খুলনা: খুলনায় মাছের ঘেরের নিরাপত্তাকর্মী কুদ্দুস শেখ হত্যা মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-ফুলতলা উপজেলার বেগুনবাড়ি পশ্চিমপাড়া এলাকার মাহবুব মোল্ল্যা (৩০) ও তার বাবা সিদ্দিক মোল্ল্যা (৫০) ও বেগুনবাড়ি পূর্বপাড়া এলাকার আনছার মোড়লের ছেলে ইসরাইল মোড়ল (৩৫)।
সোমবার (২৯ মার্চ) দুপুরে খুলনার সিনিয়র দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। পেনালকোড ১৮৬০ এর ৩০২/৩৪ ধারায় এ রায় দেওয়া হয়।
এছাড়া পেনাল কোড ১৮৬০ এর ২০১ ধারায় প্রত্যেক আসামিকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনামুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৫ মে রাতে মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম শেখের চাচা কুদ্দুস শেখ মৎস্য ঘেরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওই রাত ২ টার দিকে ঘরের পাশ দিয়ে টর্চ লাইট মেরে ঘোরাফেরা করছিলেন স্থানীয় মাহবুব মোল্লা, ইসরাইল মোড়ল ও সিদ্দিক মোল্লা। এ সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কুদ্দুস শেখ তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলে তারা ক্ষিপ্ত হয় এবং তাকে জীবননাশের হুমকি দেয়। পরেরদিন ১৬ মে সকালে বাদীর চাচা কুদ্দুস শেখ বিষয়টি ভাতিজা রফিকুল ইসলাম ও স্ত্রী ঝর্ণা বেগমকে জানায় এবং সালিশি ডাকার উদ্যোগ নিলে আসামিরা আরও ক্ষিপ্ত হয়। এরপর ১৭ মে সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ টার দিকে মামলার আসামি ইসরাইল ও মাহবুব মোল্লা তাদের মাঠের স্যালো মেশিন নষ্ট হয়েছে এমন কথা বলে কুদ্দুস শেখকে মেরামতের অনুরোধ জানান এবং মেরামত বাবদ তাকে মজুরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কুদ্দুস শেখ সরল বিশ্বাসে ইসরাইল, মাহবুব মোল্লার সঙ্গে মেশিন মেরামতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তবে ওই রাতে তিনি আর বাড়িতে ফিরে আসেননি। পর দিন ১৮ মে সকালে বাদী রফিকুল ইসলামের মাছের ঘের থেকে অনুমান ৩০০ গজ পশ্চিমে সোহরবের মাছের ঘের থেকে কুদ্দুসের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সেখানে থাকা পাশের ঘেরের পাহারাদার আজিজ মোল্লা বাদীকে জানায়, বাদীর চাচা কুদ্দুস শেখ সেই রাতে ঘেরে আসেনি। এ ঘটনার আসামি মাহবুব মোল্লা, ইসরাইল ও সিদ্দিক মোল্লাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।
কুদ্দুস শেখকে স্যালো মেশিন মেরামতের কথা বলে ১৭ মে সন্ধ্যা ৭ টায় ডেকে নেওয়ার পর থেকে ১৮ মে সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যবর্তী সময়ে বাদীর চাচাকে হত্যা করে সোহরবের ঘেরে ফেলে রাখা হয়। এ মামলায় আব্দুল্লাহ আল মামুনকে তদন্তভার দেওয়া হয়। ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য আমলে নেন খুলনার দায়রা জজ আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সোমবার মামলার রায় দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২১
এমআরএম/ওএইচ/