টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ধোপার বিল ও যন্ত্রপাতি মেরামতের নামে ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গত অর্থ বছরের বিল ভাউচার তার আগের অর্থ বছরের পাঁচগুণ হওয়ায় এমন অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা যায়, সখিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২০২০-২১ অর্থ বছরে যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য সরকারি বরাদ্দের দুই শতাংশ টাকা ব্যয় করার কথা থাকলেও তিন শতাংশ টাকার (চার লাখ তিন হাজার ৩৮৬ টাকা) বিল ভাউচার করে মো. মাহমুদ সরকার নামের এক ঠিকাদারের নাম ব্যবহার করে তা উত্তোলন করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আব্দুস সোবহান। ১০৮ নম্বর ভাউচারে ১টি ইলেকট্রিক অটোক্লেড মেশিন সাড়ে আট হাজার টাকা, একটি অ্যানেসথেসিয়া মেশিন (এএমএস, কোরিয়া) এক লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা, দুটি ওটি লাইট ছোট (ডোম লাইট) সাড়ে ১১ হাজার টাকা, একটি ওটি লাইট বড় (ডোম লাইট) ১৭ হাজার টাকা, দুটি ওটি টেবিল সার্ভিসিং ২৬ হাজার টাকা, দুটি স্টেবিলাইজার ছয় হাজার ৩৮৬ টাকা, দুটি সেন্ট্রিফিউজ মেশিন (১২ হেল) ২১ হাজার টাকা, একটি ইসিজি মেশিন ১৩ হাজার টাকা, দুটি সকর মেশিন সাড়ে নয় হাজার টাকা, একটি ডায়াথার্মি মেশিন ২১ হাজার টাকা, একটি টি এক্স-রে মেশিন সাড়ে ৪৫ হাজার টাকা, একটি ডেন্টাল চেয়ার ৪৯ হাজার ২০০ টাকা, ২০টি রোগীর বেড ৪০ হাজার টাকা, একটি কলোরিমিটার সাত হাজার টাকা, একটি মাইক্রোসকোপ নয় হাজার ২০০ টাকা, একটি ল্যাব বেটেটর চার হাজার ৯০০ টাকার ভাউচার দেয়া হয়।
এছাড়া একটি অ্যানেসথেসিয়া মেশিন (এএমএস, কোরিয়া) মেরামত বাবদ এক লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকার ভাউচার দিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ সেই মেশিন নতুন কিনতে লাগে তিন লাখ ২৯ হাজার টাকা।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মকর্তা জানান, সখিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি অ্যানেসথেসিয়া মেশিন রয়েছে যার কোনোটিই অকেজো নয়। নতুন ৩০টি বেড স্টকে থাকালেও ২০টি বেড মেরামত করার নামে ভুয়া বিল ভাউচার করা হয়। এভাবে ১৬টি যন্ত্রপাতি ঠিক করার নামে বিল ভাউচার করে টাকা উঠানো হলেও অনেক যন্ত্রপাতি ঠিক করা হয়নি।
এদিকে গত বছরের সেপ্টম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অর্থ বছরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লেনেন ধৌত (ধোপার) বিল ১২১ নম্বর ভাউচার অনুযায়ী দুই লাখ ১৯ হাজার ৯৫৭ টাকা করা হলেও ২০১৯ জুলাই থেকে ২০২০ জুন অর্থ বছরের বিল ১২৫ নম্বর ভাউচার অনুযায়ী ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪ টাকাউত্তোলন করা হয়। যা ছিলো পাঁচগুণ বেশি। আর এই টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোস্তফা এন্টারপ্রাইজের নামে।
ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক গোলাম মওলা বাংলানিউজকে জানান, বিল ভাউচারের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। আর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর ভেতরে একটি ক্যান্টিন রয়েছে। প্রতি মাসে সেই ক্যান্টিন থেকে দুই হাজার টাকা ভাড়া নেন ডা. আব্দুস সোবহান। কিন্তু সেই ভাড়ার কোনো রশিদ বই বা আয় ব্যায়ের কোনো হিসেব নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আব্দুস সোবহান জানান, সব কিছুই ঠিকাদারের মাধ্যমে হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। আমার বিরুদ্ধে একটা চক্রান্ত চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১
এমএমজেড