ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সিরাজগঞ্জে জমজমাট পশুর হাট, বাড়ছে করোনার ঝুঁকি

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২০
সিরাজগঞ্জে জমজমাট পশুর হাট, বাড়ছে করোনার ঝুঁকি সিরাজগঞ্জে জমজমাট পশুর হাট, বাড়ছে করোনার ঝুঁকি, ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: শেষ মুহূর্তে সিরাজগঞ্জে কোরবানির পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। নানা বিধি-নিষেধ সত্ত্বেও পশুর হাটগুলোতে কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়।

 

হাজার হাজার মানুষ গাদাগাদি করে, গায়ে গা লাগিয়ে হাটের মধ্যে ভিড় করায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। সচেতন মহলের মতে, পশুর হাটগুলো যেন করোনা সংক্রমণের কারখানায় পরিণত হচ্ছে।  

পুরো সপ্তাহ জুড়ে জেলার গুরুত্বপূর্ণ পশুর হাটগুলো ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার তো দূরের কথা, অধিকাংশ মানুষের মুখে কোনো মাস্কই দেখা যায়নি।  সিরাজগঞ্জে জমজমাট পশুর হাট, বাড়ছে করোনার ঝুঁকি,  ছবি: বাংলানিউজ

মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) কামারখন্দের হাটটি এতো জমজমাট হয়েছিল যে নির্ধারিত স্থান ছাড়িয়ে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে বিস্তৃত হয়। এখানে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতাকে গাদাগাদি করে কেনাবেচা করতে দেখা যায়। ওইদিন চান্দাইকোনা হাটের অবস্থাও ছিল ঠিক একই। রায়গঞ্জ উপজেলার এ হাটটিতে সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলার হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে। হাট কমিটি মাইকে বার বার বলার পরও অধিকাংশ মাস্ক পড়তে দেখা যায়নি কাউকে। কেউ কেউ মাস্ক দিয়ে নাক-মুখ না ঢেকে কানের সঙ্গে বা থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন।

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ হাটটিতে সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলার ছয়টি উপজেলার বিপুল সংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে। চলনবিল অঞ্চলের এ হাটটিতে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধির বালাই চোখে পড়েনি। একই দিনে সদর উপজেলার কান্দাপাড়ার হাটেও মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। এছাড়া গত রোববার সদর উপজেলার পোড়াবাড়ি ও উল্লাপাড়ার বোয়ালিয়া হাট দু’টি ঘুরেও একই চিত্র দেখা যায়। অপরদিকে আঞ্চলিক সড়ক দখল করে বসানো শালুয়াভিটা হাটে কোনো প্রকার বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করা হয়নি।  

এর মধ্যে দু-একটি হাটে কমিটির পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনগণকে একে অপরের থেকে তিন ফুট দূরুত্ব বজায় রাখার ও মুখে মাস্ক পরতে বারবার সতর্ক করা হলেও সেগুলো কানেই তুলছিলেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। কিন্তু বেশিরভাগ হাটে এ ধরনের সচেতনতামূলক প্রচরণাও লক্ষ্য করা যায়নি।  

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কামারখন্দ হাটে আসা গরু বিক্রেতা ছাবেদ আলী বলেন, গরমে মাস্ক পড়লে সহ্য করা যায় না। আমি একাই না, কেউই তো মাস্ক পড়েনি।  

দল বেধে গরু কিনতে আসা সাইফুল, মোকলেছুর, আব্দুল হাকিম ও মোয়াজ্জেল বলেন, মাস্ক পরবে শহরের মানুষ। আমরা গ্রামের মানুষ, আমাগোর মাস্কের দরকার নাই।  

চান্দাইকোনা হাটে আসা গরু বিক্রেতা মাহিদুল, গরুর বেপারী তমিজুল ও খালেক বলেন, কোনো হাট-বাজারেই তো মাস্ক ব্যবহার বা দূরত্ব মানা হচ্ছে না। শুধু আমরা না পরলেই দোষ।  

মাস্ক না পড়লে ও সামাজিক দূরত্ব না মেনে চললে করোনার সংক্রমণ হতে পারে বলার পর বয়োবৃদ্ধ দেলবার আলী বললেন, আল্লাহ ভরসা। আমাগোর কিচ্ছুই হবে না।  

নওগাঁ হাটের ইজারাদার আব্দুল হাই, কামারখন্দ হাটের ইজারাদার কামরুল ইসলাম আমিনুল ও চান্দাইকোনা হাটের ইজারাদার শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়েছি। কিন্তু ক্রেতা-বিক্রেতারা কোনো কথাই শুনতে চাননি।  

এদিকে লাখ লাখ মানুষ পশুর হাটে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।  

সিরাজগঞ্জ জেলা স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. জহুরুল হক রাজা বলেন, গরুর হাটগুলোতে ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এতে জেলায় করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।  

নব কুমার কর্মকার বলেন, হাটে যেভাবে মানুষ চলাচল করছেন, তাতে করে পাঁচ/সাতজন করোনায় আক্রান্ত থাকলেও সেটা পুরো হাটেই ছড়িয়ে যাবে। জেলা প্রশাসন যেভাবে হাট কমিটিকে নির্দেশনা দিয়েছিল, তার কোনোটাই মানা হচ্ছে না।  

সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শেষ মুহূর্তে পশুর হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। এতে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জ। হাটে মানুষগুলোর মধ্যে যদি কয়েকজনের করোনা থেকে থাকে, তাহলে তা ছড়িয়ে পড়বে। বাদ যাবে না হাটে আসা মানুষগুলোর পরিবারও। সব মিলিয়ে ভয়াল পরিস্থিতি হতে পারে।  সিরাজগঞ্জে জমজমাট পশুর হাট, বাড়ছে করোনার ঝুঁকি,  ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ বলেন, আমরা হাট কমিটিগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট চালাতে বলেছি। তারাও চেষ্টা করছেন। কিন্তু মানুষকে কোনোভাবেই সচেতন করা যাচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২০
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।