আগরতলা (ত্রিপুরা): বর্তমান সময়ের পরিবেশের কথা চিন্তা করে ভারত সরকার ন্যাচারাল ফার্মিং বা প্রাকৃতিক কৃষির ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। দেশজুড়ে এই কৃষি পদ্ধতিকে ভালো করে আয়ত্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
যাতে সবাই ন্যাচারাল ফার্মিংয়ে গুরুত্ব দেন এবং এই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন, সেজন্য বিভিন্ন রাজ্যের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দফতরসহ ভারত সরকারের কৃষি গবেষণাবিষয়ক বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এমনকি ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে এই কৃষি পদ্ধতি নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশের সঙ্গে ত্রিপুরার কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দফতর পরিচালিত রাজধানী আগরতলার অরুন্ধতীনগর এলাকার কৃষি গবেষণা কেন্দ্রেও ন্যাচারাল ফার্মিং পদ্ধতিকে অবলম্বন করে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ চলছে। এর দায়িত্বে রয়েছেন এই গবেষণা কেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর শ্রীকান্ত নাথ।
এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বাংলানিউজকে জানান, ইতোমধ্যে কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাটসহ উত্তর-পূর্বের অনেকগুলো রাজ্যে ন্যাচারাল ফার্মিং খুব ভালোভাবে হচ্ছে। ২০২২ সালের খরিপ মৌসুমে তাদের গবেষণা কেন্দ্রে এই পদ্ধতিতে আদা, হলুদ, ভুট্টা ও কালো ধান চাষ করা হয়েছে।
ভুট্টা ও কালো ধানের বীজ জুমচাষীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো পুরোপুরি স্থানীয় জাতের। কালো ধান ইতোমধ্যে মাঠ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আর কিছুদিন পর অন্যান্য ফসল মাঠ থেকে তোলা হবে। আদা ও হলুদের ফলন খুব ভালো হবে বলেও আশাবাদী তিনি।
রবি মৌসুমে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে ভুট্টা, মুগডাল ও আখ চাষ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরিষা ও মিলেটও এই মৌসুমে চাষ করা হবে। দেশীয় প্রজাতির সুগন্ধি চাল চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
গবেষণার মাধ্যমে চাষ করা হচ্ছে, তাই একেকটি ফসল চাষের জন্য ১০০ বর্গমিটারের একেকটি প্লট বেছে নেওয়া হয়েছে। ভারতবর্ষে প্রাকৃতিক কৃষিকে নতুনভাবে পরিচয় দিয়েছেন সুভাষ পালেকর নামে একজন লোক। তাকে বর্তমান সময়ের প্রাকৃতিক কৃষির জনক বলা হয়ে থাকে। তার কৃষি পদ্ধতি এখানে অনুসরণ করে চাষবাস করা হচ্ছে বলে জানান শ্রীকান্ত নাথ।
তবে ত্রিপুরা রাজ্যের পরিবেশ এবং মাটির কথা চিন্তা করে কিছু সংযুক্তি করা হচ্ছে। গোবর সার ও ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের প্লটগুলোতে।
শ্রীকান্ত নাথ বলেন, এই পদ্ধতি এখন নতুন করে প্রকাশ্যে এলেও বহু আগে থেকে ভারতে প্রচলিত। মূলত সত্তরের দশকে কৃষিতে সবুজ বিপ্লব আসার আগে এই পদ্ধতি ছিল একমাত্র এবং প্রধান চাষের অবলম্বন। এই পদ্ধতিতে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার, কীটনাশক ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহার না করে দেশীয় জাতের বীজ ব্যবহার করা হয়। পুরোনো এই পদ্ধতিকে আবার তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে ন্যাচারাল ফার্মিং বা প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতিতে।
একে আবার জিরো বাজেট ফার্মিংও বলা হয়ে থাকে। কারণ এর মূল ভাবনা হলো চাষ করার জন্য কোনো ধরনের বাইরের উপাদান ব্যবহার করা হয় না। নিজের কাছে যে সব সামগ্রী রয়েছে, সেগুলো দিয়েই চাষবাস করা হয়।
প্রাকৃতিক কৃষি মূলত চারটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। স্তম্ভ চারটি হলো জীবামৃত, বীজামৃত, ঘনজীবামৃত ও ভাপসা। যেহেতু এই পদ্ধতিতে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না, তাই এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসলের কোনো ক্ষতিকারক প্রভাব নেই।
এই পদ্ধতি যেমন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, তেমনি এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসল খাওয়ার ফলে মানুষেরও কোনো ধরনের ক্ষতি হয় না। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ন্যাচারাল ফার্মিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসলের।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২২।
এসসিএন/আরএইচ