ভারতের বেঙ্গালোরে অবস্থিত বিজিএস জেনারেল হসপিটালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট জয়ন্তি থুমসি বলেন, স্তন ক্যানসার মারাত্মক রোগ হলেও তা নিরাময়যোগ্য। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ নির্ণয় সম্ভব হয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নেওয়া যায়, তবে এর থেকে পূর্ণরূপে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগের চিকিৎসা যেমন সহজ, এর খরচও বেশ কম। মুম্বাইয়ের জ্যাসলক হসপিটাল ও রিসার্চ সেন্টারের মেডিকেল বিশেষজ্ঞ রিতু জইন বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় স্টেজে থাকা অবস্থায় স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা ৯৫-৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে সফল। এ পর্যায়ে রোগীকে রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপির মধ্য দিয়ে যেতে হয় না।
তাই রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত প্রয়োজন। যদি পরিবারের কোনো সদস্যের স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তবে ৩০ বছর বয়স থেকে নিয়মিত নিজে নিজে স্তন পরীক্ষার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। আর ৩৫-৪০ বছর বয়স থেকে প্রতিবছর অন্তত একবার চিকিৎসকের সাহায্যে মেমোগ্রাফি টেস্ট প্রয়োজন। পারিবারিক ইতিহাস না থাকলেও ৪০ বছর বয়স থেকে মেমোগ্রাফি টেস্ট করা উচিত।
তবে পরীক্ষায় এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। জয়ন্তি থুমসি বলেন, ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষণগুলো ক্যানসারে রূপান্তরিত হয় না। কিন্তু তা অবহেলা করা একেবারেই উচিত না। লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সময় স্তন ক্যানসারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যানসারটি খুব দ্রুত দেহে ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং, আপনার সমস্যা সম্পর্কে অপরের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে সংকোচবোধ করবেন না। এর চিকিৎসাতেও দেরি করবেন না।
চিকিৎসকরা আরও জানান, স্তন ক্যানসার যে শুধু স্তনেই ধরা পড়বে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। বগল কিংবা কলারবোন থেকে তা বিস্তার পেতে পারে। তাছাড়া রোগটি পুরুষদেরও হতে পারে। প্রতি একশজন স্তন ক্যানসার আক্রান্তদের একজন পুরুষ। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে এ রোগ নির্ণয় করা কিছুটা সহজ।
স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ:
১। স্তন বা বগলে অস্বাভাবিক ব্যথা
২। স্তনের আকৃতি পরিবর্তন
৩। স্তনের চামড়ায় অস্বাভাবিকতা দেখা দেওয়া
৪। স্তনবৃন্তে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেওয়া (চুলকানি, ব্যথা বা অবস্থানের পরিবর্তন)
৫। চামড়ার নিচে কোনো ধরনের গুঁটি বা দলা অনুভব করা।
গবেষকরা জানান, জেনেটিক দিক থেকে নারী ও পুরুষ উভয়েরই স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি সমান। যদি কোনো মায়ের স্তন ক্যানসার হয়ে এবং তার চারটি সন্তান থাকে, তবে ছেলে-মেয়ে সব সন্তানই অনুরূপ জিন বহন করবে। স্তন ক্যানসারের জিন মা থেকে ছেলে-মেয়ে যে কারো মধ্যে যেতে পারে। তাই প্রত্যেক সন্তানই স্তন ক্যানসার আক্রান্তের সমান ঝুঁকিতে থাকবে।
সাধারণত, দেহে অতিরিক্ত মেদ থাকলে বা কোনো হরমোন থেরাপি গ্রহণ করা নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। জীবনধারা পরিবর্তন অনেক সময় এ রোগ থেকে নিরাপদ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে অ্যালকোহল পরিহার ও নিয়মিত ব্যায়ামের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
স্তন ক্যানসার সাধারণত হরমোনের উপর নির্ভরশীল। যেসব নারীরা পিরিয়ড ও মেনোপজ সংক্রান্ত হরমোনাল সমস্যায় ভুগছেন, তাদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে। আর যারা কখনও সন্তানকে স্তন্যপান করাননি, তাদের এ রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
এনএইচটি/এএ