নীলফামারী: ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের টেন্ডার কমিটির বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গত ২০ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নামকা ওয়াস্তে একটি মিটিং করে মূল্যায়ন কমিটির সদস্য গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দেলওয়ার মাহাফুজ সোহাগ ও কমিটির আহ্বায়ক জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু আল হাজ্জাজ রেডিশন ডিজিটাল টেকনোলজি লিমিটেডের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ তুলে মেসার্স ফাস্ট নর্থ বেঙ্গল সিকিউরিটি অ্যান্ড রিক্রুটিং সার্ভিসকে কাজ দেওয়ার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে গোটা জেলায় আলোচনার ঝড় উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মূল্যায়ন কমিটির এক সদস্য জানান, রেডিশনের বিরুদ্ধে ট্রেজারি চালানের কপি না থাকা, ২২-২৩ অর্থ বছরের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না থাকা ও সিডিউল পূরণ না করার অভিযোগ তোলা হয়। যা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়। রেডিশন ডিজিটাল টেকনোলজির লিমিটেডের সত্ত্বাধীকারী দেলোয়ার হোসেন ফারুক জানান, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আমি কাজ পাব। আমাকে কাজ না দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ট্রেজারি চালানের মূল কপি জমাদান সাপেক্ষে ও নিজস্ব প্যাডে আবেদন করে দরপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ বলা হচ্ছে, ট্রেজারি চালান পাওয়া যায়নি, তাহলে আমি সিডিউল পেলাম কীভাবে? এছাড়া বলা হচ্ছে, আমার ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন নেই। অথচ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে ২১-২২ অর্থবছরে। যা আমার নবায়ন আছে। দরপত্রের শর্তাবলীতে কোথাও বলা হয়নি, ২২-২৩ সালের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন দিতে হবে। এদিকে কল কারখানা অধিদপ্তরের লাইসেন্স ২২-২৩ সালের আমাদের নবায়ন করা থাকলেও, মেসার্স ফাস্ট নর্থ বেঙ্গল সিকিউরিটি অ্যান্ড রিক্রুটিং সার্ভিসের ২২-২৩ সালের কল কারখানা অধিদপ্তরের নবায়নকৃত লাইসেন্স নেই। কিন্তু এ ব্যাপারে মূল্যায়ন কমিটির কোনো মাথা ব্যথা নেই। কারণ, তারা যেভাবেই হোক, নর্থ বেঙ্গল কোম্পানিকে কাজটা পাইয়ে দিতে চায়। এছাড়া আমাদের কোম্পানির বিরুদ্ধে তাদের আরেকটি অভিযোগ হলো, সিডিউল সম্পূর্ণ পূরণ করা হয়নি। সিডিউলে অর্থের অংক উল্লেখ করা হয়নি। অথচ আউটসোর্সিং নীতিমালা অনুযায়ী, সিডিউলের ভেতরে নয় বরং সিডিউলের সঙ্গে ফিন্যান্সিয়াল পেপার সংযুক্ত করতে হবে, যা আমি করেছি। এক্ষেত্রে যদি কেউ ফিন্যান্সিয়াল পেপার যুক্ত না করে, শুধু সিডিউল পূরণ করে থাকে, তবে নিয়ম অনুযায়ী সেটি বাতিল হওয়ার কথা। যা নর্থ বেঙ্গল কোম্পানি করেছে। অথচ তাদের বাতিল না করে, আমাদের ওপরেই ভিত্তিহীন অভিযোগ করে আমাদের কোম্পানিকে বাতিল করার চেষ্টায় রয়েছে হাসপাতালের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। এখানে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। তা না হলে তারা কেন একটি কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলে আমি আদালতের আশ্রয় নেব।
অপরদিকে ফিহা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধীকারী আবু সাঈদ জানান, মেসার্স ফাস্ট নর্থ বেঙ্গল সিকিউরিটিকে গত বছরও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে কাজ দিয়েছিলেন সেই সময়কার সিভিল সার্জন রঞ্জিত কুমার রায়। বিষয়টি নিয়ে আমি আদালতে মামলা করেছিলাম। মামলার কারণে সিভিল সার্জনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। পরে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় স্ট্যান্ড রিলিজ স্থগিত করা হয়। এবারও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু আল হাজ্জাজ একই কায়দায় ওই কোম্পানিকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনজন দরপত্র দাখিল করলেও আমার জানা মতে, তারা নর্থ বেঙ্গল কোম্পানির কোনো কাগজপত্র যাচাই বাছাই না করে শুধু আমাদের দু’টি কোম্পানির কাগজপত্রের ব্যাপারে অন্যায় আপত্তি জানাচ্ছেন বার বার।
অথচ আমাদের কোনো কাগজপত্রের ঘাটতি নেই। এজন্য আমরা মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ককে দরপত্র দাখিলকৃত তিনটি কোম্পানির প্রতিনিধির উপস্থিতিতেই সব কোম্পানির কাগজপত্র বাছাইয়ের আবেদন করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। কারণ, তিনি নর্থ বেঙ্গল কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে বদ্ধ পরিকর।
যদি অন্যায়ভাবে এবারও ওই কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়, তাহলে আমি আদালতের আশ্রয় নেব।
এ বিষয়ে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু আল হাজ্জাজ বলেন, এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যাছাই বাছাই চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
এসআই