ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

বরিশাল-ঝালকাঠির হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২১
বরিশাল-ঝালকাঠির হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বরিশাল ও ঝালকাঠির হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: গত কয়েকদিন ধরে বরিশাল ও ঝালকাঠির হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে জেলা সদর হাসপাতালগুলোসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে।

বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে যে পরিমাণে রোগী আসছে তাতে জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। ফলে ডায়রিয়া রোগীদের বারান্দাসহ ওয়ার্ডের সামনের খোলা জায়গাতে রাখতে হয়েছে।

এদিকে রোগীরা ঠিকমতো সেবা না পাওয়ার পাশাপাশি  ঠিকমতো ওষুধ ও আইভি স্যালাইন না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। সেই সঙ্গে এসব সামগ্রী বাহির থেকে কিনে আনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা।

জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স আয়শা আক্তার জানান, সরকারিভাবে যে ওষুধ এবং স্যালাইন বরাদ্দ আছে সেগুলো রোগীদের যথাসাধ্য দেওয়া হচ্ছে। আর রোগীদের চাপ থাকলেও লোকবল সংকট নিয়েই ওয়ার্ড পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আর রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় যথাযথ সেবা প্রদান কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালের আরপি ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, জেনারেল হাসপাতালে মাত্র চার শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ড। এর মধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে দুটি শয্যা এবং দুইটি শয্যা মহিলা ওয়ার্ডে। যেখানে গতকাল সোমবার ও আজ অর্ধ শতাধিক রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ফলে অতিরিক্ত রোগীর সেবা দিতে গিয়ে কিছু সংকট দেখা দিতে পারে। ফলে লোকবল এবং স্থান স্বল্পতার কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য এই হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা মাত্র চারটি। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০জন রোগী। গত মার্চে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৫১ জন ডায়রিয়া রোগী। ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৫১২জন।

এদিকে বরিশালের মতো ঝালকাঠিতে হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে অনেক মানুষ।

বিশেষ করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডে জায়গা না থাকায় রোগীদের বারান্দায় মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এখানেও বাড়তি রোগীদের সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তথ্য মতে, গত শুক্রবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ডায়ারিয়া আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ২০০ জন রোগী। এর মধ্যে  শিশু ও বয়স্করা বেশি ভর্তি হচ্ছেন। এদিকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ডজনখানেক বেড থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে তিনগুন-চারগুন রোগী থাকছে সেখানে।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মামপি দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন যে হারে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসছে, তাতে তাদের চিকিৎসা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ১২টি বেডের স্থলে রোগী ভর্তি হচ্ছেন প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন। তাই বাধ্য হয়ে বারান্দায়ও রোগীদের রাখতে হচ্ছে। আর রোগী বাড়লে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে জনবল কম থাকলেও সাধ্যমতো ডায়রিয়ার রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মো. আবুয়াল হাসান।

শুধু যে সদর হাসপাতালের এ অবস্থা বিরাজ করছে এমনটা নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও গত কয়েকদিনে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পাশিাপাশি বাহিরের খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন থাকা, অনিরাপদ পানি পান ও খাবার খাওয়ার কারণে গরমের এই সময়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এক্ষেত্রে খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২১
এমএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।