ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ আশ্বিন ১৪৩২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৭

ফুটবল

ফিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, আলোড়ন তুলেছিল ‘কমরেড’ ম্যারাডোনার ইউনিয়ন

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১৬, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫
ফিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, আলোড়ন তুলেছিল ‘কমরেড’ ম্যারাডোনার ইউনিয়ন সংগৃহীত ছবি

১৯৯৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। ব্যক্তিগত লড়াইয়ের মাঝেই বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা।

 

প্যারিসের মেরিডিয়ান হোটেলে ফরাসি তারকা এরিক ক্যান্টোনা সহ আরও ১৩ জন বিশ্বমানের ফুটবলারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গঠন করেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব প্রফেশনাল ফুটবলার্স (এআইএফপি)। উদ্দেশ্য ছিল—ফিফার একচেটিয়া কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো এবং খেলোয়াড়দের অধিকার রক্ষা।

ম্যারাডোনার এই উদ্যোগের পেছনে ছিল দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ। ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে দুপুরে ম্যাচ আয়োজন নিয়ে আপত্তি, ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ডোপিং কেলেঙ্কারিতে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা—সবকিছু মিলিয়ে ফিফার সঙ্গে তার সম্পর্ক তখন উত্তপ্ত। প্যারিসে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘ফুটবলে যা কিছু হয়, খেলোয়াড়দের মতামতও থাকতে হবে। কথা না শুনলে আমরা পদক্ষেপ নেব। ’

ম্যারাডোনার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এরিক ক্যান্টোনা, লরেন্ট ব্ল্যাঙ্ক, জানলুকা ভিয়াল্লি, সিরো ফেরারা, জিয়ানফ্রাঙ্কো জোলা, ব্রাজিলের রাই, লাইবেরিয়ার জর্জ ওয়েয়াহ, ঘানার আবেদি পেলে, সুইডেনের টমাস ব্রোলিন, বেলজিয়ামের মিশেল প্রুডহোম, মরক্কোর মোহাম্মদ চাউচ, পর্তুগালের নেনো এবং জার্মানির মাইকেল রুমেনিগের মতো ফুটবলা মহাতারকারা। দূর থেকে সমর্থন দিয়েছিলেন এনজো ফ্রান্সেসকোলি, বেবেতো ও হোর্হে ভালদানো।
সেদিন ক্যান্টোনা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘আমরা ফ্রান্সে অফিস করব না, রাস্তার ধারে ট্রলিতে দোকান বসাবো। ’

প্রথম বছর আলোড়ন তুললেও পরে সংগঠনটি ধীরে ধীরে প্রভাব হারায়। ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় বৈঠকে ম্যারাডোনা ছিলেন না। তবে ১৯৯৭ সালে বার্সেলোনায় ফেরেন এবং বসম্যান রুলের প্রবর্তক জ্যঁ মার্ক বসম্যানের জন্য তহবিল সংগ্রহে এক প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করেন। কিন্তু ২৭ এপ্রিল বার্সেলোনার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে হওয়া সেই ম্যাচে মাত্র ২ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকেন। ফিফার চাপ, প্রচারহীনতা এবং তৃণমূল পর্যায়ে সংযোগের অভাব সংগঠনটির কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়।

পরে ফিফপ্রো (FIFPRO) বিশ্বব্যাপী ৭১ দেশে ৬৫ হাজারের বেশি খেলোয়াড়ের অধিকার রক্ষায় সক্রিয় হয়। আর ম্যারাডোনার গড়া এআইএফপি অল্প সময়েই বিলীন হয়ে যায়। তবু এটি ইতিহাসে অমর হয়ে আছে ম্যারাডোনার বিদ্রোহী চরিত্রের প্রমাণ হিসেবে। তিনি হয়তো সফল হননি, কিন্তু দেখিয়ে গেছেন—খেলোয়াড়দের অধিকার নিয়ে কথা বলার সাহস কাকে বলে।

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।