বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমানের কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা চাকরিপ্রত্যাশী চিকিৎসকরা রাতে সাংবাদিকদের জানান, রাতভর তো তারা আন্দোলন করবেনই, দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত অবস্থানস্থল ছাড়বেন না তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনরত এক চাকরিপ্রত্যাশী বাংলানিউজকে বলেন, মেডিকেলের চাকরির পরীক্ষা এতো সহজ নয়।
প্রায় ১০০ চাকরিপ্রত্যাশীকে উপ-উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনের অন্ধকার করিডোরে জয় বাংলা শ্লোগান দিতে দেখা যায় এবং তাদের হাতে চাকরির পরীক্ষা নেওয়ার দাবি সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
অবরোধের কারণে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের জন্য খাবার নিয়ে যেতে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের।
কয়েকজন শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, যারা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন তারাও চিকিৎসক, আমাদের ছাত্র। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো। আর একদিনে বা একরাতেই তো সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়, এজন্য কিছুটা সময় দিতে হবে।
সিন্ডিকেটের সভায় পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত তা জানতে চাইলে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আন্দোলনরতরা বলছেন, তারা মিটিং করুন আর যাই করুন, আমাদের দাবি পূরণ হলে আমরা চলে যাবো। অর্থাৎ আমরা চাকরির পরীক্ষা দিতে বসবো। আমাদের দাবি একটাই। নিয়োগ পরীক্ষা হোক।
অন্যদিকে চাকরিপ্রত্যাশীদের এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া কিছু পুলিশ সদস্যকে উপ-উপাচার্যের কার্যালয়েও প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এখানে আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে। আমরা বিশেষ নিরাপত্তার খাতিরে এখানে অবস্থান নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর কোনো নির্দেশনা দেয়নি। পুলিশ কেবল অবস্থানই করছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বুধবার দুপুর ১২টা থেকে প্রায় চার শতাধিক চাকরিপ্রত্যাশী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। পরে দুপুর ২টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্লকে যান এবং উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দ্রুত নিয়োগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া না থাকায় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমানের কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এ বিষয়ে সন্ধ্যায় জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, যা বলার উপাচার্য স্যার বলবেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত রাউন্ড শেষ করে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) উদ্দেশে রওনা হই। গাড়ি মগবাজার ফ্লাইওভারের ওপর ওঠার পর খবর পাই চাকরিপ্রার্থীরা প্রশাসন ভবনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন এবং উপ-উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।
বিকেল পর্যন্ত অধ্যাপক ডা. সাহানা অবরুদ্ধ ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, উপ-উপাচার্যের কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা আছেন। তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই তারা বেরিয়ে আসবেন।
বিক্ষোভকারী চিকিৎসকদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন তখন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৬ সাল থেকে নতুনদের নিয়োগের জন্য দাবি জানানো হচ্ছে। এরপর ২০১৭’র অক্টোবরে ২০০ জন মেডিকেল অফিসার চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসের ২৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা স্থগিত করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তাই আমরা বিক্ষোভ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮
এমএএম/এইচএ/