ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

হার্ট সার্জারির পর ‘এটা খাবেন, ওটা খাবেন না’

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
হার্ট সার্জারির পর ‘এটা খাবেন, ওটা খাবেন না’ হার্ট সার্জারির পর ‘এটা খাবেন, ওটা খাবেন না’। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: হার্টের সার্জারির পর ‘এটা খাবেন, ওটা খাবেন না’, হরহামেশাই এমন পরামর্শ দিয়ে থাকেন রোগীর আশপাশের অনেকেই। সাধারণত প্রচলিত কিছু ধারণার ওপর ভিত্তি করেই তারা এসব পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী হার্ট সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া মানুষের মধ্যে ৮৫ শতাংশেরই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়।  

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের চিকিৎসা সেক্টরের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা দিনকে দিন যেন বেড়েই চলছে।

হার্ট অ্যাটাকে হয়তো সবার মৃত্যু হচ্ছে না। তবে যারা বেঁচে থাকছে তাদেরও মেনে চলতে হয় একটি নির্দিষ্ট রুটিন। অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাকের পর আগের লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ নতুন এক লাইফস্টাইল ফলো করতে হয় তাদের। যাতে হার্টের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে থাকে।

হার্টের সার্জারির পর চিকিৎসকরা ওই রোগীকে একটি নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা দিয়ে দেয়, যা রোগীকে ফলো করতে হয়। অর্থাৎ আগের মতো যা ইচ্ছে তা খাওয়া ওই রোগীর জন্য নিষিদ্ধ। তার জন্য ঠিক করে দেওয়া হয় নতুন খাদ্য তালিকা। সার্জারির পরের কয়েকমাস ঘরে তৈরি খাবার খেতেই রোগীদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। যাতে করে কোনো ধরনের ইনফেকশন না হয়।
শাক-সবজি ও ফল। তবে ঘরে তৈরি সব খাবারই যে রোগীর জন্য উপকারী ব্যাপারটি তা-ও নয়। এজন্যও চিকিৎসক আলাদা নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। যাতে উল্লেখ থাকে, কোন কোন খাদ্য ওই রোগীর শরীরের জন্য প্রয়োজন, কী কী এখন খাওয়া যাবে না, দ্রুত সেরে উঠতে সহায়তা করবে কোন কোন খাবার।

এত পরামর্শ, খাদ্য তালিকা- এগুলো দেওয়ার মূল কারণ রোগী যাতে সার্জারির পর দ্রুত সেরে উঠতে পারে ও ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো।

হার্টের সার্জারির পর আশপাশের মানুষও রোগীদের অনেক কিছু খেতে, আবার অনেক কিছু না খেতে বলে থাকেন। তারা সাধারণত প্রচলিত ধারণার ওপর ভিত্তি করেই এসব পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে প্রচলিত ওইসব ধারণা কতটুকু সঠিক, কিংবা আদৌ সঠিক কিনা- এমন প্রশ্ন জাগে অনেকের মনেই।  

প্রচলিত ধারণার ওপর ভিত্তি করে দেওয়া কিছু খাদ্যাভাসের যথার্থতা নিয়ে কথা বলেছেন ভারতের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. বিপেন চন্দ্র ভামরে। ওইসব প্রচলিত ধারণা ও এর সঠিক দিকগুলো বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।  

কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার।

‘সুপার ফুড’ খেলে হার্টের রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে?

অনেকেরই ধারণা সুপার ফুড (সবজি, ফল, মাছ ইত্যাদি) খেলে হার্টের রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে প্রকৃতপক্ষে সুপার ফুড বলে কিছুই নেই বলে জানিয়েছেন ডা. বিপিন চন্দ্র ভামরে। তার মতে, সাধারণত মানুষের ধারণা, সুপার ফুড খেলে হার্টের রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সুপার ফুড বলতে কিছু নেই। তবে হ্যাঁ! ব্লুব্যারি, আখ, মাছ, সবজি, বাদাম- এগুলো অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে এর মানে এই না যে, এগুলো হার্টের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখে।  

তবে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত ডায়েট করলে হার্টের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলেও জানান এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।

চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন?

হার্ট অ্যাটাকের পরই রোগীর আশপাশের সবাই বলতে শুরু করে, চর্বিযুক্ত খাবার আর নয়। এখন থেকে চর্বিযুক্ত খাবার বাদ। তবে একটি মানুষের শরীরে কোলেস্টেরলেরও (চর্বি) প্রয়োজন আছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় ওই চিকিৎসক।  

তিনি জানান, একটি মানুষের শরীরে প্রতিদিনই নির্দিষ্ট পরিমাণ কোলেস্টেরলের প্রয়োজন আছে। আমাদের শরীরের অনেক হরমোন-ই কোলেস্টেরল থেকে তৈরি হয়। এছাড়া আমাদের ব্রেন ও মাংসপেশির জন্যও কোলেস্টেরল প্রয়োজন। মোদ্দা কথা, প্রত্যেক মানুষের শরীরের জন্যই কোলেস্টেরল প্রয়োজন।

তবে কথা হচ্ছে, এর পরিমাণ। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি কোলেস্টেরলকে অবশ্যই ‘না’ বলতে হবে। অর্থাৎ বাইরের জাঙ্ক ফুড জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত সুগার, সফ্ট ড্রিংকস, চর্বিযুক্ত পশুর মাংস (বিশেষ করে গরু), বাটার- এগুলো বর্জন করতে হবে। দৈনিক কোলেস্টেরল জাতীয় খাবার খাওয়ার মাত্রা ৩০-৩৫ গ্রামের মধ্যে রাখতে হবে।

লবণ।

লবণ ক্ষতিকর কিনা?

অনেকেরই ধারণা, লবণ তো প্রাকৃতিক খাবার। এটি হার্টের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে প্রচলিত এই ধারণা একেবারেই ভুল বলে জানিয়েছেন ভারতের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. বিপেন চন্দ্র ভামরে।  

তিনি জানান, চর্বি ও সুগারের চেয়েও লবণ বেশি ক্ষতিকর। এটি শুধু ব্লাড প্রেশারই বাড়ায় না, একইসঙ্গে কিডনির জন্যেও ক্ষতিকর। অতিরিক্ত লবণ ব্লাড প্রেশার বাড়ায়। যার ফলে হার্টের ঝুঁকিও বেড়ে যায় বহুগুণ। এছাড়াও এটির কারণে কিডনি সংক্রান্ত নানা ধরনের জটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে।

অতএব লবণ খাওয়ার ব্যাপারেও হার্টের রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক।

হার্টের রোগীদের জন্য পরামর্শ:

প্রচলিত ওইসব ধারণার ব্যখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি হার্টের রোগীদের সার্জারির পর করণীয় সম্পর্কেও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ডা. বিপেন চন্দ্র ভামরে। তার পরামর্শগুলো হলো- সঠিক খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো, নিয়মিত ব্যায়াম করা, বাইরের খাবার ত্যাগ করা, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা, রিচ ফুড ত্যাগ করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খাওয়া, তৈলজাতীয় খাবার না খাওয়া, ঘরে তৈরি খাবার খাওয়া ইত্যাদি।

এছাড়া যাদের সিগারেট ও মদ পানের অভ্যাস রয়েছে, তাদেরকে সেগুলো ত্যাগ করার কথাও বলেছেন ওই চিকিৎসক।  

তবে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য খেয়াল রাখতে হবে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের দিকে। সেগুলো হলো- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, ভুল খাদ্যাভাস, স্ট্রেস, নিয়মিত শরীরচর্চা না করা। এই সবগুলোই কেউ চাইলেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
এসএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।