ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতলো রিয়াল

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৬
চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতলো রিয়াল

ঢাকা: এক দলের সামনে ছিল প্রতিশোধ নেওয়ার হাতছানি! আরেক দল অপেক্ষায় ছিল আরেকটি শিরোপা উল্লাসে মেতে উঠার। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল শেষে দ্বিতীয় দলটিই তাদের লক্ষ্য পূরণ করেছে।

অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে তাদেরই নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রোনালদো বাহিনী।

শনিবার (২৮ মে) মিলানের সান সিরো স্টেডিয়ামে ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি শুরু হয় বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত পৌনে একটায়। স্নায়ুক্ষয়ী, রুদ্ধশ্বাস ও উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নামে দুই নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ। তিন মৌসুমের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল রূপ নিয়েছিল ‘মাদ্রিদ ডার্বি’ ম্যাচে!

ইউরোপিয়ান ক্লাব প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে রিয়াল। নির্ধারিত সময়ের খেলায় রিয়ালের হয়ে গোল করেন দলপতি সার্জিও রামোস। আর অ্যাতলেতিকোর হয়ে গোল করেন ক্যারাসকো। অতিরিক্ত সময়ে গোল না হলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর তাতে ৫-৩ গোলের ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগের ১১তম শিরোপা জেতে রিয়াল।

জিনেদিন জিদান কী পারবেন খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে রিয়ালকে শিরোপা এনে দিতে? নাকি দিয়েগো সিমিওন নিজেকে আরো অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন? সব প্রশ্নের উত্তর মেলানোর অপেক্ষায় ছিল সান সিরোর ফাইনালটি।

এর আগে পর্তুগালের লিসবনে ২০১৪ সালে অ্যাতলেতিকোকে হারিয়েই গ্যালাকটিকোদের বহুল প্রতীক্ষিত ‘লা ডেসিমা’র (দশম চ্যাম্পিয়নস লিগ) অপেক্ষার অবসান ঘটে। এবার জিদানের রিয়ালের সামনে ছিল ১১তম ইউরোপিয়ান কাপ উঁচিয়ে ধরার চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে, নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের মিশন নিয়ে মাঠে নামে দিয়েগো সিমিওনের অ্যাতলেতিকো।

১৪ বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলতে নেমে রিয়াল ম্যাচের শুরুতেই আক্রমণে যায়। রেকর্ড ১০ বার শিরোপা ঘরে তোলা স্প্যানিশ জায়ান্টরা খেলার ষষ্ঠ মিনিটে গোলের দেখা পেতে পেতেও পায়নি। গ্যারেথ বেলের লো-ক্রসে অ্যাতলেতিকোর ডি-বক্সে বল পান ক্যাসেমিরো। পা ছোঁয়াতেই বল দিক পরিবর্তন করে জালের ঠিকানা খুঁজে নিতে চাইলেও প্রস্তুত ছিলেন অ্যাতলেতিকোর গোলরক্ষক ওব্লাক। রিয়ালের নিশ্চিত গোলটি প্রতিহত করেন তিনি।

ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় ওব্লাককে ফাঁকি দেন রিয়াল দলপতি সার্জিও রামোস। ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা বলে অ্যাতলেতিকোর ডি-বক্সে লাফিয়ে হেড করেন বেল। সেখান থেকে বল গিয়ে পড়ে রামোসের সামনে। প্রতিপক্ষোর জালে বল জড়াতে ভুল করেননি রামোস।

এর আগে পর্তুগালের লিসবনে ২০১৪ আসরের ফাইনালে প্রথমার্ধের ৩৬ মিনিটে অ্যাতলেতিকোর তারকা দিয়েগো গোদিনের গোলটিই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারক হতে পারতো। কিন্তু, অন্তিম মুহূর্তে রিয়ালকে উদ্ধার করেন সার্জিও রামোস। ইনজুরি সময়ের শেষ মিনিটে স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের নাটকীয় গোলেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। পরে অতিরিক্ত সময়ে গ্যারেথ বেল, মার্সেলো ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোলে লা ডেসিমা জয়ের উল্লাসে ফেটে পড়ে লস ব্লাঙ্কসরা। এবারের ফাইনালে সেই রামোসের গোলেই লিড নেয় রিয়াল (১-০)। ২০১৪’র ফাইনালের পর চ্যাম্পিয়নস লিগের আসরে এটাই ছিল তার প্রথম গোল। আর  একজন ডিফেন্ডার হিসেবে তিনিই প্রথম এই টুর্নামেন্টের দুই ফাইনালে গোলের দেখা পেলেন।

তৃতীয়বারের মতো (১৯৭৪, ২০১৪, ২০১৬) চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে নামা অ্যাতলেতিকো গোল হজমের পর থমকে দাঁড়ায়নি। ম্যাচে ফিরতে মরিয়া চেষ্টা চালায় সিমিওন শিষ্যরা। ২৫ মিনিটের হুয়ানফ্রানের দূরপাল্লার শটটি রিয়ালের গোলবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়।

খেলার প্রথম ৩০ মিনিটে রিয়ালের রোনালদো-বেনজেমা আর অ্যাতলেতিকোর গ্রিজম্যান-তোরেসের মতো দলের সেরা অস্ত্রদের কিছুটা নিষ্প্রভই থাকতে দেখা যায়। ৩৫ মিনিটের মাথায় গ্রিজম্যানের দুর্দান্ত গতির শট ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন রিয়ালের গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। ৪৩ মিনিটেও গ্রিজম্যানের দূরপাল্লার শটটি রিয়ালের গোলবারের খানিকটা পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে দলপতি রামোসের দেয়া একমাত্র গোলটি নিয়ে বিশ্রামে যায় রিয়াল।

বিরতির পর খুব দ্রুতই ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায় অ্যাতলেতিকো। নিজেদের ডি-বক্সে তোরেসকে পেছন থেকে পর্তুগিজ তারকা পেপে ফেলে দিলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন গ্রিজম্যান। তার শটটি গিয়ে গোলবারে লেগে ফিরে আসে।

পরের ২০ মিনিট অ্যাতলেতিকোর আক্রমণের ধার বেড়ে গেলেও সমতায় ফেরা হয়নি। দুই দলের মাঝমাঠের লড়াইয়েও ৫০ মিনিটের পর থেকে ৭০ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল অ্যাতলেতিকো। তবে, কাজের কাজটি করতে পারেনি সিমিওন শিষ্যরা। অবশেষে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে অ্যাতলেতিকো। হুয়ানফ্রানের বাড়ানো বলে ছুটে এসে শট নেন ক্যারাসকো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বদলি হিসেবে নামা এই বেলজিয়ান তারকার গোলে ম্যাচে ফেরে অ্যাতলেতিকো (১-১)।

নির্ধারিত ৯০ মিনিটে আর কোনো গোল না হলে ১-১ গোলের সমতায় থাকা দুই দলের ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। তাতেও কোনো গোলের দেখা পায়নি জিদান-সিমিওন শিষ্যরা। ফলে, দুই দলের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারে রিয়ালের প্রথম শট থেকে গোল করেন ভাজকুয়েজ। অ্যাতলেতিকোর হয়ে গ্রিজম্যান গোল করলে ১-১ সমতা থাকে। রিয়ালের দ্বিতীয় শটে গোল করেন মার্সেলো (২-১)। অ্যাতলেতিকোর দ্বিতীয় শটে গোল করেন গ্যাবি (২-২)। তৃতীয় শটে রিয়ালকে এগিয়ে নেন বেল (৩-২)। অপরদিকে, সাউলের গোলে সমতায় ফেরে অ্যাতলেতিকো (৩-৩)। রিয়ালের চতুর্থ শটে সার্জিও রামোস জালে বল পাঠালে ৪-৩ এ লিড নেয় জিদান শিষ্যরা। অ্যাতলেতিকোর চতুর্থ শটে গোল করতে ব্যর্থ হন হুয়ানফ্রান (৪-৩)। রিয়ালের হয়ে পঞ্চম শটে গোল করেন রোনালদো (৫-৩)।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪০ ঘণ্টা, ২৯ মে ২০১৬
এমআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।