ঢাকা, বুধবার, ৩ পৌষ ১৪৩১, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকার প্রয়োজন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪
স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকার প্রয়োজন

ঢাকা: নাগরিক-কেন্দ্রিক স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে মানসম্মত সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকার প্রয়োজন বলে একটি সংলাপ থেকে বক্তারা বলেছেন।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) মহাখালি ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ (ইউএইচসি) ফোরাম ও ব্র্যাক যৌথভাবে আয়োজিত ‘রিফর্ম পাথওয়েজ ফর হেলথ সেক্টর’ শীর্ষক নীতিনির্ধারণী সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।

আলোচনায় নীতিনির্ধারক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, উন্নয়ন সহযোগী এবং ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা দেশের স্বাস্থ্যখাতের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করেন এবং বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার পরিকল্পনাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

সংলাপে বক্তারা বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখেতে হবে এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবীমা চালু করা প্রয়োজন। পাশাপাশি মাধ্যমিক ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সরকারি হাসপাতালগুলোকে আর্থিক স্বায়ত্তশাসন দেওয়া প্রয়োজন যাতে তারা জনবল ও বেতন-ভাতাসহ সব বিষয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে। নিজস্ব তহবিল থেকে চিকিৎসা খরচ জোগানো সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি কমিয়ে আনার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বাস্থ্যখাতের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য এনজিও, বেসরকারি সংস্থা এবং সামাজিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে একই ছাতার নিচে সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন। সর্বোপরি সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সংলাপে ইউএইচসি ফোরামের আহ্বায়ক এবং ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এবং সমাপনী অধিবেশনে আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।

প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিক্সের অধ্যাপক ও স্বাস্থ্য সংস্কার জোটের আহ্বায়ক ড. সৈয়দ এ হামিদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. লিয়াকত আলী, ডা. নায়লা জেড খান এবং ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচি এবং মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যখাতে এনজিও এবং বেসরকারি সংস্থার মূল্যবান অবদানগুলোর স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে হবে যাতে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারি। একে অপরকে দোষারোপ না করে সমন্বিত পদক্ষেপে মনোনিবেশ করা জরুরি। একসঙ্গে কাজ করে আমরা আমাদের অভিন্ন লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারব।

চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী বলেন, দারিদ্র্য কমানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জলবায়ু সহনশীলতার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যখাত ভূমিকা রাখতে পারে। পরিবর্তনের এ সময়ে আমাদের আরও সাহসী সংস্কারের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বা ‘বড় চিন্তা’ করতে হবে।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যসেবাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রাধিকারমূলক খাত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সেবা গ্রহণে প্রবেশাধিকার, সেবাপ্রদানের গুণগত মান, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এবং রোগ প্রতিরোধমূলক প্রচার ও প্রসার। রোগী-কেন্দ্রিক মানসম্মত সেবাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং একই সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়ন, মানবসম্পদ এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যখাতকে শক্তিশালী করতে হবে।

অধ্যাপক ড. সৈয়দ এ. হামিদ বলেন, সবার জন্য স্বাস্থ্য বীমা নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে ভর্তুকি ছাড়াও প্রিমিয়াম সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার এবং অর্থ বরাদ্দের নিয়মে পরিবর্তন আনতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশে অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্যের কারণে ভোগান্তি রয়েছে। এটি সমাধানের জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাকে (ইউএইচসি) অগ্রাধিকার দিতে হবে।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, মানুষ স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে একটি পরিষ্কার পথনির্দেশনা আশা করছে, যেখানে লিঙ্গ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমতা নিশ্চিত হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার কাঠামো ও সেবাপদ্ধতির সংস্কার এবং সমন্বয় অপরিহার্য। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বাজেট বাড়াতে হবে।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. নায়লা জেড খান বলেন, আমাদের রোগ-কেন্দ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে সরে এসে নাগরিক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে, যেখানে মানুষের শক্তিগুলোকে মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে, দুর্বলতাগুলো নয়।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম বলেন, একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য সামাজিক অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বাংলাদেশে এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। সেবা প্রদান, নীতিনির্ধারণ থেকে পর্যবেক্ষণ বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা আরও বলেন, অর্থবহ সংস্কারের জন্য শুধু একটি সংস্কার কমিশন গঠনই যথেষ্ট নয়, মৌলিক পরিবর্তনের জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণে নতুনভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪
আরকেআর/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।