ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির ‘মামনি’ মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন প্রকল্প: ইমার্জেন্সি রেসপন্স টু কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক’ এর প্রকল্পের আওতায় ডিজিটাল হেলথকেয়ার সলিউশানস, ইউএসএআইডি এবং সেভ দ্য চিলড্রেন এর যৌথ উদ্যোগে অসহায় মানুষদের কোভিড-১৯ সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে স্থাপন করা হচ্ছে সাতটি ডিজিটাল ডাক্তার বুথসহ ৪১টি স্বাস্থ্য ক্যাম্প।
ডিজিটাল হেলথকেয়ার সলিউশানস (ডিএইচ), ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’ নিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান, দৃঢ়তার সঙ্গে সহযোগিতা করছে ইউএসএআইডির ‘মামনি’ মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন প্রকল্প: ইমার্জেন্সি রেসপন্স টু কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক ”।
১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটির মাধ্যমে বিনামূল্যে ডিজিটাল ভিডিও কলের মাধ্যমে ও সরাসরি চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি বিনামূল্যে “সুরক্ষিত” প্যাকেজে নিবন্ধন করা হচ্ছে। গত তিন মাস মেয়াদী প্যাকেজের মাধ্যমে একজন নিবন্ধিত গ্রাহক হাসপাতালে ভর্তিতে বিলের ওপর ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফ্রি হেলথ ক্যাশব্যাক এবং ১০ হাজার টাকা সমমূল্য ফ্রি জীবনবিমার সুবিধা নিতে পারবে।
‘ইউএসএআইডি’র ‘মামনি’ মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন প্রকল্প: ইমার্জেন্সি রেসপন্স টু কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক” এ প্রকল্পের অধীনে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, এবং নরসিংদীর সাতটি অঞ্চলের ডিজিটাল ডাক্তার বুথ স্থাপন করেছে। যেখান থেকে কারখানাগুলোর গার্মেন্টস কর্মী ও তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিনা খরচে ভিডিও কলের মাধ্যমে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, চর্মরোগ এবং মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারবেন। এছাড়া এমবিবিএস ডাক্তারদের নিয়ে সরাসরি বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানা এবং বস্তিগুলোতে মোট ৪১টি স্বাস্থ্য ক্যাম্প স্থাপন করা হবে যেখানে পার্শবর্তী এলাকার সাধারণ জনগণও তাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে সরাসরি ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শের পাশপাশি বিনামূল্যে প্রাথমিক চেক-আপ করতে পারবে (সুগার, রক্ত-চাপ পরীক্ষা, ইত্যাদি) ।
শুধু ডাক্তারি পরামর্শ দেওয়া ছাড়াও এ প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ মানুষকে বিনামূল্যে “সুরক্ষিত” প্যাকেজে নিবন্ধনভুক্ত করা হবে। যার মাধ্যমে একজন নিবন্ধিত গ্রাহক মোবাইলে ফ্রিতে ০৮ ০০০ ১১১ ০০০ নম্বরে ২৪ ঘণ্টা কলের সুবিধা এবং ‘ডিজিটাল হসপিটাল’ অ্যাপের মাধ্যমে ডক্টর ভিডিও কল করে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারবেন। এছাড়াও তিন মাস মেয়াদি এ প্যাকেজের আওতায় একজন নিবন্ধিত গ্রাহক ও সর্বোচ্চ এক জন শিশু শারীরিক অসুস্থতার কারণে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি হলে বিলের ওপর পাবেন ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফ্রি হেলথ ক্যাশব্যাক, তার সঙ্গে আরও থাকছে ১০ হাজার টাকা সমমূল্য ফ্রি জীবনবিমা।
বাংলাদেশের সামগ্রিক রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশ উপার্জিত হয় পোশাক খাত থেকে যা প্রায় চার মিলিয়ন বাংলাদেশি লোকের কর্মসংস্থানের উৎস। গার্মেন্টস কর্মীরা প্রতিবছর ৩২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। উক্ত রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশই আবার আসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। বিশ্বজুড়ে লকডাউন থাকায় এবং আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে কোভিড-১৯ এর প্রভাবের কারণে আমদানি-রপ্তানীর উপর নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শিল্পবাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। রপ্তানি বাজারে লোকসানের কারণে কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও কর্মসংস্থানগুলো বাধ্য হয় মজুরি দিতে বন্ধ/সীমিত করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তে আসতে হয়। উপার্জনের অভাব এবং সীমিত স্বাস্থ্যসেবার ফলে ইতোমধ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত এক চতুর্থাংশ গার্মেন্টস কর্মীরা এ দুর্যোগের সময়ে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গার্মেন্টস কর্মীদের ৬০ শতাংশর বেশি নারী হওয়ায়, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অভাবে প্রসূতি নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে থাকে যার মধ্যে কম ওজনযুক্ত শিশুদের জন্ম ছিল অন্যতম।
এক্ষেত্রে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ, বিশেষ করে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে একটি বড় পার্থক্য আনা যেতে পারে যা তাদের দৈনিক কাজ করার এবং আয় করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।
ডিজিটাল হেলথকেয়ার সলিউশানসের সিসিও অ্যান্ড্রু স্মিথ বলেছেন, বাংলাদেশের রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টর অর্থনীতি ও সমাজের একটি বিশাল অঙ্গ এবং সেই সঙ্গে বৃহত্তম রপ্তানি পরিচালক এবং নারী কর্মচারীদের বৃহত্তম নিয়োগকারী।
কোভিড -১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালে বিলিয়ন ডলারের অর্ডার থেমে যাওয়ায় বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব পড়েছিলো এবং কয়েক হাজার কর্মচারীর উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। তার ওপর অসুস্থ মানুষদের মধ্যে ভাইরাসের কারণে হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে ভয়ও কাজ করছিল। তাই, গার্মেন্টস কর্মীদের এবং শহুরে বস্তিতে মা ও পরিবারগুলোকে ডিজিটাল ও সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্যে বিজিএমইএ এবং বেপজার অধীনস্থ কারখানার সঙ্গে ইউএসএআইডি এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের এ মহৎ উদ্যোগে অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত। এতে করে সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের ভবিষ্যতের জন্য এ উদ্যোগটি সহায়তা করবে বলে আশা রাখি।
ইউএসএআইডির ‘মামনি’ মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন প্রকল্পের চিফ অব পার্টি ডাক্তার উম্মে সালমা জাহান মীনা বলেছেন, মহামারির এ সময়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রতিকূলতা রয়েছে, তা মোকাবিলার জন্যই এমন পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের। মামনি প্রকল্প বাংলাদেশে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছে দীর্ঘসময় ধরে। আমাদের এ কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কোভিড -১৯ ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় মানুষজন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে যেতে দ্বিধাবোধ করছিল। এটি নারীদের, বিশেষত গর্ভবর্তী এবং নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে যারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত বা অসুস্থ হচ্ছিলেন তাদের এ বাবদ বাড়তি চিকিৎসা খরচও আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটাচ্ছিলো। এ উদ্যোগের মাধ্যমে, মাইক্রো হেলথ স্কিম এবং অনলাইন চিকিৎসকদের পরামর্শ সেবার মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্যসেবাকে সবার জন্য সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী করে তুলতে পারবো বলে আশা রাখি।
ডিজিটাল হেলথকেয়ার সলিউশানস সম্পর্কে আরও জানতে, ০৮ ০০০ ১১১ ০০০ (টোল-ফ্রি) নাম্বারে কল করুন বা ভিজিট করুন dh.health।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২১
আরআইএস