পাবনা: ঠাণ্ডা জনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে আবারো স্বাভাবিকের চাইতে চারগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে পাবনা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে। ফলে গত কয়েক দিনে শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে তিল ধারণের জায়গাও মিলছে না রোগী ও স্বজনদের।
রোগীর চাপ বাড়ায় বারান্দার মেঝেতে বিছানা পেতে এই কনকনে শীতের মধ্যে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে শিশু রোগীদেরও। দিনের বেলায় এক রকম হলেও রাতে চিত্রটা আরও ভয়াবহ। শিশু ওয়ার্ডের তিনটি কক্ষে বর্তমানে প্রায় দুই শতাধিক এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ডে অর্ধশত রোগী ও তাদের স্বনজনরা অবস্থান করছেন। উপরে ও নিচে কোথাও তিল ধারনের জায়গা নেই সেখানে। তবে দীর্ঘদিনে এই সমস্যা সমাধানের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কম আলোতে হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে কাঁথা ও কম্বল মুড়ি সদিয়ে শুয়ে ও বসে আছেন অনেকেই। কেমন আছেন জানতে চাইলে অভিযোগের যেন বস্তা খুলে ধরেন রোগীর স্বজনরা। সরকারি হাসপাতালে সুচিকিৎসার জন্য আসলেও মিলছে না কাঙ্খিত সেবা। একদিকে শয্যা সংকট, অপারদিকে ওষুধ সংকট। ভর্তি হওয়া বেশিরভাগ রোগীকে ব্যবস্থাপত্র অনুসারে ওষুধসহ কলেরা স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে বাহির থেকে।
দিনের প্রথমদিকে একজন চিকিৎসক রোগী দেখতে আসলেও রাতের বেলাতে আর মিলছেনা না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ইন্টার্ন চিকিৎসক দিয়ে কোনরকমে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে সেবা কার্যক্রম। শুধু ওষুধ আর চিকিৎসক সংকট নয়, রয়েছে রাত্রিকালীন সেবিকা সংকটও। এতো বেশি শিশু রোগী সামলাতে স্বল্প সংখ্যক সেবিকাদের বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। এক বেডে তিন থেকে চারজন করে শিশু রোগীর অবস্থান। কক্ষের ভেতরের মেঝেতে স্থান না পেয়ে বারান্দার মেঝেতে বিছানা পেতেও চিকিৎসা নিচ্ছে শিশু ও বয়স্ক রোগীরা। অসহায় সাধারণ মানুষ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তবুও গণমাধ্যম কর্মীদের দেখে তারা নানা ধরনের অবস্থাপনার কথা তুলে ধরেন।
ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর স্বজনদের অভিযোগ- এমন বাজে অবস্থার দেখা সম্ভবত আর কোনো হাসপাতালে মিলবে না। চিকিৎসক, সেবিকা, ওষুধ সব কিছুরই সংকট রয়েছে। রাতে বিপদগ্রস্ত রোগী যারা সেবা নিতে আসছেন, তারা আরও বেশি বিপদে পরছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিসক বা নিয়মিত চিৎিসক পাওয়া যায় না। বহিঃবিভাগ থেকে শুরু করে অভ্যন্তরে ওয়ার্ডগুলোতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষ এই সময়ে কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছে। আবার পরেদিন সকালে ডাক্তার আসার আগে হাসপাতালে আসছেন। সমস্যা সমাধের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সেবিকারা বলেন, সংখ্যায় কম হওয়ায় দায়িত্ব পালনে হিমসিম খেতে হচ্ছে আমাদের। কলেরা রোগীদের জন্য খাবার ও পুশিং স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। সেবিকা সংখ্যা বাড়লে সেবা দিতে আরও সুবিধা হতো। হাসপাতাল থেকে যতটুকু ওষুধ দিচ্ছে আমরা সেটি দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিসক ডা. মিলন মাহামুদ বলেন, ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর এই সময়ে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু রোগী বাড়ছে।
তিনি বলেন, আমরা সিনিয়র চিকিসকদের পরামর্শক্রমে নিয়ম ও গাউড লাইন অনুসরণ করে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। এই সময়ে অভিভাবকরা তাদের শিশুদের ঠাণ্ডা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবেন। গরম কামড় পরতে হবে, ধুলা ময়লা থেকে দূরে থাকতে হবে।
হাসপাতালের এমন গাদাগাদি রোগীর অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই এখানে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন সবাই। একসঙ্গে বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা গাদাগাদি করে ভর্তি থাকলে শিশুরা নানা ধরনের ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে। পরিষস্কার-পচ্ছিন্নতা মেনে সেবা দেওয়া বা নেওয়া কোনটাই সম্ভব হচ্ছে না হাসপাতালে। কক্ষ সংকট ও রোগীর সংখ্যা বাড়ায় কোনো নিয়ম অনুসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পাবনা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৩৮টি শয্যার বিপরীতে বর্তমানে ২৪০ জন আর ১৫ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ড ৬৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে, আবার অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। তবে হঠাৎ করে শীতের প্রকোপ বাড়ায় ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা সবচাইতে বেশি। বিগত বছরের তুলনায় এ বছরে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ যে হারে বেড়েছে সেই তুলনায় সেবার মান বাড়েনি। ফলে শীতের এই সময়ে বিশেষ এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৩
এমএমজেড