ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

গোলরক্ষকের বিশ্বকাপে গোল উৎসব

হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৪
গোলরক্ষকের বিশ্বকাপে গোল উৎসব

ঢাকা: ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে চলমান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই একদিকে যেমন গোলরক্ষকের, তেমনি গোল উৎসবেরও। শুনতে বিপরীত লাগলেও ফুটবল বিশ্বকাপের ২০তম আসরে সেটিই ঘটছে।

একদিকে বইছে গোলের বন্যা, অপরদিকে গোলবারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ‘প্রহরীরা’ অনেক ‘নিশ্চিত’ গোল ফিরিয়ে দিচ্ছেন অসাধারণ দক্ষতায়।

এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৫৬ ম্যাচে মোট ১৫৪টি গোল হয়েছে। গোলের এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপের ১৭১ গোলের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ডও গড়তে পারে ব্রাজিল বিশ্বকাপ।

আর গোল সেভ? সেটাও পৌঁছে গেছে বিস্ময়কর রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে। ৫৬টি ম্যাচে এখন পর্যন্ত ‘হতে যাওয়া গোল’ বারের আশপাশ থেকে গোলরক্ষকরা ফিরিয়ে দিয়েছেন ৬৪৮ বার!

পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, নকআউট পর্বে নেদারল্যান্ডস-মেক্সিকো, জার্মানি-আলজেরিয়া ও বেলজিয়াম-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচে সর্বাধিক তিনটি করে গোল হয়। এছাড়া দু’টি ম্যাচের মীমাংসা হয় পেনাল্টি শটে। অবশিষ্ট তিনটির ভাগ্য নির্ধারণ হয় অতিরিক্ত সময়ে। এ পর্বে গোল আসে ১৮টি। এর আগে, গ্রুপ পর্বে মোট গোল হয় ১৩৬টি।

এবারের বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলের ম্যাচ ছিল ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ডের মধ্যকার গ্রুপ পর্বের, ওই ম্যাচে গোল হয় সর্বোচ্চ ৭টি। এছাড়া, ১৩ জুন স্পেন-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে গোল হয় ৬টি। ২২ জুন দক্ষিণ কোরিয়া-আলজেরিয়া ম্যাচেও হয় ৬ গোল। ২৩ জুন ব্রাজিল-ক্যামেরুন, ২৪ জুন জাপান-কলম্বিয়া, ২৫ জুন আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া এবং ১৮ জুন অস্ট্রেলিয়া-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে গোল হয় ৫টি করে।

এবারের বিশ্বকাপে নকআউট পর্ব পর্যন্ত গোল হয়েছে ১৫৪টি। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে মোট গোলসংখ্যা ছিল ১৭১। অতএব বোঝাই যাচ্ছে, গোল উদযাপনের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে কোনো আসরের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও হয়ে যেতে পারে এবার। ৮টি ম্যাচে সে রেকর্ড ভাঙতে প্রয়োজন মাত্র ১৮টি গোল।

গোল উৎসবে ব্যক্তিগত অর্জনের পাল্লা ভারী করেছেন কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেজ (৫ গোল), আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, ব্রাজিলের নেইমার ও জার্মানির থমাস মুলার (৪ গোল), ফ্রান্সের করিম বেনজেমা (৩টি) প্রমুখ।

পরিসংখ্যান এমন গোল উৎসব উদযাপনের চিত্র দেখালেও এর চেয়েও বিস্ময়করভাবে উজ্জ্বল গোল সেভের চিত্র।

এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ ৫৪ ম্যাচে গোল সেভ হয়েছে ৬৪৮টি, গড়ে ১২টি করে!



এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক টিম হাওয়ার্ড বেলজিয়ামের বিপক্ষে নকআউট পর্বের লড়াইয়েই আটকে দিয়েছেন ১৫টি গোল, যেটা সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ডও বটে। বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচ খেলা হাওয়ার্ড ৮২.৪ শতাংশ গড়ে গোল সেভ করেছেন মোট ২৮টি।



আর মেক্সিকান গোলরক্ষক গুইলার্মো ওচোয়া তো রীতিমত মহাকাব্য রচনা করেছেন এবারের বিশ্বকাপে। মূলত গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের বিপক্ষে ওচোয়ার দেওয়াল হয়ে যাওয়ার পর থেকেই গোলরক্ষকরা ‘বিপ্লবী’ হয়ে ওঠেন।

ওই ম্যাচে ৬টি ‘নিশ্চিত’ গোল ফিরিয়ে দিয়েছেন ওচোয়া। খেলায় ব্রাজিলের ১৪টি গোলপোস্টমুখী শটের মধ্যে ৮টিই অনশট হয়, কিন্তু প্রত্যেকবারই ওচোয়া দেওয়ালের কাছে হতাশ হতে হয় নেইমার-অস্কার-ফ্রেডদের। বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচ খেলা ওচোয়া ৭৬.৯ শতাংশ গড়ে গোল সেভ করেছেন ১০টি।



নকআউটে জার্মানদের বিপক্ষে দারুণ লড়াই করে আলজেরিয়ানরা। তবে গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নেউয়ারের (জার্মানি) দুর্দান্ত কিছু সেভে বড় বাঁচা বেঁচে যায় জার্মানি। বিশ্বকাপে ৪টি ম্যাচ খেলা নেউয়ার ৮১.৩ শতাংশ গড়ে গোল সেভ করেছেন ১৩টি।



বিশ্বকাপের নকআউটে ফ্রান্সের সঙ্গে দুর্দান্ত খেলে বিদায় নিয়েছে আফ্রিকান সুপার ঈগল নাইজেরিয়া। দলটি বিদায় নিলেও গোলরক্ষক ভিনসেন্ট এনিয়েমার কীর্তিতে শেষ পর্যন্ত লড়েছিল শিরোপার দাবিদার ফরাসিদের সঙ্গে। বিশ্বকাপে নকআউট পর্যন্ত খেলা এনিয়েমো ৮০.৮ শতাংশ গড়ে গোল সেভ করেছেন ২১টি।



এবারের বিশ্বকাপের বিস্ময় কোস্টারিকা। কাগজে-কলমে অন্য দলগুলোর চেয়ে দুর্বল দলটি বিশ্বকাপে যে শক্তিতে টিকে আছে তন্মধ্যে অন্যতম গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। গোল কম দিতে পারলেও কোস্টারিকানরা গোলবঞ্চিত রাখছে প্রতিপক্ষকে, যে কারণে ম্যাচ শেষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারছে তারা। কেইলর ৪ ম্যাচ খেলে ৮৭.৫ শতাংশ গড়ে গোল সেভ করেছেন ১৪টি। গড়ে গোল সেভে এগিয়ে এখন পর্যন্ত নাভাসই।



আর বিশ্বকাপের বিংশ আসরের নায়কদের সারিতে উজ্জ্বল স্বাগতিক ব্রাজিলের হুলিও সিজার। গত বিশ্বকাপেই গোলরক্ষণে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় খলনায়ক ছিলেন তিনি, আর এবার! নকআউটে চিলির বিপক্ষে উতরে যাওয়া ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতলে তার কীর্তি অবশ্যই সিজারকে দিতে হবে। কারণ, ওই ম্যাচ অতিরিক্ত সময় পর্যন্তও ১-১ গোলে মীমাংসা না হলে খেলা টাইব্রেকারে গড়া। আর টাইব্রেকারে ২টি গোলই ফিরিয়ে দিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ‘সেনাপতি’ সিজার। ৪ ম্যাচ খেলা ব্রাজিলিয়ান ‘প্রহরী’ ৬৬.৭ শতাংশ গড়ে গোল সেভ করেছেন ৬টি।

প্রায় সমান কীর্তিতে উজ্জ্বল অন্য দলগুলোর গোলরক্ষকরাও। গোল উৎসবের এ বিশ্বকাপে গোলরক্ষকরা নিজেদের আর কী কী কীর্তি রচনা করেন সেটা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে বিশ্বকাপের শেষ পর্যন্তই।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।