কলকাতা: পেশায় চা-বিক্রেতা। নীলসাদা জার্সি তার জীবনে এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
তার ইচ্ছা ছিল এবারে কাতারের মাঠে বসে মেসি ম্যাজিক দেখার। সে লক্ষ্যে কয়েক বছর ধরে সঞ্চয়ও করেছিলেন। চা-বিক্রি করার পাশাপাশি পাড়ায় তৈরি করেছেন আর্জেন্টিনা ফ্যানস ক্লাব। সেই ক্লাব নানা সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত। দুস্থদের কম্বল, ফল ইত্যাদি দেওয়া হয় আর্জেন্টিনা ফ্যানস ক্লাবের উদ্যোগে।
এবার বিশ্বকাপে স্বচক্ষে মেসিকে খেলার উপভোগ করতে চেয়েছিলেন শিবশঙ্কর। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। তাই বলে কি থেমে থাকা যায়? বিশ্বকাপে না যেতে পারার আক্ষেপে নিজের খরচে বানিয়েছেন লিওনেল মেসির ফাইবারের মূর্তি। ৫০ হাজার রুপি ব্যয়ে ওই জেলার দত্তপুকুরের এক শিল্পীকে দিয়ে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির মেসির মূর্তি বানিয়েছেন শিবশঙ্কর পাত্র।
সম্প্রতি বিরাট ঘটা করে নিজের চায়েন দোকানের সামনে মেসির মূর্তি উন্মোচন করেছেন তিনি। মূর্তি উন্মোচন ঘিরে এলাকায় খুশির মেজাজ। এখনও বিশ্বকাপের লড়াইয়ে আছে আর্জেন্টিনা। আর সে আমেজে বাড়তি ভিড় শিবঙ্করের চায়ের দোকানে। সভ্য সমর্থকদের নিয়ে রাতে সেখানেই চলে বিশ্বকাপ দেখা।
শিবেশঙ্কর জানান, সম্ভবত এটাই মেসির শেষ বিশ্বকাপ। তাই এবার তাকে স্বচক্ষে দেখার আশায় ছিলাম। অনেক ইচ্ছা ছিল এবার কাতারে গিয়ে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। চা বিক্রির টাকায় শুধু ম্যাচ দেখা নয়, আসা-যাওয়া, থাকা খাওয়ার খরচ তো আছে। কুলোবে না বুঝতে পেরে, ঠিক করি, যাওয়া যখন হবে না জমানো টাকায় মেসির মূর্তি বানাব। মনে করতে পারেন, ফুটবলের ম্যাজিশিয়ানকে তার ভক্তের অর্ঘ্য।
রাতেই তার প্রিয় দলের সঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার সেমিফাইনাল। ফলে মঙ্গলবার পাড়ার সবাই একটু নার্ভাস। আজ কি হবে? শিবশঙ্করের উত্তর 'ম্যাজিশিনায়ানের ম্যাজিকই ভরসা। আমাদের পাড়ার প্রার্থনা একটাই মেসির হাতেই এবারে বিশ্বকাপ উঠুক।
তবে এবারে আর্জেন্টিনার ছন্দ অনেকটা যেন কাতারের আবহাওয়ার মতোই। কখনও গরম, কখনও ঠান্ডা। পাঁচটি ম্যাচে ধীরে ধীরে তাদের দল হিসেবে তৈরি হতে দেখা গেছে। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে অবিশ্বাস্য হারের ধাক্কা। আবার শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জয়লাভ। মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনার মহাতারকা বলতে আর কেউ নেই। মেসিকে দেখেই দলের বাকি ফুটবলারদের মধ্যে শক্তির সঞ্চার হচ্ছে। ঠিক সেরকম মাঠের বাইরে সমর্থকদের ভরসা জোগাচ্ছে ওই একজনই। ওয়ান অ্যান্ড ওনলি মেসি।
তবে আর্জেন্টিনা এবার এমন একটা দলের সামনে, যারা হারতে ভয় পায় না। আবার হারার আগে এমন লড়াই দেবে, যা নিঃসন্দেহে বিচলিত করবে প্রতিপক্ষকে। গতবারের ফাইনালে হারের পেছনে অনেকে ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের ক্লান্তির কথা তুলে ধরেছিলেন। এবার কিন্তু দুটো ম্যাচেই টাইব্রেকারে মধ্যদিয়ে গেলেও ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারদের মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায়নি। তাদের তারকা লুকা মদ্রিচ। গতবারের মতো এবারের বিশ্বকাপ মাতিয়ে রেখেছেন।
যা নিয়ে স্বয়ং লিওনেল স্কালোনি সাংবাদিক সম্মলনে বলেছেন, মদ্রিচ আমাদের অনেকের কাছেও আদর্শ। শুধু প্রতিভার জন্যে নয়, ওর ব্যবহারের জন্যেও। আমাদের সবার উচিত ওর খেলা উপভোগ করা। যদি আপনি ফুটবল ভালোবাসেন তা হলে ওর মতো ফুটবলারের খেলা বারবার দেখতে চাইবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২
ভিএস/জেএইচ