ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে জনগণের হাসপাতালে পরিণত করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে এ হাসপাতালটির পরিচিতি কম।
যার ফলে গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ঢাকা মেডিকেল, মিটফোর্ড ও সোহরাওয়ার্দীসহ অন্য মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ভিড় করেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সব রোগের চিকিৎসা পাওয়া যায় তা জানলে রোগীরা এ হাসপাতালমুখী হবেন।
রোববার (১৮ অক্টোবর) কুর্মিটোলা হাসপাতাল মিলনায়তনে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের মাঝে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী একথা বলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক এবং সামরিক চিকিৎসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রবিউল হোসেইন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ধনাঢ্য মানুষ রোগে আক্রান্ত হলে পাঁচতারা হোটেলের মতো বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কিন্তু দরিদ্র মানুষের সেই সামর্থ্য নেই। তাদের আশ্রয়স্থল সরকারি হাসপাতাল। ১৬ কোটি মানুষের দেশে সরকারি হাসপাতালে শয্যা কম বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন নতুন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন। কুর্মিটোলা হাসপাতাল সেগুলোর একটি। দরিদ্র মানুষ এখানে সেবা পাবেন।
এই সমঝোতা স্মারকের ফলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের একসঙ্গে পথচলা শুরু হলো। এখন থেকে এ দুটি প্রতিষ্ঠান একীভূত হয়ে চিকিৎসা ও শিক্ষা নিশ্চিত করবে।
সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসকরা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের কাজে সম্পৃক্ত হবেন। আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ থেকে পাশকৃত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রশিক্ষণ নেবেন। এছাড়া তৃতীয় বর্ষ থেকে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা হাসপাতাল থেকে ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ পাবেন। চিকিৎকদের স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অধ্যাপকরা যোগদানের পর হাসপাতালে নেফ্রলজি, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারী, মনোরোগ, রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগসহ আরো নতুন বিভাগ চালু করা হবে। কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহায়তায় হাসপাতালে স্থাপিত আধুনিক মরচুয়ারী এবং ময়না তদন্ত শুরু হবে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও সেনা বাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে হাসপাতালটির পূর্ণাঙ্গভাবে যাত্রা শুরুর ঘোষণা দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মেডিকেল শিক্ষার প্রসারের কথা চিন্তা করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজকে একীভূত করা হয়েছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের একীভূত হয়ে যাত্রা শুরু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। দুটি প্রতিষ্ঠানের একত্রে পথচলার মধ্য দিয়ে দরিদ্র রোগীদের আরো বেশি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে সেনা বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বলেন, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল একীভূত হওয়ার মধ্যদিয়ে সশস্র বাহিনী সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার সুযোগ পেল। সশস্র বাহিনী দেশর রক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করবে। হাসপাতালে দরিদ্র্য মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর হোসেন মল্লিকসহ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
এমএন/বিএস