ভারত ১ ডিসেম্বর থেকে জি-২০ গ্রুপের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চ্যালেঞ্জিং সময়ে ভারতের ওপর এটা ব্যতিক্রমধর্মী দায়িত্ব।
করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন সংঘাতের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো বিরূপ প্রভাবের মুখোমুখি হয়েছে। এই দুই সমস্যা বিশ্বে খাদ্য এবং জ্বালানি আমদানির মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। জি-২০ এর সভাপতি হিসেবে ভারত তাদের (উন্নয়নশীল বিশ্বের) আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরবে এবং সমস্যার সমাধান দেবে বলে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রত্যাশা করছে।
সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা এবং অর্জনসমূহে দেখা যায়, ভারত নিজ দেশের নাগরিকদের অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধির সুবিধা প্রদান করেছে। সুতরাং বিশ্ব এখন যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, ভারত সেগুলোরও ভালো সমাধান প্রদানে নেতৃত্ব দিতে পারে। মেরুকরণ এবং প্রযুক্তিগতভাবে বিভক্ত বিশ্বকে আসন্ন বছরগুলোতে ভারত সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ এবং ন্যায়সঙ্গত স্থানে পরিণত করার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
বিশ্ব আজ যেসব জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সেগুলোর সমাধানে নতুন এবং সৃজনশীল পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আমাদের কাছে বিদ্যমান ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা সমসাময়িক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারি। ‘ডিজিটাল ভারত’ বৈশ্বিক সমাধান এবং প্রবৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত করতে প্রযুক্তিগত সমাধান সরবরাহ করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে করোনা মহামারির বিস্তার শনাক্তে ভারতের ‘আরোগ্য সেতু ডিজিটাল প্লাটফর্ম’ এর সফল ব্যবহার উল্লেখ করা যেতে পারে। এছাড়া ভারতে ২০০ কোটি সফল টিকাকরণে ‘কো-উইন ডিজিটাল প্লাটফর্ম’ এর উদাহরণও দেওয়া যেতে পারে। এগুলো অনুসরণ করে জি-২০ এর সভাপতি হিসেবে ভারত বিশ্বের দেশ এবং মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণে প্রযুক্তির ব্যবহার করবে বলে প্রত্যাশা করা যেতে পারে।
চলতি সভাপতিকালীন সময়ে ভারত ‘উন্নয়নের জন্য ডাটা (ডাটা ফর ডেভেলপমেন্ট) নীতি’ সার্বিক থিমের জন্য অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ব্যবহার করবে। একই সময়ে করোনার মতো স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় আমরা জি-২০ এর অন্য সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে সক্ষমতা শক্তিশালী করার কৌশল গ্রহণের প্রচেষ্টা নিতে পারি। জি-২০ এর সভাপতি হিসেবে ভারত ‘সর্বজনীন বৈশ্বিক স্বাস্থ্য স্থাপত্য’এর উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এটা করা হলে ভবিষ্যতে করোনার মতো মহামারি সুন্দরভাবে মোকাবিলা করা যাবে। জি-২০ তে এই মডেল অনুসরণের মাধ্যমে এটা আন্তর্জাতিকীকরণ হবে। আর ডিজিটাল ভারত অবশ্যই ‘বৈশ্বিক’ হওয়া প্রয়োজন।
জি-২০ ভুক্ত দেশগুলো বিশ্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ জিডিপি দাবিদার। এছাড়া আন্তর্জাতিক ব্যবসার ৭৫ শতাংশ এই দেশগুলোতে সম্পন্ন হয়। এই দেশগুলোতে বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ বসবাস করে। জি-২০ তে যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয় এবং কার্যকর করা হয়, বিশ্বের জাতিসমূহের কয়েক প্রজন্মের ওপর তার প্রভাব থাকে। এই কঠিন এবং পরীক্ষার সময়ে নাবিক হিসেবে জি-২০কে ভারতের এখন সর্বজনীন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পথে পরিচালনার সময় এসেছে।
লেখক: ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও জি-২০ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক
বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২২
এসআইএস