ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

আইসিইউ খালি নেই হাসপাতালে, বাইরে নেই সচেতনতা!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২১
আইসিইউ খালি নেই হাসপাতালে, বাইরে নেই সচেতনতা!

রাজশাহী: রাজশাহীতে হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত (কোভিড-১৯) রোগীর সংখ্যা। একইসঙ্গে বাড়ছে করোনায় মৃত্যুও।

এখন পর্যন্ত কেবল রাজশাহীতেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন রয়েছে ৮৬৬ জন। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও পাঁচজন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে একটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) বেডও খালি নেই। এছাড়া করোনার সাধারণ ওয়ার্ডেও বেডে নেই! 

এরপরও বাইরে মানুষের মধ্যে ন্যূনতম কোনো সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মাস্ক ছাড়াই সবাই বাইরে বের হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই নেই। রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার রুটে পরিবহন বন্ধ থাকলেও উপজেলা রুটে আবারও গণপরিবহন চলাচল করছে।   এছাড়া সরকারের নতুন ঘোষণার পর রাজশাহী মহানগরের বিভিন্ন মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স, বিপণিবিতান ও দোকানপাট খোলা রয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই জীবনযাত্রা পরিচালনা করছেন সবাই। রাজশাহী শহরে লকডাউন বা বিধি-নিষেধ মেনে চলার কোনো দৃশ্য সাধারণত চোখে পড়ছে না। সকাল হলেই মানুষজন কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। গাদাগাদি করে বাসে উঠছেন, বাজার যাচ্ছেন, ভিড় ঠেলে কেনাকাটা করছেন। প্রতিদিন করোনা রোগী শনাক্তের হার বাড়লেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও করোনাভীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আর প্রশাসনও যেন এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে।  

রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে আরও ৭৪ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় এ পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৯৫৪ জন প্রাণঘাতি এ রোগে আক্রান্ত হলেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় এখন পর্যন্ত মোট ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৮৬৬ জন।  

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে হাসপাতালের বেড সংখ্যা ১ হাজার ২০০টি। করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ দ্বিগুণ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে ২৫ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। চিকিৎসকরা আক্রান্ত হলে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে আর নার্সরা আক্রান্ত হলে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে। তবে করোনা ওয়ার্ড বা আইসিইউ; কোথাও বেড খালি নেই।  

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাবিবুল আহসান বাংলানিউজকে জানান, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্তের সংখ্যা বগুড়া ও রাজশাহীতে। গত মাসেও করোনা টেস্ট ও শনাক্তের সংখ্যা কম ছিল। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে রোগীর সংখ্যাও ততই বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় ৮০০ জনের মতো করোনা টেস্ট করছেন। এর মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি শনাক্তও হচ্ছে।  তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীর আট জেলায় ১৩৭ জন করোনারোগী শনাক্ত হয়েছেন। শুক্রবার নমুনা পরীক্ষায় তারা শনাক্ত হন। এদিন বিভাগের রাজশাহীতে ৭৪ জন, নওগাঁয় একজন, জয়পুরহাটে ১২ জন, বগুড়ায় আট জন, সিরাজগঞ্জে ১৯ জন এবং পাবনায় ২৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এদিন বিভাগের ৪২ জন করোনারোগী সুস্থও হয়েছেন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৪ জন, জয়পুরহাটের দুই জন, বগুড়ার ১১ জন এবং পাবনার ১৫। রাজশাহী বিভাগে করোনায় এ পর্যন্ত ৪২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।  

বিভাগে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ১৯৬ জন। এদের মধ্যে ২৫ হাজার ৯৯ জন সুস্থ হয়েছেন। বিভাগে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিন হাজার ২১৬ জন কোভিডরোগী। আর সর্বোচ্চ ২০টি আইসিইউ বেড নিয়ে চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই সব কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।  

এছাড়া সবমিলিয়ে বর্তমানে রাজশাহী বিভাগে ৫৫টি আইসিইউ বেড রয়েছে। তার মধ্যে ১০টি বেসরকারি ক্লিনিকে এবং ৪৫টি সরকারি হাসপাতালে। তবে আইসিইউ বেডের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করতে পারলেও তারা জেনারেল বেডে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছেন। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। কারণ জেনারেল বেডে অক্সিজেনের সাপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে আর কোনো রোগীকে আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। দ্রুতই এ নতুন ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২১
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।