বুধবার (২৪ জুলাই) পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী, দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মাসের ২৪ দিনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ছয় হাজার ৪২১ জন।
তবে বেশকিছু বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নিয়মিতভাবে তথ্য পাচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ফলে বাস্তবে আক্রান্ত রোগী এবং মৃত্যু হওয়া রোগীর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। মৃত সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৮ জন বললেও বিভিন্ন হাসপাতাল ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে সে সংখ্যা অন্তত ২৮ বলে জানা যায়।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী এবং তাদের স্বজনরা বলছেন, শুরু থেকেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের উদাসীনতা পরিস্থিতিকে এতোটা জটিল করেছে। প্রতিবছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত দেশের তালিকায় থাকলেও বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এবং দীর্ঘ মেয়াদে কোনো পরিকল্পনা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। এমনকি সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে এখন পর্যন্ত হয়নি কোনো গ্রহণযোগ্য গবেষণাও।
গত জুনের ২৩ তারিখ দ্বিতীয় দফায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের উপ পরিচালক ফেরদৌস কবীর। ডেঙ্গুর কারণে রক্তের প্লাটিলেট স্বাভাবিক দুই লাখ থেকে ৪০ হাজারে নেমে আসা, প্লাজমা থেকে ফুসফুস এবং লিভারে পানি জমার মতো শারীরিক পীড়ায় ভুগেছেন সরকারি এই কর্মকর্তা। সিটি করপোরেশনের কাজের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হিসেবে প্রতিবছরই আমাদের দেশে ডেঙ্গু আঘাত করে। কিন্তু ডেঙ্গু মশার যে বিস্তার, তা নিয়ে দেশে কোনো গবেষণা নেই। সিটি করপোরেশনেরই তো একটা গবেষণা ইউনিট থাকা উচিত। একজন ভুক্তভোগী হিসেবে বলছি, ডেঙ্গু ইস্যুতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা এক ধরনের অন্ধকারে আছেন। যে কারণে সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর কিছু করতে পারছে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন, যা মোটেও কাম্য নয়। যে বা যারা দায়িত্ব নিয়ে সফল হতে পারবে না বা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারছে না, তাদের উচিত নিজে থেকেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া।
তবে ডেঙ্গু রোগের বিস্তারে জনগণের সচেতনতা দরকার বলে মনে করেন ফেরদৌস কবির। কিন্তু জনগণকে সচেতন হতে বাধ্য করার কাজটি সিটি করপোরেশনকে করতে হবে বলে মন্তব্য কবিরের। এর জন্য প্রয়োজনে ব্রিটিশ আমলের পুরানো আইন সংস্কার করার দাবি তোলেন তিনি।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মেয়ররা যেসব কাজ করছেন, তা লোক দেখানো। মশার ওষুধের যে কার্যকারিতা নেই, তা তো আদালতের আদেশেই পরিষ্কার। তাহলে এতোদিন ধরে করলেনটা কী তারা? কী ওষুধ দিলেন এতোদিন? আদালতের আগে তারা নিজেরাই কেন বুঝলেন না যে তাদের ওষুধে সমস্যা আছে এবং তা পরিবর্তন করে কার্যকর ব্যবস্থা দরকার? ওনারা (দুই মেয়র) না পারলে পদত্যাগ করে ফেললেই হয়।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এবং প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোহাম্মদ শরীফ আহমেদের। তবে ফোনে কথা বলেছেন উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি করপোরেশন উদাসীন নয় দাবি করে আতিক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা উদাসীন হলে কাজগুলো কেন করছি? আমরা তো কাজ করে যাচ্ছি। ডেঙ্গুর প্রকারও পরিবর্তন হচ্ছে। গতবছরও ডেঙ্গুর যে ধরনের লক্ষণ দেখা গেছে, এবার তার থেকে আলাদা। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। জনগণ এবং আমরা মিলেই কঠিন এই সমস্যার মোকাবিলা করবো।
তিনি বলেন, আমরা সবাই মিলে কাজ করছি। এছাড়া ডেঙ্গু মশার প্রজনন কিন্তু হচ্ছে ঘরের ভেতর থেকে; বাইরে না। ঘরের ভেতরে আমাদের যাওয়ার অধিকার নেই কিন্তু।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৯
এসএইচএস/টিএ