ঘের থেকে তোলার পর সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাল রঙ ধারণ করে চিংড়ি। এসব চিংড়ির চাহিদা কম।
চিংড়িতে নীল দেওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানা যায়, বড় বালতি বা ড্রামের পানিতে নীল মিশিয়ে চিংড়ি চুবানো হয়। ওজন বাড়াতে জেলির পাশাপাশি ক্রেতা আকৃষ্ট করতে ব্যবহার করা হয় নীল।
রাজধানীতে যাত্রাবাড়ীতে মাস খানেক আগেও জেলি ও কাপড়ের রঙ মেশানোর দায়ে প্রায় ২০ মণ চিংড়ি জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। যার বাজার মূল প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
রং ব্যবহার প্রসঙ্গে যাত্রাবাড়ীতে মায়ের দোয়া মৎস্য আড়তে রাজদ্বীপ এন্টারপাইজের মালিক সুশীল রাজবংশী বাংলানিউজকে বলেন, চিংড়িতে কাপড়ে ব্যবহারের নীল ও জেলি ব্যবহারের কারণে প্রায় ২০ মণ মাছ ধ্বংস করা হয়। এরপরও এসব কাজ করে যাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
নীল ব্যবহারের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিংড়ি লাল রং ধারণ করে। এসব মাছ নিরাপদ হলেও ক্রেতা চাহিদা কম। তাই নীল ব্যবহার করলে চিংড়ি উজ্জল ও চকচকে দেখায়।
শুধু সুশীল রাজবংশী নয়, যাত্রাবাড়ীতে মায়ের দোয়া মৎস্য আড়তের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, পাইকারি বাজারে নীল ব্যবহারের সুযোগ নেই। প্রতিদিনের মাছ ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। এসব মাছ লাল হওয়ার সুযোগ কম। কিন্তু খুচরা বাজারে যেসব বিক্রেতা মাছ কিনে নিয়ে যান তারাই মূলত কাপড়ের রঙ দিয়ে নীল করেন।
রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর কাঁচাবাজারে খুচরা বিক্রেতা হাবিবের দোকানের চিংড়িগুলো চকচকে নীল দেখাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো সাদা চিংড়ি দিয়ে নীল রং বের হচ্ছে। শরীরের অংশ নীল হলেও বক্ষ উপাঙ্গ লাল দেখাচ্ছে। এসব উপাঙ্গ ধরেই চিংড়ি মাছের দেহ নীল পানিতে মেশানো হয়েছে। ফলে দেহ নীল হলেও উপাঙ্গগুলো সাদা ও লাল।
অথচ হাবিবের পাশেই আরেক খুচরা চিংড়ি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন। তার চিংড়িগুলো লাল।
চিংড়ি নীল না হয়ে লাল কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে চিংড়ি লাল হলেও সব সলিড (নির্ভেজাল)। যাগো কাছে নীল চিংড়ি দ্যাহেন তারা কাপড়ের রঙ মিশাইচে। আমার লাল সলিড চিংড়ি, রঙের কোনো কারবার নাই।
অন্যদিকে চিংড়ির অতিরিক্ত নীল রঙ প্রসঙ্গে হাবিব বলেন, চিংড়ির কালারই নীল। আমরা কাপড়ের রঙ দেইনি। কাপড়ের রং দিলেতো গরম পানিতে উঠে যাবে।
তবে সাধারণ ক্রেতাদের চেনার কোনো উপায় থাকবে না নীল রঙের বিষয়ে। বরং এসব নীল রং দেওয়া চিংড়িরই চাহিদা বেশি।
এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে চিংড়ি চাষে জড়িত। হরিণা চিংড়ির রঙ চৈত্র-বৈশাখ মাসে একটু লালচে ধারণ করে, কিন্তু নীল হয় না। চিংড়িতে জেলিসহ এসব কাজ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী করছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। চিংড়িতে কাপড়ের নীল রঙ ব্যবহারের বিষয়টি নজরদারি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেবো।
কেমিক্যালস ও জেলি মেশানো চিংড়ি খেলে দ্রুত সময়ে কিডনি ও লিভার অকেজো হয় বলে জানান মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুদীপ রঞ্জন দেব বাংলানিউজকে বলেন, জেলি ও রঙ মেশানো চিংড়ি প্রাথমিকভাবে মানবদেহের দু’টি অর্গান নষ্ট করে দেবে, একটি কিডনি, অপরটি লিভার। এটাই প্রাথমিকভাবে বড় সমস্যা। এর পাশাপাশি এসব চিংড়ি খেলে পাতলা পায়খানা ও বমি হবে। তবে তাৎক্ষণিক যথাযথ চিকিৎসা না দিলে রোগীর মৃত্যুরও সম্ভাবনা থাকে।
** ‘৬শ’র মাল সাড়ে ৩শ’তে লইবেন, জেলি তো থাকবোই’
** বাইছা লন, ক্যানসার ছাড়া লন
** সব বাজারেই জেলি চিংড়ি!
** শক্ত খোলসেই পোয়াবারো চিংড়ি ভেজালিদের
** চিংড়ি ভীতিতে ক্রেতা-ভোক্তা!
** চিংড়িতে জেলি আতঙ্কে মাছ ব্যবসায়ীরাও
** কিভাবে কী মেশে চিংড়িতে
** এ যেন টাকা দিয়ে মৃত্যু কেনা !
** মোসলেম চেনালেন ভেজাল চিংড়ি
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
এমআইএস/জেডএস/জেডএম