ঢাকা: যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল—এই তিনটি দেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের তিনটি ধরন (ভ্যারিয়েন্ট) সবচেয়ে বেশি সংক্রামক বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ববাসীকে বেশি ভোগাচ্ছে এই তিন ধরন।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি), সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যৌথ গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার করোনা ধরনের প্রভাব বেশি পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকায় করোনা ভাইরাসের সব ধরনের তুলনায় প্রাধান্য বিস্তার করছে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি।
এতে বলা হয়, গত ১৮ থেকে ২৪ মার্চ ৫৭ জন কোভিড–১৯ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করেন গবেষকেরা। তাদের মধ্যে ৪৬ জনের শরীরে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন শনাক্ত হয়েছে, যা গবেষণায় মোট শনাক্তের ৮১ শতাংশ। সাতজনের শরীরে শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্য থেকে ছড়ানো করোনার ধরন। বাকি চারজনের শরীরে করোনার অন্য ধরনের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
এর আগের সপ্তাহে ১২ থেকে ১৭ মার্চ ৯৯ জন কোভিড–১৯ রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করে ৬৪ জনের শরীরে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন শনাক্ত হয়েছিল। ওই সময় যুক্তরাজ্যের ধরন শনাক্ত হয়েছিল ১২ জনের শরীরে। বাকিদের করোনার অন্য ধরন শনাক্ত হয়।
গবেষণা ফলে জানানো হয়, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি প্রথম দেশে যুক্তরাজ্যের করোনা ধরন শনাক্ত করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটার (জিআইএসএইড) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকেই এই ধরন ছড়িয়েছে।
আইসিডিডিআর,বির গবেষকরা জানান, মার্চের প্রথম সপ্তাহে ১৩ জেলা থেকে সংগ্রহ করা নমুনা সিকোয়েন্সিং করা হয়। এ সময়ে কোনো দক্ষিণ আফ্রিকান ধরন দেখা যায়নি। এরপর থেকেই মূলত দক্ষিণ আফ্রিকান দরনের উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে।
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি করোনার দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি দেশে প্রথম শনাক্ত হয় বলে জানায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি। তাদের গবেষকেরা জানান, ঢাকার বনানীর ৫৮ বছর বয়সী এক নারীর শরীর থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় করোনার এই ধরনের উপস্থিতি মেলে।
জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকার এই ধরন ‘এন ৫০১ ওয়াই’ নামের একটি মিউটেশন (রূপান্তর) বহন করে, যা এটিকে আরও সংক্রমণ বা ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে। এই ভাইরাসের আরেকটি মিউটেশন ‘ই৪৮৪কে’ আরও ভয়াবহ। এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ধোঁকা দিয়ে টিকার কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে করোনার এই ধরন যত ছড়িয়ে পড়বে, ততই সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।
গবেষণায় গবেষকরা বলেছেন, নতুন নতুন ধরনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, নতুন ধরন নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং সবাইকে বেশি বেশি স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে। নতুন যে ধরনই আসুক, তার বিরুদ্ধে বাঁচার উপায় একটাই— মাস্ক পরতে হবে, হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু রাখতে হবে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে, শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২১
পিএস/এএ