শেখ কামাল গোল্ড কাপের সাফল্যের পর থেমে থাকেননি তরফদার রুহুল আমিন। শুধু কি ফুটবল।
তরফদার রুহুল আমিন দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ার-টেকের কর্ণধার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনালের অপারেশনাল কাজ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ৬৫ শতাংশ হ্যান্ডল করে সাইফ পাওয়ারটেক। কনটেইনার হ্যান্ডলিং ছাড়াও তাদের অনেক পণ্য আছে।
ক্রীড়াঙ্গনে তরফদার রুহুল আমিনের উদ্ভব মূলত মুলত চট্টগ্রাম আবাহনীর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে দিয়েই। ফুটবলের জনপ্রিয়তা যখন একেবারে তলানিতে, তখন তিনি সাহস দেখিয়েছেন বিশাল বিনিয়োগে আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবল আয়োজনের।
তরফদার রুহুল আমিন বলেছেন, ‘সাইফ পাওয়ার-টেক পাবলিক লিস্টিং কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিজ্ঞাপন বাবদ অনেক টাকাই খরচ হয় প্রতিবছর। আমাদের বিজ্ঞাপনের নতুন রূপ হলো শেখ কামাল গোল্ড কাপ টুর্নামেন্টের স্পন্সরশিপ। ’
শুধু এই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করেই থেমে থাকেননি তিনি, শক্ত দল গঠন করে প্রথম আসরে নিজের দল চট্টগ্রাম আবাহনীকে টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতিয়েছিলেন তিনি। যে টুর্নামেন্টে খেলেছে বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি বড় বড় ফুটবল ক্লাব।
শেখ কামাল গোল্ড কাপের সফল আয়োজনের পরেই বাংলাদেশের ফুটবলের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে নতুন ভাবনার জন্ম দেন তরফদার রুহুল আমিন। তিনি অভিজ্ঞতা থেকে বুঝে যান খালি মাঠে দর্শক ফেরাতে হলে দরকার ভিন্নরকম আয়োজন। সেই চিন্তা থেকেই ভারতের আদলে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন তিনি।
বাংলাদেশ সুপার লীগ (বিসিএল) নামে এই ভাবনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যেখানে দেশিয় ফুটবলারদের সাথে বিশ্বের নামকরা ফুটবলার যারা সদ্যই অবসরে গেছেন তাদের এনে খেলানোর কথা ছিল এই উদ্যোগে। কিন্তু ভাবনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে এই পরিকল্পনা, নানান জটিলতায় বিসিএল বাস্তবতার মুখ দেখে নি এখনও ।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল চালুর ক্ষেত্রে তরফদার রুহুল আমিনের পরিকল্পনা ছিল দলগুলোর একটি করে ফুটবল একাডেমি থাকা। সেটি হলে অদূর ভবিষ্যতে মানসম্মত ফুটবলার বেরিয়ে আসতো সেসব একাডেমি থেকে।
এদিকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার লক্ষ্য নিয়ে ফুটবলে দল গঠন করেছিল সাইফ পাওয়ার লিমিটেড। ফুটবলে নবাগত এ দল অংশ নিয়েছিল পেশাদার ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে। সেখান থেকেই চলতি বছর দলটি উঠে এসেছে পেশাদার ফুটবল লীগে। আর প্রথম বছরেই বাংলাদেশের ফুতবলেরর অন্যতম শক্তিশালি দল গঠন করে চমক দেখিয়েছে নবাগত সাইফ । এবারের মৌসুমে দলবদলে সবচেয়ে বড় বাজেটের অর্থাৎ প্রায় আট কোটি টাকার বাজেটের দল গড়েছে সাইফ। দলে ভিড়িয়েছেন তপু বর্মণ, জুয়েল রানা, হেমন্ত ভিনসেন্ট, আরিফুল ইসলাম ও জামাল ভূঁইয়ার মতো দেশের শীর্ষ তারকাদের। এনেছেন ইংলিশ কোচ কিম গ্রান্টকে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এবারই প্রথম খেলোয়াড়দের সঙ্গে চার বছরের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছে এই ক্লাব।
তরফদার রুহুল আমিনের ভাবনা সূদরপ্রসারি। তিনি নিজের দল সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবকে তিনি দেখতে চান এশিয়ার সেরা ক্লাবের কাতারে। সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছেন তিনি।
তরফদার রুহুল আমিনের মস্তিষ্কজুড়ে যেন দেশের ফুটবলের উন্নতি। তিনি একাধারে কোন ক্লাব কমিটির চেয়ারম্যান। আবার সেই ক্লাবের পক্ষে থেকে আয়োজন করছেন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট । আবার গঠন করছেন নতুন ক্লাব । সঙ্গে পেশাদার লীগের স্পন্সর তো তার নিজের প্রতিষ্ঠানই।
বর্তমানে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের স্পন্সর স্বত্ব কিনে নিয়েছে রুহুল আমিনের সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস লিমিটেড (এসজিএস)। গত বছর ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ এই আসরের স্পন্সরশিপ স্বত্ব আগামী ৫ বছরের জন্য ২০ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছে সাইফ গ্লোবাল। বিপিএলের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ স্পন্সরশিপ মানি। সাইফ পাওয়ারটেক বর্তমানে ঘরোয়া ফুটবলের সব ক্ষেত্রে এককভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
ফুটবলের উন্নতি করতে হলে দরকার সাংগঠনিক পদও। শক্তিশালি পরিকল্পনা আর সাংগঠনিক ক্ষমতা বিচারে অনেকেই ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ফুটবলের অভিভাবক হিসেবেবে ভেবে ফেলেছেন তাকে। শোনা যাচ্ছে, বাফুফের আগামী নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হতে পারেন তরফদার রুহুল আমিন।
সম্প্রতি এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
‘ইচ্ছে থাকলে নির্বাচিত না হয়েও কাজ করা যায়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাইরে অবস্থান করে কাজ করার সুযোগ তেমন থাকে না। পৃষ্ঠপোষকতা করার পরও পরিকল্পনার অভাব থাকে। তদারকির অভাব থাকে। সেখানে বাইরে থেকে কিছুই বলা যায় না। আমি এশিয়ার ফুটবলে বাংলাদেশকে সেরা অবস্থানে দেখতে চাই। ’
শুধু ফুটবল নয়, খেলাধুলার অন্যান্য ক্ষেত্রেও তরফদার রুহুল আমিনের সাইফ পাওয়ার এগিয়ে আসছে পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে । জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে এখন স্পন্সর সাইফ পাওয়ার-টেক। সাইফ স্পোর্টিং নিজেরাও অংশ নিচ্ছে জাতীয় দাবায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওয়ালটন প্রিমিয়ার ডিভিশন দাবা লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব।
তরফদার রুহুল আমিন বিশ্বাস করেন নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় এগোতে পারলে বাংলাদেশের পক্ষে ২০৩০ বা ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপেও খেলা সম্ভব । কারণ বাংলাদেশে ফুটবল প্রতিভার কোন অভাব নেই। কেবল পরিকল্পনার ঘাটতি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
টিএইচ/টিসি