বরিশাল: প্রথম ঢেউ কিছুটা স্থিমিত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে রোগী শূন্য ছিলো এই অঞ্চলের একমাত্র ডেডিকেটেড করোনা চিকিৎসার শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। আর এ কারণে হয়তো গত জানুয়ারির পর থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অনেকটাই ঢিলেঢালা ভাবে চলছিলো হাসপাতালের নতুন পাঁচ তলা ভবনের গড়ে ওঠা আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডের কার্যক্রম।
তবে দুই মাসের মতো খালি থাকার পরে হঠাৎ করে গত ৭ মার্চ থেকে এ হাসপাতালের আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হতে শুরু করে। আর বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে মোট ১২৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এসব রোগীদের চিকিৎসা করাতে এসে নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রোগীদের।
ওয়ার্ডে ভর্তিরত রোগীর স্বজনরা জানান, চিকিৎসক ও নার্সের সহয়তায় চিকিৎসাসেবা পাওয়া গেলেও নানান সংকট আর সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। টয়লেট, ওয়াশরুমসহ ওয়ার্ডের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা পড়ে রয়েছে। আবার সিড়িকোঠার প্যাসেজসহ বিভিন্ন স্থানেও ময়লা-আবর্জনা পড়ে রয়েছে, ডাস্টবিনগুলোও ময়লা ভরে থাকে সবসময়। অনেক জায়গায় মোটা ধুলোর স্তর পরে রয়েছে।
তন্নী নামে এক রোগীর স্বজন জানান, টয়লেট ও হাত-মুখ ধোয়ার বেসিনের এমন অবস্থা যে সেখানে গেলে দুর্গন্ধে পেটে মোচড় দিয়ে বমি আসে। আবার লিফটবিহীন ভাঙাচোড়া ভবনটি সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়েও কষ্ট পোহাতে হয়।
করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অপর এক রোগীর স্বজন সোহাগ জানান, প্রথমবারের থেকে এখন করোনার রোগীদের সেবার কার্যক্রম অনেকটাই অনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। জরুরি বিভাগের পাশে করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় রাখা ট্রায়েজ সেন্টারটি অনেক কাজে এসেছিলো এবারে সংস্কারের কারণে সেটিও সেখানে নেই। আবার করোনা ওয়ার্ডে আইসিউইউ বেড, অক্সিজেনের সংকটের কথা শোনা গেছে, যদিও স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এসকল সমাধান হয়েও যাচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসক, নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির জনবলের সংকটের কথা শুনছি। তবে এসব সংকটের মধ্যেও রোগীর চিকিৎসা যথাযথই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ওয়ার্ডের ভেতরে থাকা ময়লা-আবর্জনার কারণে এতোটাই অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন যে রোগীরা এখানে করোনার চিকিৎসা নিতে এসে অন্য রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন।
অভিযোগ রয়েছে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে জনবল দেওয়া থাকলেও তা পরিষ্কার হচ্ছে না, কারণ করোনা ওয়ার্ডে ডিউটি দেওয়া হলেও সেখানে কাজ করতে আগ্রহী নন তারা।
তবে শেবাচিম হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে জানান, করোনা ওয়ার্ডের ময়লা আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে। এই বিষয়টি আরও জোড়দার করা হবে। আর সিড়িসহ বাকি যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এদিকে হাসপাতাল প্রশাসন বলছে, জরুরি বিভাগের পাশে করোনার লক্ষণ থাকা রোগীদের প্রথম চিকিৎসার জন্য যে সেন্টারটি চালু করা হয়েছিলো। সেটি এখনো রয়েছে, তবে ভবনের ওই স্থানে সংস্কার কাজের জন্য সেটিকে পাশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর চিকিৎসক সংকটের কারণে সেটি ইমারজেন্সির চিকিৎসক দিয়ে হলেও সেটিকে চালিয়ে রাখা হচ্ছে।
এছাড়া বর্তমানে হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের কোনো বিষয় নেই। রোগীর চাপ থাকায় সেন্ট্রাল অক্সিজেনের বাহিরে সিলিন্ডারও ব্যবহার হচ্ছে। আর সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে একটি শেষ হয়ে গেলে অন্যটি প্রস্তুত করতে যেটুকু সময় লাগছে সেটুকুকেই সংকট হিসেবে বলছেন রোগীরা। এরবাহিরে রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে আইসিইউ সেবাও প্রদান করা হচ্ছে।
তবে সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ১২টি আইসিইউ বেড দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকসহ করোনা ওয়ার্ড সংশ্লিষ্টদের। এদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যনুলা এ হাসপাতালে ২২টি থাকলেও ১০টির মতো বিকল হয়ে পড়ে আছে।
উল্লেখ্য ১৯৬৮ সালে যাত্রা শুরু করা হাসপাতালটি ২০১৩ সালে এক হাজার বেডে উন্নীত করা হয়। কাগজে কলমে ১০০০ শয্যায় উন্নিত করা হলেও ৫০০ শয্যার হাসপাতালের লোকবল দিয়ে চলছে এখনো। সেই এক হাজার শয্যার সঙ্গে ২০২০ সালে নতুন করে দেড়শ শয্যার করোনা ইউনিট চালু হলে সেই সংকট আরও বেশি বৃদ্ধি পায়। করোনা সংকট মোকাবেলায় গত বছর ৪০ জন ডাক্তার সংযুক্ত করা হলেও প্রথম ঢেউ শেষ হওয়ার আগেই অনেকেই নিজেদের পছন্দমত অন্য কর্মস্থানে যোগ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য শেবাচিম হাসপাতালটির করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে মোট তিন হাজার ৫৬২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে করোনা পজেটিভ রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৭১ জন ছিলো। আর এ দুটি ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫১০ জানের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৫০ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে আর দুই জনের রিপোর্টের ফলাফল প্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২১
এমএস/কেএআর