ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ময়লা আবর্জনা। বাথরুমে নেই লাইট, অন্ধকারে যাতায়াত করছে হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরা।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে হাসপাতালে পুরাতন ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
নিচ তলায় জরুরি বিভাগসহ আশেপাশে কিছুটা পরিষ্কার থাকলেও পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলা ও তৃতীয় তলা জায়গায় জায়গায় ময়লার স্তূপ দেখা যায়। এছাড়া ২১৩ ও ২১৫ এর মধ্যবর্তী স্থানে বাথরুমে নেই লাইট। গত এক সপ্তাহ ধরে সেটি অন্ধকার। অন্ধকারেই রোগী ও স্বজনরা বাথরুমে যাওয়া-আসা করছেন। বাথরুমের সামনে হাসপাতালে পরিত্যক্ত মালামালের স্তূপ, এর পাশেই আছে ময়লার স্তূপ।
দ্বিতীয় তলায় আনাচে-কানাচে ময়লার স্তূপ দেখা যায়। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে সাধারণ রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে। ওয়ার্ডে সিট খালি না থাকায় করিডোরে ময়লার স্তূপের পাশে বিছানা পেতে রোগীকে থাকতে দেখা যায়।
এদিকে, হাসপাতালের পুরাতন ভবনে বহির্বিভাগে এক্সরে বিভাগের প্রবেশমুখে পরিত্যক্ত একটি বেসিনে ময়লার স্তূপ জমে আছে। অথচ সেখান দিয়ে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগীসহ স্বজনরা আসা-যাওয়া করেন। এর পাশাপাশি হাসপাতালে লোকজন তো আছেনই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে তিন দফা দৈনিক মজুরিতে (ডেলি বেসিক) প্রায় ৫০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের কাজই হচ্ছে পুরো হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। অথচ বেসরকারি দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে এদের নিয়োগ দেওয়ার আগে হাসপাতাল এত ময়লা ছিল না।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দৈনিক মজুরিভিত্তিতে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের কেউ হাসপাতালে কর্মরত কারও আত্মীয় বা কোনো নেতার পরিচিত। এভাবে তারা নিয়োগ পেয়েছেন। অথচ নিয়োগ পাওয়ার পরে অধিকাংশ পরিচ্ছন্নতাকর্মী একেকজন সাহেব হয়ে গেছেন। অথচ তাদের নিয়োগ হয়েছে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, গত আগস্ট মাসে ৮৭ জন দৈনিক মজুরিতে নিয়োগ দিয়েছে বর্তমান পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক। এর আগে সাবেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন দুই দফা দৈনিক মজুরিতে লোক নিয়োগ দিয়েছেন। এদেরকে হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ দৈনিক মজুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অধিকাংশরাই কাজ না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন।
২১৩ ও ২১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পৃথক রোগীর স্বজন মোস্তাফিজুর রহমান ও জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ওই ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী স্থানে যে বাথরুম আছে, সেখানে গত সাত দিন ধরে বৈদ্যুতিক বাতি নেই। অন্ধকার বাথরুমে যেতে হচ্ছে তাদের।
অপর এক রোগীর স্বজন নার্গিস জানান, দ্বিতীয় তলার একটি বাথরুমের ঢুকতেই হাসপাতালের পরিত্যক্ত মালামালের স্তূপ, তার পাশেই আছে ময়লার স্তূপ। এছাড়া এগুলো অতিক্রম করে বাথরুমে প্রবেশ করলেও সেখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার। নেই কোনো বাতি।
হাসপাতালে প্রশাসনিক ব্লগের একটি সূত্র জানায়, দৈনিক মজুরিতে তিন দফায় ৫০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সবাই পরিচ্ছন্নতাকর্মী দুই-একজন ল্যাব এটেনডেন্ট। এদের সবাইকে নির্দিষ্ট ওয়ার্ড মাস্টারের আন্ডারে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে দ্বিতীয় তলার ওয়ার্ড মাস্টার কাজী সাঈদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, আমি এখনই অ্যাকশন নিচ্ছি। এতগুলো লোক নেওয়ার পরও কেন আনাচে-কানাচে ময়লা ও বাথরুমে কেন বাতি থাকবে না?
বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেস্বর ১৪, ২০২১
এজেডএস/জেএইচটি