ঢাকা: গর্ভধারণ করার জন্য সব মেয়েদের শারীরিক একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে মাসিক। আমাদের সমাজের মানুষেরা এ প্রক্রিয়াকে সহজভাবে নেয় না।
শনিবার (২৩ মে) সকালে দৈনিক কালের কন্ঠ কার্যালয়ের কনভেনশন হলে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে সমাজের বিভিন্ন পেশার নারী প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।
যৌথভাবে কালের কণ্ঠ, ওয়াটার এইড ও এসএমসি ‘আসুন মাসিক নিয়ে কথা বলি’ বিষয়ক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন ইমদাদুল হক মিলন ও ওয়াটার এইডের পরিচালক ( প্রোগ্রাম অ্যান্ড পলিসি) হাসিন জাহান।
বৈঠকে মেয়েদের মাসিক, আলাদা টয়লেট না থাকায় যে ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে, সমস্যা থেকে উৎরানোর জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বৈঠকে মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এখন স্যানেটারি টয়লেট রয়েছে। যা ১০ বছর আগেও ছিলো না। তবে এখনো মেয়েরা সব বিষয় সহজেই সবখানে বলতে পারে না। তাদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করলে মাসিকের সময়কার বা অন্যান্য সমস্যাগুলো থেকে তারা রেহাই পেতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমাজের বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিসহ সারাদেশের গ্রামের প্রতিনিধিদেরকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনতামূলক কাজ করতে হবে। যাতে মাসিক তাদের কাছে ভয় বা লজ্জার বিষয় না হয়।
রাজধানীসহ দেশের সব অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় নারী টয়লেটের ব্যবস্থা করার জন্য সরকার ইতোমধ্যে কাজ করার পরিকল্পনা করছে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
সমস্যা সমাধানে সচেতনতার বিকল্প নেই উল্লেখ করে কালের কন্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, মাসিকের পর অসচেতনভাবে কাপড় বা ন্যাকড়া ব্যবহারের কারণে অনেক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। যা সত্যিই অকল্পনীয়। তাই এ সমস্যা সমাধানে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। যা সমাজের প্রত্যেক স্তরের মানুষের করা কাম্য।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ফাতেমা বেগম বলেন, গোলটেবিল বৈঠক করে বাংলাদেশের সবার কাছে এ ম্যাসেজগুলো পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই নাটক বা সিনেমা তৈরি করে প্রচার করলে গ্রাম পর্যায়ের কিশোরী, মেয়ে এবং মহিলারা মাসিক সম্পর্কে সচেতন হবে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর অ্যান্ড চাইল্ড ফিজিওলজিস্ট ফায়েজা আহমেদ বলেন, মায়েরাই মেয়েদের প্রথম জীবনের শিক্ষক। মায়েদেরই উচিৎ মাসিক সম্পর্কে মেয়েদের জানানো এবং সচেতন করে দেওয়া।
ব্লাস্টের অ্যাডভোকেসি অফিসার মেহের নিগার বলেন, গ্রামের বেশিরভাগ মেয়েরাই প্যাডের থেকে কাপড় ব্যবহারে বেশি আগ্রহী। যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে তাদেরকে সচেতন করতে হবে। তাছাড়া অনেক জায়গায় মেয়েদের জন্য বাথরুমের ব্যবস্থা থাকে না। তাদের জন্য আলাদা বাথরুম ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফওজিয়া হোসেন বলেন, এখন অনলাইন এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস প্রচার করা হয়। মাসিক সম্পকির্ত আলাদা ক্লাস ভিডিও করে টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করা যেতে পারে। আবার গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও আলাদা করে মাসিক সম্পর্কিত তথ্য প্রচার এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
সোস্যাল মার্কেটিং কোম্পানির ম্যানেজার শায়লা পারভীন বলেন, সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা, ডাক্তার, শিক্ষক, অবিভাবকসহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাদের নিজ নিজ জায়গা অন্যদের জানাতে হবে। মাসিক একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এ ধরনের মনোভাব সবার মধ্যে থাকা উচিৎ।
মাল্টিমোড গ্রুপের পরিচালক নাসরিন ফাতেমা আউয়াল বলেন, মেয়েদের জন্য শুধু আলাদা টয়লেট করলেই হবে না, এর ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর রাখতে হবে।
কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর বলেন, শিক্ষকরাই পারেন এ সম্পর্কে ছাত্রীদেরকে সচেতন করতে। শুধু ছাত্রী নয় ছাত্রদেরও এ বিষয়গুলো জানা থাকা উচিৎ।
আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি স্কুলে স্কুলে এ সম্পর্কে সচেতনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করলে সবাইকে সচেতন করা সহজ হবে।
ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার বেগম, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার সাথিরা জাকের জেসি, অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি, ওয়াটার অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি স্পেশালিস্ট রুবাইয়া নুসরাত, ওমেন্স ওয়ার্ল্ড এর পরিচালক ফারনাজ আলম শেরিন বৈঠকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫
জেডএফ/এএসআর