নাসিরনগর উপজেলা সদর থেকে একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক শুধুমাত্র সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে আসেন হাসপাতালে। এ অবস্থা দেড় বছর ধরে চলতে থাকায় স্থানীয়দের চিকিৎসা সেবা লাটে উঠেছে।
রোয়েনা বেগম নামের ওই পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক সপ্তাহে শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ওই কেন্দ্রে আসেন। তবে তিনি দুপুর দুইটার মধ্যেই কেন্দ্র ত্যাগ করেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্মাণের পর থেকে এখন পযর্ন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে ভাল করে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন না এলাকার মানুষজন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির চারদিকে বিভিন্ন ধরনের আগাছা জন্মে পরিত্যক্ত ভবনের রূপ নিয়েছে। এর চারপাশের মাটি ভেঙে সরে গেছে। প্রধান দরজায় তালা ঝুলছে। হাসপাতালটির সব কয়টি কাঁচের জানালা ভাঙা। এর পাশে থাকা নলকুপটিও বিকল হয়ে পড়েছে। মানুষের আনাগোনা না থাকার বিষয়টিও সহজেই অনুমান করা যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়োগ পাঁচজনের কেউ কখনোই আসেন না। শুধুমাত্র পরিদর্শক ছাড়া আর কেউ আসেন না। তিনিও মাত্র ঘণ্টাখানেক সময় থেকে আবার তালা দিয়ে চলে যান। ফলে আশপাশ ও দূরদূরান্ত থেকে আসা অনেক রোগীরা ফিরে যান।
কুন্ডা ইউনিয়নের মছলন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা জোৎস্না রাণী বাংলানিউজকে বলেন, সপ্তাহে ছয়দিন খোলা থাকলেও মাত্র আসে একদিন। তাও আবার দুপুর ১২টার সময় আসেন। ঘণ্টা দু’এক থেকে ২টার দিকে চলে যান। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়লে এখানে চিকিৎসা নিতে আসলেও কাউকে না পেয়ে বাধ্য হয়ে উপজেলা সদর না হলে জেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা করতে হয়।
আরেক বাসিন্দা কদবানু বলেন, এই হাসপাতালে এক মাসে দেখি না কোনো চিকিৎসক আসতে। সপ্তাহে একদিন আসার কথা থাকলেও ঠিক মতো আসেন না। যার কারণে ইউনিয়নের অন্য গ্রাম কাইতরা, মহিষবেড়, মসলন্দপুরসহ আশপাশের লোকজন চিকিৎসা সেবা নিতে এসে তালাবদ্ধ দেখে ফিরে যান।
হাসপাতালের ভবনের পাশেই মুদির দোকানি আমির আলী বলেন, আশ্বিন কার্তিক মাসে দেখছিলাম দু’দিন খোলা ছিলো। এরপর থেকে দেখি তালা ঝুলে রয়েছে। প্রায় সময় গ্রামের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিকভাবে আমার কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে যান।
সপ্তাহে মাত্র একদিন আসার বিষয়ে মোবাইলফোনে কথা হয় ওই হাসাপাতালের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক রোয়েনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গত দেড় বছর ধরে কোনো লোকবল না থাকায় আমি উপজেলা সদর থেকে এসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করি।
এ বিষয়ে কথা হয় জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক অরবিন্দ দত্তের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যেসব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে লোকবল পদায়ন নেই সেসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সেবা কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। এই ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান আছে বলেও জানান তিনি।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশে চার শতাধিক লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। সেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিছু লোক নিয়োগ হবে।
যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়মিত কর্মকর্তারা না যান, এসবের ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান অরবিন্দ।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
বিএস