ঢাকা: দেশব্যাপী শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ প্লাস খাওয়ানোর ক্যাম্পেইন শনিবার শুরু হবে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেশের প্রায় ২ কোটি ২০ লাখেরও বেশি শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
এ দিনে ৬-১১ মাস বয়সী শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
একই সঙ্গে ‘শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে ঘরে তৈরি সুষম খাবার খাওয়ানোর জন্য পুষ্টি বার্তা প্রচার করা হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের তথ্যমতে, জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর হার ৯৮ শতাংশ উন্নীত করার ফলে এই ভিটামিনের অভাবজনিত রাতকানা রোগের হার শতকরা ১ ভাগের নিচে নেমে এসেছে।
একই সঙ্গে জন্মের পর পূর্ণ ৬ মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর প্রচার কার্যক্রমের ফলে শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বেড়েছে ৬৪ শতাংশে।
ক্যাম্পেইন উপলেক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানোর ফলে শিশু যে শুধুমাত্র রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা পায় তা নয়, ভিটামিন ‘এ’ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল এবং হামের জটিলতা কমায়। ফলে শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমে।
এ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে প্রায় ২৪ শতাংশ শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টিসমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি কার্যক্রমকে জনগণের দ্বারে পৌঁছে দিতে আমরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ কার্যক্রমকে সফল করতে পারলে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও সুন্দর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
তিনি বলেন, আমরা আর অপুষ্ট কোনো শিশু দেখতে চাই না। তেমনি চাই না অপুষ্টিজনিত রাতকানা রোগ কিংবা অন্ধত্ব। অন্ধত্ব একটি পরিবারের জন্য অভিশাপ তথা একটি দেশের জন্য বোঝা। বছরে ২ বার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাইয়ে আমরা শিশুদের এ অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে বহুলাংশে মুক্ত করার পাশাপাশি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারি।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ক্যাম্পেইনে একটি শিশুও যেন বাদ না পড়ে, সব শিশুই যেন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। যাদের ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশু আছে সেই সব মা-বাবা এবং অভিভাবকরা অবশ্যই তাদের শিশুদের জন্য এ সেবা গ্রহণ করবেন।
বছরে দুইবার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলে শিশুদের রাতকানা, অন্ধত্ব, অপুষ্টি ও বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায় বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক সবার সার্বিক সহযোগিতায় দেশব্যাপী ১ লাখ ২০ হাজার স্থায়ী কেন্দ্রসহ অতিরিক্ত ২০ হাজার ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, ব্রীজের টোল, বিমান বন্দর, রেল স্টেশন, খেয়াঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করবে। প্রতিটি কেন্দ্রে কমপক্ষে ৩ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালন করবেন।
তবে দুর্গম এলাকায় ভিটামিন কোনো শিশু বাদ পড়ে যায় তবে ক্যাম্পেইন পরবর্তী ৪ দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাদপড়াদের ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো হবে।
সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত কেন্দ্র খোলা থাকবে। শিশুদের ভরা পেটে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। কাঁচি দিয়ে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলের মুখ কেটে এর ভেতরে থাকা তরল ওষুধ চিপে খাওয়ানো হবে। জোর করে বা কান্নারত অবস্থায় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো যাবে না।
এই কার্যক্রমকে সফল করতে ইতোমধ্যে বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে অবহিতকরণ সভা করা হয়েছে।
ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পর্যালোচনার জন্য ক্যাম্পেইনের দিন প্রতিটি উপজেলায়, জেলায় ও কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় জন স্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপন করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৪