রংপুর : রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে প্রতিনিয়ত ওষুধ চুরি ঘটনা ঘটছে। এই চুরির ঘটনায় হাসপাতালের এক শ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন থেকে ওষুধ চুরি করলেও তারা রয়েছে বহাল তবিয়দে। জড়িতরা একাধিকবার গ্রেফতার হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন।
হাসপাতাল থেকে মূল্যবান এন্টিবায়েটিক স্যালাইন সেপ্রোক্সি আইভি, মেট্রো আইভি, ইনজেকশন, সিরিঞ্জ, গজসহ বিভিন্ন প্রকার ওষুধ প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে।
গত ২ বছরে হাসপাতালের সিলসম্বলিত এবং সিলছাড়া দেড় কোটিরও বেশি টাকার ওষুধ চুরি করে বাইরে বিক্রি করা হয়েছে।
স্টোর সাব-ইনচার্জ এর মাধ্যমে চক্রটি ওষুধ চুরির বাণিজ্য করছে বলে গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে।
এদিকে চোর সিন্ডিকেটটি মূল দামের অর্ধেক দামে ওষুধগুলো কিনে নিচ্ছে। এর মধ্যে সিল দেয়া ওষুধ গ্রামে এবং সিল ছাড়া ওষুধ হাসপাতালের আশেপাশের এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের স্টোরের এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে হেমোডায়ালোসিস ওয়ার্ডের একজন সিনিয়র নার্সসহ হাসপাতালের ভেতরে এবং বাইরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই চুরির সঙ্গে জড়িত। মোহাম্মদ আব্দুর রহিম নামের এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধায়নে এই চক্রটি কাজ করে। এছাড়া এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত আছে হাসপাতালের বাইরের এক শ্রেণীর ঔষুধ দোকানদার এবং হাসপাতালে যাতায়াতকারী বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
এছাড়া সিন্ডিকেটটির তত্ত্বাবধায়নে চুরি করা ওষুধ হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়, ওয়ার্ড মাস্টার, সুইপার, নার্সসহ বিভিন্ন শ্রেণীর র্কমচারীরা কখনও নিজেরাই বিক্রি করছে আবার কখনও সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিচ্ছেন। ফলে সরকারি ওষুধ না পেয়ে রোগীরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছেন। সামর্থবানরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনলেও নিম্ন আয়ের রোগীদের জন্য এটা সম্ভব হচ্ছে না। এতে হাসপাতালের রোগীরা চিকিৎসা সেবা পেলেও ওষুধ পাচ্ছেন না।
হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসারত রমিজ উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, সালেহা বেগমসহ অনেকে জানান, হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ দেয়া হয় না। আবার ওষুধ দিলেও হঠাৎ রাতের বেলা ওষুধ হাওয়া হয়ে যায়। ব্যান্ডেজসহ বিভিন্ন সার্জারি সামগ্রীও বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। যা অনেক রোগীর জন্য দুঃসাধ্য।
ওষুধ চুরির দায়ে গ্রেফতার ও মালামাল উদ্ধারের ঘটনা বর্তমানে খুবই নগণ্য ব্যাপার হয়ে গেছে। কেননা ওষুধ চুরির ঘটনা প্রকাশ পেলেও সেগুলো রফাদফা করে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
গত বছর গোয়েন্দা পুলিশ মেডিকেল পূর্বগেট এলাকার বিহারী পাড়ায় মোহাম্মদ আব্দুর রহিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা মূল্যের হাসপাতালের বিভিন্ন চোরাই ওষুধ উদ্ধার করে।
এসময় তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ ঘটনায় স্টোরের সাব ইনচার্জ শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে এই চোরাই ব্যবসা চালানোর কথা স্বীকার করেন রহিম। পরবর্তীতে তদন্তে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে রংপুর থেকে বদলি করা হয়। তার স্থলে এখন সাব স্টোর ইনচার্জের দ্বায়িত্ব পালন করছেন মোকছেদুর রহমান।
এর আগে হাসপাতাল ক্যাম্পাসের মডেল ফ্যামিলি প্লানিং ক্লিনিকের সামনে গাইনি বিভাগের এক কার্টুন ওষুধসহ ওয়ার্ডবয় আমিনুল আজাদকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। সিজলিস্ট করে হাসপাতালের পরিচালককে অবহিত করার পরেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এছাড়া হাসপাতালের চুরি করা স্যালাইনসহ মাস্টার রোল কর্মচারী জোসনাকে আটক করে পরিচালকের কাছে সোপর্দ করেন নগরীর ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম কিবরিয়া। পরে তিনি নিজেই বাদী হয়ে কোতয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আব্দুস ছালাম জানান, আমি অল্প সময় হলো দায়িত্ব নিয়েছি। এসেই ওষুধ চুরির ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা শুরু করেছি। আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, হাসপাতালেই চোর বেশে কিছু কর্মচারী রয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে এরা সনাক্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরোও জানান, ইতিমধ্যেই আমরা এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তারা সিন্ডিকেটকে ভাঙার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৫ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪