার কারণ জানতে চাইছে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই জায়গার মালিক কোটিপতি। তিনি কইছে, তুমি শুধু আমার এই জায়গাটা দেইখা রাইখো। আর তুমি বিক্রিবাট্টা কইরা যা পাইবা আমারে এক টাকাও দেওন লাগবো না, সব তোমার। ”
‘তারপর পর থাইকা এই জায়গায় চাদর বিছাইয়া সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বিক্রি করি। মোটামুটি ভালোই বিক্রি হয়’ বলে যোগ করেন। কত রকমের চাদর এবং দরদাম জানতে চাইলে আয়নাল হক বলেন, ‘মুনিপুরী চাদর, ইয়ামিনের থ্রিডি চাদর এই দুই প্রকারের চাদরই বেশি বিক্রি করি। প্রতি পিস ৬শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। গায়ের চাদর আর বিছানার চাদর দুটোই চলে। বেশির ভাগই ডাবল বিছানার চাদর। এগুলোর আকার-আকৃতি ৯ ফুট বাই সাড়ে ৭ ফুট’।
‘লোকাল (স্থানীয়) ক্রেতা কম। সবাই ট্যুরিস্ট (পর্যটক)। শ্রীমঙ্গল তো এখন সারাদেশে পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। বাংলাদেশের নানা এলাকার মানুষ এখানে আসে। ট্যুরিস্টের গাড়ি ওপর নির্ভর আমার এই ব্যবসা। মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা আয়’ বলে জানান তিনি।
সেটা (ট্যুরিস্টের গাড়ি ওপর) কী রকম? জানতে চাইলে এই কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘মনে করেন যখন হঠাৎ হাইফাই (আধুনিক) বড় বাস এসে থামে তখন আধা ঘণ্টার মধ্যেই ১০/১২ টা কিংবা ১৫/২০টা চাদর দ্রুত সেইল (বিক্রি) হয়ে যায়। তখন খুবই খুশি লাগে’।
তার সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে জানা যায়, স্ত্রীসহ ৪ মেয়ে ১ ছেলে নিয়ে তার সংসার। তিনি ছাড়া সবাই নায়ায়ণগঞ্জ থাকেন। ৪ মেয়ের বিয়ে হলেও দুই মেয়ে এখন তার বাড়িতেই থাকেন। মাস শেষে ১০/১২ হাজার টাকা গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে হয়। পুরোটাই আয় করতে হয় গাছের নিচের এই ব্যতিক্রমী দোকানের মূলধনহীন বাণিজ্য থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২১
বিবিবি/এএটি