ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

চিংড়ি ভীতিতে ক্রেতা-ভোক্তা!

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
চিংড়ি ভীতিতে ক্রেতা-ভোক্তা! চিংড়ি ভীতিতে ক্রেতা-ভোক্তা!/ ছবি: শাকিল-বাংলানিউজ

ঢাকা: সিরিঞ্জের মাধ্যমে জেলিসহ বিভিন্ন অপদ্রব্য পুশ করে বাড়ানো হচ্ছে চিংড়ির ওজন। আর এতেই মানবদেহে প্রবেশ করছে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক বিষ। অধিক মুনাফা লাভের আশায় এমন ঘৃণিত কাজ করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী।

মানুষ আগে জানতো না জেলি চিংড়ি সম্পর্কে। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে এর ভয়াবহতার খবরই পাওয়া যাচ্ছে।

তাতেই ক্রেতা-ভোক্তাদের বাড়ছে ভীতি-শঙ্কা।

এমন ভীতি-শঙ্কার কারণেই খুচরা ক্রেতাদের আগ্রহ কমেছে চিংড়ি কেনায়। প্রতারিত হওয়া ও মানবদেহের স্বাস্থ্যহানির বিষয় ভেবেই বাজার থেকে চিংড়ি কিনতে গিয়ে অনেকটাই অনাগ্রহ প্রকাশ করছে খুচরা ক্রেতারা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সপ্তাহের বাজার-সদাই করতে এসে এমন আশঙ্কার কথাই জানিয়েছেন ক্রেতা নুরুল ইসলাম।

মগবাজারের বাসিন্দা নুরুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। সংসারের পুরো সপ্তাহের বাজার-সদাই করতে তিনি শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ছুটির দিনে এসেছেন কারওয়ান বাজারে।  চিংড়ি ভীতিতে ক্রেতা-ভোক্তা!/ ছবি: শাকিল-বাংলানিউজ

নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ছুটির দিন তাই পুরো সপ্তাহের জন্য মাছ কিনতেই কারওয়ান বাজারে এসেছি। মাস খানেক আগেও খাওয়ার জন্য এই বাজার থেকে গলদা চিংড়ি কিনেছিলাম। বাসায় নেওয়ার পর স্ত্রী মাছ কুটছিলো। দেখা গেছে, কিছু-কিছু চিংড়ির ভেতরে অনেক জেলি। চিংড়ির দুই কানশা থেকে এসব জেলি বের হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য মাছ কিনলেও চিংড়ি কেনার প্রতি তেমন আগ্রহ হয় না। কারণ একের পর এক ভেজাল খাদ্য খাচ্ছি। এরমধ্যে চিংড়িতেও ভেজাল শুরু হয়ে গেছে। ’

ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঘের থেকে চিংড়ি মাছ কিনে ওজন বাড়ানোর জন্য এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সিরিঞ্জের মাধ্যমে জেলিসহ বিভিন্ন অপদব্য পুশ করছে। ওজনে ঠকানো এবং অধিক লাভের আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা চিংড়ির দেহে ফিটকিরির পানি, ভাতের মাড়, সাগু, এরারুট, লোহা বা সীসার গুলি, মার্বেল, ম্যাজিক বল, জেলিসহ বিভিন্ন ধরনের পদার্থ মিশিয়ে বাজারজাত করছে। খুলনা ও বাগেরহাট থেকে জেলি পুশ করা গলদা ও বাগদা চিংড়ি ব্যবসায়ীরা পাঠাচ্ছেন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। চিংড়ি ভীতিতে ক্রেতা-ভোক্তা!/ ছবি: শাকিল-বাংলানিউজ

এদিকে, প্রশাসনের চাপে এসব জেলি মেশানো চিংড়ির বাজারজাতকরণ অনেকটাই কমেছে বলেও দাবি করছেন রাজধানীর কারওয়ার বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

কারওয়ান বাজারের মাছের ব্যাপারি জগদীশ বাসু বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা, বাগেরহাট, থেকে গলদা ও বাগদা চিংড়ি আসে, আমরা কিনে আনি। তবে এসব দ্রব্য মেশানোর কোনো সুযোগ আমাদের নেই। অতীতে জেলি মেশানো চিংড়ি আসতো। আমরা বুঝতে পারতাম না। ওই সব মাছের রং খুবই সুন্দর হতো। কম দামে পেয়ে আমরাও কিনে বিক্রি করতাম। পরে জানতে পারলাম এতে জেলি মেশানো হয়।

এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। অনেককে জেল-জরিমানাও করা হয়েছে।

কারওয়ান বাজার সোনালী মৎস্য আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আগে জেলি মেশানো চিংড়ি আসতো, তবে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিটি আড়তদারকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, কেউ যাতে জেলি মেশানো চিংড়ি না রাখে। চিংড়ি ভীতিতে ক্রেতা-ভোক্তা!/ ছবি: শাকিল-বাংলানিউজ

যদি কোনো আড়তে জেলি মিশ্রিত চিংড়ি পাওয়া যায় তবে তার আড়ত বাজেয়াপ্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

মোশাররফ হোসেন বলেন, মৎস্য অধিদফতরের সঙ্গে যৌথ কমিটির ভিত্তিতে কাজ করা হচ্ছে। এরপরও যদি কেউ গোপনে করে থাকেন, আমরা প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

জেলি চিংড়ি বোঝার উপায় সম্পর্কে আড়তদার ফারুক আলম বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত চিংড়ি লাল হয়ে যায়। তবে চিংড়িতে জেলি ব্যবহার করা হলে মাছে রং সতেজ থাকে, অনেকটা সবুজের মত। এবং নরম ভাবটা থাকে না।

চিংড়ি মাছের মাথার কানশার দুইপাশে ভেতরে টানলেই জেলি দেখা যায়। ওই স্থানটা অনেকটা বড় ও টানটান থাকে বলেও জানান তিনি।    

মাছের ব্যাপারি মো. বাচ্চু সিকদার বলেন, জেলি মেশানো চিংড়ির বর্তমানে চিংড়ির বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

** ‘৬শ’র মাল সাড়ে ৩শ’তে লইবেন, জেলি তো থাকবোই’
** বাইছা লন, ক্যানসার ছাড়া লন
** সব বাজারেই জেলি চিংড়ি!
** কাপড়ের বিষাক্ত নীলে চকচকে চিংড়ি
** শক্ত খোলসেই পোয়াবারো চিংড়ি ভেজালিদের
** চিংড়িতে জেলি আতঙ্কে মাছ ব্যবসায়ীরাও
** কিভাবে কী মেশে চিংড়িতে
** এ যেন টাকা দিয়ে মৃত্যু কেনা !
 ** মোসলেম চেনালেন ভেজাল চিংড়ি

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
এসজেএ/টিআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।