আগরতলা(ত্রিপুরা): ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় চলছে জনজাতিদের চিরাচরিত খাদ্য উৎসব। ত্রিপুরা সরকারের ট্রাইবেল রিসার্চ অ্যান্ড কালচারাল ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসব হচ্ছে রাজধানীর সুপারি বাগান এলাকায়।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের সূচনা করেন ত্রিপুরা সরকারের জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রামপদ জামাতিয়া। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর মন্ত্রী এবং উপস্থিত অন্যান্য অতিথি খাবারের স্টল গুলো ঘুরে দেখেন।
এ উৎসবের গুরুত্ব সম্পর্কে মন্ত্রী রামপদ জমাতিয়া বলেন, আগামীদিনে সবাই যাতে নিরোগ হন সে লক্ষ্যেই রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য এই উৎসবের আয়োজন। জনজাতিদের যে পরম্পরাগত খাদ্য আছে এগুলি তেল বিহীন ও মশলা ছাড়াই তৈরি হয়। এতে কিডনি, পেট ও লিভার ভাল থাকে। রোগমুক্ত ও দীর্ঘজীবী হওয়া যায় বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ফাষ্ট ফুড যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে। খেতে হবে প্রকৃতি প্রদত্ত নানা উপাদান। খেতে হবে হলুদ। এটা অ্যান্টিবায়োটিক। রাজস্থানের জনগণ রোজ রাতে একগ্লাস দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খান। এই প্রথা হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে।
তিনি বলেন, জনজাতিরা যে মাংস ঝলসিয়ে খান তা আজ ফাইভস্টার হোটেলেও প্রচলন হয়েছে। এটা পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য। মাশরুমে মাংস ও মাছ থেকেও বেশি ক্যালোরি আছে। এইরূপ উৎসব প্রতি পাড়ায় করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ছাড়াও বিধায়ক ডা. অতুল দেববর্মা, জনজাতি গবেষণা এবং সাংস্কৃতিক সংস্থার অধিকর্তা আনন্দহরি জমাতিয়া, বিশিষ্ট কবরক লেখক নরেশ চন্দ্র দেববর্মা উপস্থিত ছিলেন।
জনজাতিদের যে পরম্পরাগত খাদ্য আছে যেমন গোদক, বাঙ্গুই, মুইয়া, শামুক, মাশরুম, চাথুই, তারাই পাতা, বাঁশ করুল, কাঁচা হলুদ বাটা ইত্যাদি উপাদান দিয়ে তৈরি তেল ছাড়া খাবার দাবার রয়েছে এ উৎসবে। রাজধানী আগরতলা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এই সামগ্রী তৈরি করে এনেছেন। মোট ১১টি খাবারের স্টল রয়েছে উৎসবে।
ত্রিপুরা রাজ্যের জনজাতি অংশের মানুষের যে চিরাচরিত খাবার-দাবার রয়েছে ধীরে ধীরে এগুলোতে পরিবর্তন চলে আসছে। চিরাচরিত খাবার দাবারে ক্ষতিকারক কোন উপাদান না থাকলেও বর্তমান সময়ের ফাস্টফুডের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ফলে সেগুলো তো এখন ক্ষতিকারক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা এবং চিরাচরিত খাবার-দাবারের বিষয়ে জনজাতি অংশের বর্তমান প্রজন্মের মানুষদেরকে অবগত করার লক্ষ্যে এই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানান আগরতলার ট্রাবেল রিসার্চ অ্যান্ড কালচারাল ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর আনন্দহরি জমাতিয়া।
এ বারের এ উৎসবে খাবারের স্টল নিয়ে এসেছেন আগরতলার অভয়নগর এলাকার বাসিন্দা প্রমীলা জমাতিয়া, তিনি জানান গত প্রায় ১০ বছর ধরে বিভিন্ন মেলায় চিরাচরিত খাবার দাবারের স্টল দিচ্ছেন। এমন কি তিনি এক বার মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভূপাল ও বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনা শহরে জাতীয় স্তরের খাদ্য উৎসবে গিয়েও স্টল দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে এসব খাবার নিয়ে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর মধ্যবনমালীপুর এলাকার বাসিন্দা তুলিকা দেববর্মা বলেন, বাঙুই, মুরগি ভর্তা, চাকুই, গুদক, মাটির হাঁড়িতে বিশেষ ভাবে রান্না করা বিন্নি চালে ভাত, কাঁচা হলুদ ভর্তা, বাঁশের ভেতর রান্না করা মোরগের মাংস। আগে এসব খাবার জনজাতি অংশের মানুষের প্রতিটি ঘরে ঘরে তৈরি হলেও, এখন শহরাঞ্চলের জনজাতি অংশের মানুষ অনেকে এগুলো আর তৈরি করতে পারেন না। তাই তাদেরকে খাবারগুলো সম্পর্কে জানানোর লক্ষ্যে এই ধরনের উৎসব দারুন ভাবে সহায়তা করছে বলে জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২
এসসিএন/এসএম