ঢাকা, রবিবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৫ জুন ২০২৫, ১৮ জিলহজ ১৪৪৬

ফুটবল

নাইটহুডে ভূষিত হলেন ডেভিড বেকহ্যাম

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:০৮, জুন ১৪, ২০২৫
নাইটহুডে ভূষিত হলেন ডেভিড বেকহ্যাম ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে ডেভিড বেকহ্যাম/সংগৃহীত ছবি

অবশেষে বহুল প্রত্যাশিত সম্মান— নাইটহুডে ভূষিত হলেন ডেভিড বেকহ্যাম। ফুটবল কিংবদন্তি, উদ্যোক্তা ও সামাজিক দূত হিসেবে দ্যুতিময় এক যাত্রার স্বীকৃতি পেলেন তিনি।

রাজা তৃতীয় চার্লসের জন্মদিন উপলক্ষে ২০২৫ সালের সম্মাননার তালিকায় যুক্তরাজ্য সরকার তাকে নাইটহুড প্রদান করেছে।

পূর্ব লন্ডনে বেড়ে ওঠা বেকহ্যাম দীর্ঘদিন ধরেই নাইটহুড পাওয়ার প্রত্যাশিত প্রার্থী ছিলেন, বিশেষত ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক আয়োজনের পেছনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পর থেকে। কিন্তু প্রায় এক দশক পেরিয়ে এবার মিলল সেই কাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি।

৫০ বছর বয়সী বেকহ্যাম ২০১৩ সালে পেশাদার ফুটবলকে বিদায় জানানোর পরও খেলার জগত ও সামাজিক কার্যক্রমে প্রভাব রেখে চলেছেন। বিশেষ করে লিওনেল মেসিকে আমেরিকায় আনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা – মেজর লিগ সকার (এমএলএস)-এর দল ইন্টার মায়ামির সহ-মালিক হিসেবে – তাকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।

এই সম্মাননা প্রসঙ্গে বেকহ্যাম বলেন, “পূর্ব লন্ডনের এক দেশপ্রেমিক পরিবারে বড় হওয়া একজন ছেলে হিসেবে আমি কখনও কল্পনাও করিনি যে এমন একটি সম্মান পাব। নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা এবং অধিনায়কত্ব করা ছিল আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয়। ”

“খেলার মাঠের বাইরে, বিশ্বজুড়ে ব্রিটেনকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছি, কাজ করেছি অসাধারণ সব সংস্থার সঙ্গে, যারা মানুষের পাশে দাঁড়ায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে। আমি কৃতজ্ঞ যে এমন কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পেরেছি যা আমাকে সত্যিই তৃপ্তি দেয়। ”

তবে এই স্বীকৃতির পেছনে রয়েছে কিছু বিতর্কও। ২০১৭ সালে এক ইমেইল হ্যাকের ঘটনায় প্রকাশ পায়, ২০১৩ সালে নাইটহুড না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন বেকহ্যাম। ওই ই-মেইলগুলোতে তিনি সম্মাননা কমিটিকে “অবজ্ঞাকারী” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন এবং দাবি করেন, তিনি ‘নাইটহুড’ পাওয়ার বিষয়টি আর পাত্তা দেন না। সেই সময় কর সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে উদ্বেগও ছিল ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের। যদিও বেকহ্যামের পক্ষে দাবি করা হয়েছিল, ইমেইলগুলো “হ্যাক করা ও বিকৃত”।

এরপরও রাজপরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল দৃঢ়। গত ডিসেম্বরেই কাতারের আমিরের যুক্তরাজ্য সফর উপলক্ষে রাজা চার্লস ও রানী কামিলার সঙ্গে বাকিংহাম প্যালেসে নৈশভোজে অংশ নেন বেকহ্যাম ও তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়া। যদিও ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হওয়ার কারণে তার প্রতি কিছু সমালোচনাও ছিল, বিশেষ করে কাতারের মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে।

বেকহ্যাম ২০০৩ সালে রানি এলিজাবেথের কাছ থেকে OBE (অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) খেতাব পেয়েছিলেন এবং ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য ২০২৪ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ক্রিস্টাল অ্যাওয়ার্ড পান।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ‘ক্লাস অব ৯২’ প্রজন্মের অংশ হিসেবে বেকহ্যাম ছিলেন সেই কিংবদন্তি দলটির সদস্য, যারা ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম ট্রেবল জয় করে – প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। তার ক্যারিয়ারে রয়েছে ম্যান ইউ, রিয়াল মাদ্রিদ, এলএ গ্যালাক্সি, এসি মিলান এবং পিএসজি মিলিয়ে মোট ১৯টি বড় শিরোপা। তিনি ছয় বছর ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন, দেশের হয়ে ১১৫টি ম্যাচ খেলেন – যা ইংল্যান্ডের পুরুষ দলের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

২০০১ সালে গ্রীসের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে ফ্রি-কিকে গোল করে ২০০২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে নিয়ে যাওয়াই ছিল জাতীয় দলের হয়ে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। আর সবচেয়ে বিতর্কিত সময় ছিল ১৯৯৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে লাল কার্ড দেখা এবং এরপর গণমাধ্যমের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়া।

তিনি ইংল্যান্ডের প্রথম পুরুষ খেলোয়াড়, যিনি তিনটি ভিন্ন বিশ্বকাপে গোল করেন এবং প্রথম ইংলিশ ফুটবলার হিসেবে খেলেন ১০০টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচ।

অবসরের পরও খেলার সঙ্গে বেকহ্যামের সম্পর্ক অটুট। ক্লাস অব ৯২ দলের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে স্যালফোর্ড সিটি ক্লাব কেনার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন তিনি। ২০১৯ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মালিকানায় অংশ নেন এবং ২০২৫ সালের মে মাসে গ্যারি নেভিলের সঙ্গে একটি কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্ব দেন, যা ক্লাবের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয়।

এছাড়া, ২০০৭ সালে এলএ গ্যালাক্সিতে যোগ দেওয়ার সময় চুক্তিতে থাকা বিশেষ শর্তের ফলে তিনি এমএলএস-এ নতুন দল তৈরির সুযোগ পান মাত্র ২৫ মিলিয়ন ডলারে। ২০১৪ সালে তিনি মায়ামিতে দল আনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং ২০২০ সালে ইন্টার মায়ামি এমএলএসে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ফোর্বসের মতে, ক্লাবটির মূল্য ১.২ বিলিয়ন ডলার।

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।